কানাডায় জঙ্গিবাদ বৃদ্ধির নেপথ্যে

কানাডার অটোয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে সেনাসদস্য নিহত হওয়ার
পর হ্যামিলটনে অবস্থিত জন ওয়েইর ফুট ভি সি সামরিক ঘাঁটির
ফটকে পুষ্পস্তবক দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নিহত সেনা এই
ঘাঁটিতে থাকতেন বলে মনে করা হচ্ছে। ছবি: এএফপি
পর পর দুটি সন্ত্রাসী ঘটনায় যুগপৎ আতঙ্কিত ও বিস্মিত কানাডার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে অভিযোগ করা হচ্ছে, হামলাকারী সন্ত্রাসীরা ইরাক ও সিরিয়ায় সক্রিয় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদর্শে উদ্বুদ্ধ। তবে এ ব্যাপারে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। আইএসও এ নিয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। কানাডার রাজধানী অটোয়ায় পার্লামেন্ট ভবন ও আশপাশে গত বুধবার হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। এ হামলার ঘটনায় একজন সেনাসদস্য ও একজন বন্দুকধারী নিহত হয়েছেন। এর আগে গত সোমবারই দেশটির ফরাসিভাষী কুইবেক প্রদেশে দুই সেনাসদস্যকে গাড়িচাপা দেয় এক সন্দেহভাজন জঙ্গি। পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। গাড়িচাপায় এক সেনাসদস্য নিহত ও অন্যজন সামান্য আহত হন। কানাডার অনেকেরই মনে এখন প্রশ্ন, এটা কি আইএসের প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে চালানো একটি বিচ্ছিন্ন হামলা? নাকি সন্ত্রাসবাদ সত্যিই বড় হুমকি হয়ে উঠছে কানাডার জন্য? দেশটির সন্ত্রাসবাদবিষয়ক বিশ্লেষক টম কুইগিন সেখানে সন্ত্রাসবাদ তথা জঙ্গিবাদ কীভাবে বড় সমস্যা হয়ে উঠছে, তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কুইগিনের মতে, মোটের ওপর সংখ্যায় কম হলেও কানাডায় কিছু জঙ্গি আছে, যারা চরমপস্থী মতাদর্শ প্রচার করে বেড়াচ্ছে। তারা এমন একটি রাজনৈতিক আবহ সৃষ্টি করেছে, যেখানে দেশ ও বিদেশ উভয় স্থানে সহিংসতা চালানো গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।
আগে মিসরীয় বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক আহমেদ সাইদ খাদরের মতো কট্টরপন্থীরা বলতেন, বিদেশে গিয়ে সহিংস জিহাদ করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে দেশে (কানাডায়) তেমন কিছু করা যাবে না। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) গত সপ্তাহে জানায়, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে সন্দেহে ৯০ জনের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। গত সোমবার সেনাসদস্যদের গাড়িচাপা দেওয়া মাখতা কুতুর ঘুলো নজরদারির আওতায় থাকা ওই ৯০ জন ব্যক্তির একজন। তিনি সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তুরস্কে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় গত জুলাই মাসে তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। অটোয়ায় বুধবারের নিহত হামলাকারীকেও ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণকারী’ বিবেচনা করে তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছিল। কানাডাও অনেক দেশের মতোই চরমপন্থী ব্যক্তিদের এত দিন নির্বিঘ্নে দেশে ঢুকতে দিয়েছে। আশির দশকে জঙ্গিবাদী ব্যক্তিরা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অনুসারী দল ও দাতব্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগান দেওয়ার অপরাধে গত কয়েক বছরে এ ধরনের অন্তত চারটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হলো, কানাডা কীভাবে জঙ্গিবাদী আদর্শের বিস্তার ঠেকাবে? প্রথমেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা সংগঠনগুলোর দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা বাতিল করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য সরকার এ কাজটি ইতিমধ্যে করেছে। তার পরও অন্তত ২০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তাই সরকারের উচিত সহিংস ও অহিংস—সব চরমপন্থীর বিষয়েই জাতীয় পর্যায়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।

No comments

Powered by Blogger.