বৈধতা না থাকায় এ সরকারকে কেউ গুরুত্বের সাথে নেয় না -টাইমস অব ইন্ডিয়াকে খালেদা জিয়া

ভারতের বর্তমান নরেন্দ্র মোদির সরকারের আমলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে তিনি এও মনে করেন যে, শেখ হাসিনা সরকারের বৈধতা না থাকায় তার পে ভারতের সাথে দ্বিপীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে সমঝোতা করা সম্ভব নয়। কারণ এই সরকারকে কেউ গুরুত্বের সাথে নেয় না। বেগম খালেদা জিয়ার ভাষায়, বিএনপির সাথে জামায়াতের জোট নিছক নির্বাচনী সমঝোতা। অন্য দিকে আওয়ামী লীগের সাথে ‘জামায়াত ও অন্যান্য উগ্র ধর্মীয় দলের ঘনিষ্ঠতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে’ বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক জয়দীপ মজুমদারকে দেয়া এক সাাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ঢাকায় তার দফতরে এই সাাৎকার দেন। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিভিন্ন ইস্যু উঠে আসে। খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধ। এ সরকার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থকে সামনে এগিয়ে নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদির সরকারের কাছে নিজের প্রত্যাশার ব্যাপারে সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলেন, পরিবর্তনের আশায় ভারতের মানুষ নরেন্দ্র মোদিকে বিপুলভাবে জয়যুক্ত করেছে। ভারতের নতুন সরকার তার প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি নীতি গ্রহণ করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। আমাদের অনিষ্পন্ন দ্বিপীয় ইস্যুগুলো সমাধানে তার দেয়া নিশ্চয়তার ব্যাপারে আমাদের আশাবাদ রয়েছে। সার্ক শক্তিশালী করার ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জোর দেয়ার বিষয়টি একটি ভালো সূচনা। সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ব্যাপারে মোদি সরকারের নীতি কংগ্রেস সরকারের চেয়ে ভিন্ন হবে বলে কি আপনি মনে করেন?
উত্তর : বাংলাদেশের সাথে সমপর্কোন্নয়নের ব্যাপারে ভারতের নতুন সরকার কিভাবে অগ্রসর হবে তা পরিষ্কার হতে আমাদের অপো করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে এনডিএ সরকারের নীতি বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাবে। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত এলাকায় নিরীহ মানুষ হত্যা, স্থল সীমান্ত ইস্যু ও ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার মতো অনিষপন্ন দ্বিপীয় ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে উভয়পরে জন্য লাভজনক হয় এমন কোনো সমাধানের জন্য দিল্লি আন্তরিকভাবে কাজ করবে বলে আমরা আশা রাখি।
প্রশ্ন : আপনি কিংবা আপনার দলের সিনিয়র নেতারা কি মোদির সাথে সাাতে আগ্রহী? সে সাাৎ থেকে আপনাদের প্রত্যাশা কি হবে?
উত্তর : আমরা সবসময় বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে আগ্রহী। বিএনপি বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের মানুষ আমাদের ওপর তাদের আস্থা রেখেছে, আমাদের কয়েকবার মতায় এনেছে। তাই এটা যৌক্তিক যে, আমাদের দলের সাথে বিজেপি ও ভারতের অন্যান্য দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ হওয়া দুই দেশের দ্বিপীয় সম্পর্ক উন্নত করার স্বার্থেই একটি রীতিতে পরিণত হওয়া উচিত। এ ধরনের যোগাযোগের ফলে তা আমাদের উভয় পকে জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিষ্পত্তিতে সম করবে।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন যে বিজেপির সাথে বিএনপির সম্পর্কোন্নয়নে জামায়াতের সাথে আপনার জোট অন্তরায় হবে?
উত্তর : জামায়াতের সাথে আমাদের জোট হচ্ছে শুধু নির্বাচনী বোঝাপড়া। এটা কোনো অবস্থাতেই আদর্শগত নয়। বরং এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের সাথেই জামায়াত ও অন্যান্য উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমরা আমাদের প্রতিবেশী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্য বন্ধুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় আমাদের জনগণের কল্যাণে যা কিছু দরকার সেটাই আমরা করব। বিজেপির সাথে আমাদের সম্পর্ক সেই আলোকেই জোরদার হবে।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন যে, শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশ থেকে ভারতবিরোধী জঙ্গি গ্রুপগুলোর মূলোৎপাটন করতে যথেষ্ট পদপে নিয়েছে?
উত্তর : শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে বেশ কিছু নিরাপত্তাসংক্রান্ত চুক্তিতে প্রবেশ করেছে বলে প্রকাশ। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এখনো ওই সব চুক্তির ব্যাপ্তি এবং তার বিস্তারিত কিছু জানে না। কারণ ওই সব চুক্তির কোনোটিই এ পর্যন্ত জনসমে প্রকাশ করা হয়নি। এটা কতদূর সফলতা লাভ করেছে সে বিষয়েও আমরা অবগত নই। বিএনপি কখনো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ অথবা কট্টরপন্থী কোনো কর্মকাণ্ড  সহ্য করবে না। ভারতের স্বার্থের পে অনিষ্টকর এমন কোনো কাজ কখনো আমরা আমাদের ভূখণ্ডে হতে না দেয়ার ব্যাপারে আমাদের সংকল্প অটুট রয়েছে।
প্রশ্ন : তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি কি নিষ্পত্তির দিকে যাচ্ছে ?
উত্তর : এই সময়ে, এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সমাধানের কোনো ইঙ্গিত নেই। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থকে সামনে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে  বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন। গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা তো দূরের কথা, কেউ তাদের গুরুত্বের সাথে নেন না।
প্রশ্ন : ভারতের সাথে আর কি কি ইস্যুর সমাধান হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ও সীমান্তে নিরপরাধ বাংলাদেশীদের হত্যার মতো বিষয়গুলোর সমাধান আমাদের অনুকূলে হতে ন্যায্য অগ্রাধিকার পেতে হবে। বাংলা-ভারত সম্পর্কের শেকড় ইতিহাসে এবং ভূগোল তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা নির্দেশক। পারস্পরিক সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্র
দ্ধাশীল, পারস্পরিক সুবিধা ও পারস্পরিক স্বার্থের নীতির ভিত্তিতে সামনে অগ্রসর হওয়ার প্রয়াস চালাতে হবে।
প্রশ্ন : ভারতে একটি সাধারণ ধারণা আছে যে, আওয়ামী লীগ হলো ভারতের প্রতি বন্ধুসুলভ। অন্য দিকে বিএনপি তা নয়...
উত্তর : বিএনপি ভারতের বন্ধু নয়Ñ এমন একটি ধারণা সৃষ্টির জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা আছে। অথচ এটা সত্য থেকে অনেক দূরে। বিএনপির পররাষ্ট্রনীতির প্রধান সফলতা হলোÑ সব দেশের সাথে বন্ধুতপূর্ণ ও পারস্পরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সম হয়েছি আমরা। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক  পারস্পরিক সুবিধা ও মর্যাদার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বছরের পর বছর ভারতের পর্যায়ক্রমিক সরকারের নেতাদের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমরা কিভাবে সব েেত্র আমাদের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে পারি সে বার্তা তাদের কাছে আমি পৌঁছে দিতে পেরেছি।

No comments

Powered by Blogger.