শহীদ মিনারে নূরুল কবির

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবির। ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের স্মরণসভায় অংশ নিয়ে তিনি বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। টকশো আলোচক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে নেয়াকে কেন্দ্র করে ভূঁইফোড় কয়েকটি সংগঠন তিন বিশিষ্ট সাংবাদিকসহ ৯ বিশিষ্ট নাগরিককে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে এর তীব্র সমালোচনা হয়। গতকাল সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে তিন সাংবাদিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এ ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই নূরুল কবির শহীদ মিনারে অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন। স্মরণসভায় বক্তারা আবদুল মতিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, তার সামনে অনেক পথ খোলা ছিল। তিনি আইনজীবী হতে পারতেন, জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হতে পারতেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে আমলা হতে পারতেন। এ সবকিছু বাদ দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের স্বার্থে সারাজীবন ত্যাগ করে গেছেন। যদি এদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস ও যথার্থ ইতিহাস লিখতে হয়, তাহলে সেখানে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন থাকবেন। তিনি ইতিহাসের মধ্যে ছিলেন এবং ইতিহাসকে বদল করতে চেয়েছিলেন। সভার শুরুতে ভাষা মতিনের বিদেহী আত্মার শান্তি ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্মরণসভার আহ্বায়ক ভাষা সৈনিক আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন কমিটির সদস্য সচিব কামাল লোহানী, আবদুল মতিনের সহধর্মিণী গুল বদুন্নেছা মনিকা, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক আকমল হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ডা. শহিদুল্লাহ চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবির, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর, ইউসিএলবির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ। সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে এখন অল্প কিছু মানুষ আছে যাদেরকে যোদ্ধা বলতে পারি। বেশির ভাগ মানুষই এখন ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছে। ধনীরা, প্রতিষ্ঠিতরা এবং সাধারণ মানুষরা ভিক্ষুক। যারা এই ব্যবস্থাকে মেনে নেয় এবং তা থেকে সুযোগ নিতে চায়, তারা ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্র একটি ভিখারি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের যারা কর্তা তারা বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের সাহায্য চায়, অনুগ্রহ চায়, সার্টিফিকেট চায়। এখানে আবদুল মতিন ছিলেন সমাজ পরিবর্তনের যোদ্ধা এবং সে তার পরিচিত এই সমাজ এবং রাষ্ট্র ওইভাবে উজ্জ্বল করে তুলে ধরেননি। তিনি বলেন, রাষ্ট্র আবদুল মতিনকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। এটা আমরা বলি, এটা খুব স্বাভাবিক। রাষ্ট্র আবদুল মতিনকে হয় উপেক্ষা করবে, নয়তো তাকে নিপীড়ন করবে। অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ভাষা সৈনিক আদুল মতিন যে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করেছিলেন সেই বাংলা ভাষা এখন প্রান্তিক ভাষায় পরিণত হয়েছে। বাংলা ভাষাকে যথার্থ মর্যাদা আমরা দিতে পারিনি। গুল বদুন্নেছা মনিকা বলেন, নতুন প্রজন্ম যেন আবদুল মতিনের জীবনে থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে সেটিই আমার বড় চাওয়া। সাধারণ মানুষ তার প্রতি যে শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন তাতে আমি মুগ্ধ।

No comments

Powered by Blogger.