আলোচনার মাধ্যমে আমিরাতের শ্রমবাজার সমস্যার সমাধান হবে

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার ফিরে পেতে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেছেন, দু’দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট এডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুবাই সফর করবেন। আলোচনার মাধ্যমেই শ্রমবাজার নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধান হবে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরকারি সফর এবং বিশ্ব ইসলামিক অর্থনৈতিক ফোরামের ১০ম বর্ষপূর্তিতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের অংশগ্রহণ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাই-এর শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুম-এর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ থেকে ২৭শে অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ দ্বিপক্ষীয় সরকারি সফরের প্রতিনিধিদলে থাকছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, শ্রম প্রতিমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ। সফরে নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা, দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের বিনিময়, ঢাকাস্থ আরব আমিরাত দূতাবাসের কাছে প্লট হস্তান্তর, বিদেশী দপ্তরের পরামর্শ এবং বিএমইটি ও আমালা গ্রুপের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে চুক্তি হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ককে নিবিড়তর করা। দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্য বৈষম্য কমানো, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামো, উচ্চতর শিক্ষা, পর্যটন, জ্বালানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভবিষ্যত সহযোগিতা বিষয়েও এ সফরে আলোচনা হবে। এ সফরকালে দু’দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানান মন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি সম্পর্কে বলা হয়, ২৫শে অক্টোবর দুপুরবেলা আবুধাবী পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৬শে অক্টোবর তিনি আবুধাবীর ক্রাউন প্রিন্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাত-এর সশস্ত্র বাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক শেখ মুহাম্মাদ বিন যায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। একই দিনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন যায়েদ আল নাহিয়ানও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতির মাতা হিসেবে বিবেচিত শেখ ফাতিমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ দিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ কমিউনিটি’র সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন। ২৭শে অক্টোবর তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাই-এর শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি আমিরাতের অন্যতম রাস-আল-খাইমাহ সফর করবেন ও সেখানকার শাসক সৌদ বিন সাকার আল কাসিমীর সঙ্গে মতবিনিময় ও মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। সফরকালে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ আলোচনায় জনশক্তি রপ্তানি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উচ্চ শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিরাপত্তাসহ সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠান, ভিসা সহজীকরণের বিষয়ও আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সমৃদ্ধ করবে। দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ, দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ়করণ এবং সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন খাতে বিশেষত এক্সপো-২০২০ উপলক্ষে আরও অধিক সংখ্যক বাংলাদেশী দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আমিরাতের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ২৭শে অক্টোবর গভীর রাতে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন।  প্রেসিডেন্টের সফরসূচি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২৮-৩০ অক্টোবর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য ১০ম বিশ্ব ইসলামিক অর্থনৈতিক ফোরামে অংশগ্রহণের জন্য প্রেসিডেন্ট এডভোকেট আবদুল হামিদ সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত-এর উপ-রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মাদ বিন রাশেদ আল মাকতুম প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে আগামী ২৮-৩০শে অক্টোবর ২০১৪ তারিখে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য ১০ম বিশ্ব ইসলামিক অর্থনৈতিক ফোরামে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে আগামী ২৭শে অক্টোবর তারিখ প্রেসিডেন্ট দুবাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং সম্মেলনে যোগদান শেষে ২৯ অক্টোবর তারিখে তিনি দেশে ফিরবেন। প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। মালয়শিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্টসহ ইসলামী অর্থনীতির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে যোগদান করবেন। বিশ্ব ইসলামিক অর্থনৈতিক ফোরামে কি-নোট স্পিকার হিসেবে যোগ দেবেন প্রেসিডেন্ট। এ সফরে প্রেসিডেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশের অংশগ্রহণকারী শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন। এই সফরের পর পররাষ্টমন্ত্রী সমুদ্র সম্পদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি সম্মেলনে অংশ নেবেন। সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড এক্সপো নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী  বলেন, জটিলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে কি এ দুটো সফর হতে পারতো? একটাও তো হতো না। ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। দুটো সফর হচ্ছে। আমরা আগের ধারাতেই ফিরে আসছি। এই দুটো সফরের মধ্য দিয়ে সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে। শ্রমবাজার বিষয়ে আলোচনা শেষ হলে আমরা বলতে পারব। নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি মন্ত্রী। থাইল্যান্ডে উদ্ধার হওয়া ১১৮ বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২৮ তারিখ কনসুলার একসেস দেয়া হবে। ৩০ সদস্যের একটি দল তাদের শনাক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে। একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, সরকারের বৈধতা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য ও প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের খবর প্রকাশ করা উচিত হয়নি। বেগম জিয়া তো এখন সংসদে নেই। উনি বিএনপির চেয়ারপারসন। উনি নীলফামারীতে বললেন, ‘এই অবৈধ সরকারকে কেউ, কোন সরকার স্বীকৃতি দেয়নি’। উনি যে কথা বলেছেন এটা বালখিল্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন। আমরা সংসদীয় পরিমণ্ডলে দুটি সংগঠন সভাপতি পদে আমরা জয় পেলাম ভোটের মাধ্যমে। এটা কি করে হয় যে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। একটা কাগজে দেখলাম বিষয়টি পাশাপাশি দেয়া হয়েছে। এটা কি পাশাপাশি দেয়ার মতো হলো? এ দুটো কি সমপর্যায়ের হলো। বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীরা আমাদের সঙ্গে দেখাও করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ফোরামের সদস্যপদ লাভ করলাম। এগুলো কিভাবে হচ্ছে। আমরা কি ধরে নেব যে বেগম জিয়া কোন খবর রাখছেন না।

No comments

Powered by Blogger.