সমুদ্রপথে মানবপাচার- দায় নিতে হবে সরকারকে

বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে মানবপাচার এখন বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে। দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক তরুণ কম খরচে বেআইনিভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে সমুদ্রপথে রওনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত কিছু দালাল অত্যধিক ঝুঁকির এ রুটে তরুণদের প্রলুব্ধ করছে। ভালো কর্মসংস্থানের আশায় তারা জমি আর ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দালালদের হাতে সর্বস্ব তুলে দিচ্ছে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আশ্রয় হচ্ছে থাইল্যান্ডের সমুদ্র উপকূলে, সেখানে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আবারো নির্যাতন করা হচ্ছে। নয়া দিগন্তের এক খবরে বলা হয়েছে, কক্সবাজার এলাকায় দুই শতাধিক তরুণ সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পর থেকে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে এরা থাইল্যান্ড উপকূলে কোনো চক্রের হাতে আটক হয়ে আছে। এদের অনেকে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। মানবপাচারকারীদের মুক্তিপণ আদায়ে নির্যাতনের শিকার হয়েও অনেকে মারা গেছে। কক্সবাজারে উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা থাইল্যান্ড সফরকালে মানবপাচারকারীদের হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের দেখে এসেছেন। তিনি যে ছবি তুলেছেন তা এক কথায় ভয়াবহ। এর আগে থাইল্যান্ডে আমরা বাংলাদেশী দাসশ্রমিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হতে দেখেছি।
নয়া দিগন্তের রিপোর্টে কক্সবাজার থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নিখোঁজ রয়েছেন, এমন একাধিক পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি নির্যাতন বা অবৈধপথে যাওয়ার পর কারাগারে আটক ব্যক্তিদের তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল মানবপাচারকারী চক্রের জন্য নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনিতেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন চালানোর কারণে এদের অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমার ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। এদের সাথে বাংলাদেশীরা যোগ দিচ্ছে।
বাংলাদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এ দেশের নাগরিকেরা যাতে মানবপাচারকারী চক্রের হাতে না পড়ে, সেজন্য উপকূল নিরাপদ রাখা জরুরি; কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কিভাবে শত শত তরুণ উপকূল অতিক্রম করল, তা একটি বিরাট প্রশ্ন। এ কথাও সত্য যে, শুধু নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পার হচ্ছে, তারা বিদেশে ভালো কাজের আশায় এই ঝুঁকি নিয়েছে। দেশের তরুণদের যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা হয়, এই ঝুঁকি থেকেই যাবে। আমরা মনে করি, মানুষ যাতে আর ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে বিদেশ যেতে না পারে সেজন্য উপকূলে নিরাপত্তা আরো বাড়ানো দরকার। একই সাথে বেকার তরুণ যুবকদের কর্মসংস্থানের দিকে সরকারের মনোযোগী হতে হবে। মানুষের যদি কর্মসংস্থান না থাকে তাহলে ‘কসমেটিক উন্নয়ন’ দেশের কোনো কাজে আসবে না।

No comments

Powered by Blogger.