সৌদি আরবে বিদেশীদের বেতন নিয়ে হতাশা

সৌদি আরবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিদেশী শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা- তারা সময়মতো বেতন-ভাতা পান না। এতে নিদারুণ দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। এর কারণ, প্রতি মাসের এই বেতন দিয়েই শোধ করতে হয় তাদের নানা রকম বিল, বাসা ভাড়া, স্কুলপড়ুয়া বাচ্চার ফি, কিনতে হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। কিন্তু সময়মতো তারা বেতন-ভাতা না পেয়ে কঠিন সংগ্রাম করছেন রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে। গতকাল এ খবর দিয়েছে সৌদি গেজেট। উল্লেখ্য, সৌদি আরবে বিদেশী শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশী, ভারতীয়, পাকিস্তানি, মিশর সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। ফলে এর প্রভাব থেকে বাংলাদেশীরা মুক্ত নন। যার যার দেশে এসব শ্রমিকের বেশির ভাগেরই রয়েছে পরিবার। সেখানে রয়েছে পিতামাতা, স্ত্রী-সন্তান। তারা সৌদি আরবে নিয়োজিত স্বজনের দিকে তাকিয়ে থাকেন- তিনি কখন টাকা পাঠাবেন। কখন ঋণের টাকা শোধ করবেন। কখন স্কুলের বেতন দেবেন। কখন দোকানের বাকি পরিশোধ করবেন। কখন সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরবে। কিন্তু নিয়মমতো বেতন না পাওয়ায় সৌদি আরবে নিয়োজিত স্বজনও থাকেন উদ্বেগে। তিনি তার কষ্টের কথা কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন না। তিনি জানেন দেশে তার দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। মারাত্মক এক মনোকষ্টে ভুগতে থাকেন দু’দিকে দু’পক্ষ। বিদেশে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা বা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তবে বেশির ভাগ সময়ই তারা সময়মতো বাসা ভাড়া দিতে পারেন না। এর ফলে বাসার মালিক তাদেরকে বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন। জেদ্দায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইটি সহকারী হিসেবে কর্মরত এক ভারতীয় নাগরিক। তিনি বললেন, কোন কারণ ছাড়াই কমপক্ষে ১০ দিন বিলম্ব করে কোম্পানি পরিশোধ করে শ্রমিকদের বেতন। কখনও তা ১৫ দিনে গিয়ে ঠেকে। তিনি বললেন, প্রতি মাসে সময়মতো বেতন না পেয়ে প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাকে। এতে ভীষণ কষ্ট করতে হয়। বাসা ভাড়া দিতে দেরি হওয়াতে একবার বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। বাসা ভাড়া পরিশোধের জন্য প্রতি মাসের বেতন থেকে সামান্য অংশ জমা করি। ওই হুমকি দেয়ার পর সেই টাকা দিয়ে ভাড়া পরিশোধ করি।

বারবার আমার কোম্পানিকে সময়মতো বেতন দেয়ার অনুরোধ করেছি। কারণ, দেশে আমার পরিবার আছে। তাদেরকে টাকা পাঠাতে হবে। কিন্তু আমার অনুনয় জলে গেছে। প্রতি মাসেই স্ত্রীকে অনুরোধ করি আর ক’টা দিন অপেক্ষা কর। এখনও আমার বেতন হয়নি। তিনি বলেছেন, অনেক সময় তিনি অন্য একটি চাকরিতে যোগ দেবেন। কিন্তু আকামা পরিবর্তনের বিষয়টিকে তারা জটিল করে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে। অশান্ত সিরিয়ার নাগরিক নগি মুহাম্মদ। তিনি বলেন, সৌদি আরবে যাওয়ার পর থেকে তিনি সময়মতো কখনও বেতন পাননি। তার ভাষায়- সৌদি আরবে পৌঁছার পর কোন কন্টাক্ট ছাড়াই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। কোন মাসেই ঠিক সময়মতো বেতন পাই না। আমার অন্য কোথাও কাজের কোন কন্টাক্ট নেই। একথা জেনে তারা হয়তো আমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। আমি যে কঠিন সময় পার করছি সে বিষয়ে কোম্পানি মোটেও কর্ণপাত করছে না। এমনও হয়েছে যে, দু’মাস পরে বেতন পেয়েছি আমি। ফলে বাধ্য হয়ে পরিচিতজনদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে চলতে হয়েছে। খরচ যোগাতে বাধ্য হয়ে একটি পার্ট-টাইম কাজ খুঁজে নিতে হয়েছে। উপরন্তু, দেশে রয়েছেন পিতামাতা, আমার ভাই ও তার স্ত্রী। তাদের সবার খরচ আমাকেই যোগাতে হচ্ছে। মিশরীয় প্রকৌশলী সা’দ আহমেদ। তিনি চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। একটি গাড়ি নিয়েছিলেন তিনি কিস্তিতে। কিন্তু বেতন না পেয়ে সেই গাড়ি ফেরত দিতে হয়েছে। অনেক সময় দু’মাস পর্যন্ত বেতন বিলম্বিত হয় তার। তার ভাষায়- নিয়ম অনুযায়ী যদি দু’মাস কিস্তি দিতে না পারি তাহলে কোম্পানি গাড়ি ফেরত নিয়ে নেবে। প্রতি মাসে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে আমার কোম্পানি একটা না একটা অজুহাত দাঁড় করায়। ফলে অনেক সময় বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ ধার করি। না হয় বাবার কাছ থেকে টাকা নিই। এখন আমি আরেকটি কাজ খুঁজছি। আমি দেশে একটি বাড়ি ও একটি গাড়ি কিনেছি। তার কিস্তি দিতে হবে। এখন আতঙ্কে আছি বিলম্বে কিস্তি দেয়ার কারণে যদি সেগুলো হাতছাড়া হয়ে যায়!

No comments

Powered by Blogger.