কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় পদ্মা সেতুর অর্থ ফেরত by আবু কাওসার

কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থ ফেরত গেছে। চলতি অর্থবছরে বাজেটে এ প্রকল্পের অনুকূলে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, যথাসময়ে তার খুব কমই খরচ হয়েছে। তাই অব্যয়িত টাকা সরকারি কোষাগারে প্রত্যর্পণ করেছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু বিভাগ। তবে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে। গতকাল বঙ্গভবনে শপথ নেওয়ার পর সচিবালয়ে তার দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত সপ্তাহে সেতু ভবনে সাংবাদিকদের কাছে একই বক্তব্য রেখেছেন। এদিকে, পদ্মা সেতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ 'মূল সেতু'র জন্য আন্তর্জাতিক তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো চীনভিত্তিক কোম্পানি মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং, কোরিয়ান স্যামসুং সি অ্যান্ড টি করপোরেশন ও ফ্রান্সের ডেলিম-ব্যাম। মূল সেতুর কাজ পেতে অবশ্য চারটি কোম্পানি প্রাক-যোগ্য বিবেচিত হয়েছিল। জানা গেছে, ভিনচি-এইচ সিসি নামে একটি কোম্পানি এ কাজ পেতে আগ্রহ দেখায়নি। পর পর পাঁচ দফা সময় বাড়ানোর পর গত বৃহস্পতিবার ছিল পদ্মা প্রকল্পের মূল সেতুর দরপত্র জমার শেষ দিন। সেতু বিভাগ সূত্র বলেছে, আগামী এক মাসের মধ্যে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হবে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যোগ্য যে কোনো একটিকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। কার্যাদেশ দেওয়ার পরই পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু করা যাবে। জানা গেছে, এদিকে নদী শাসনের জন্য দরপত্র জমার সময় আরও এক মাস বাড়িয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংককে 'না' করে দেওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বিগত মহাজোট সরকার। এর পর চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পের অনুুকূলে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিদেশি সাহায্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আলোচ্য বরাদ্দের মধ্যে মাত্র ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এই সময়ে বরাদ্দের মাত্র ৩ শতাংশ খরচ হয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয় উৎস থেকে বরাদ্দের কিছু টাকা খরচ হলেও বিদেশি সহায়তার একটি টাকাও ব্যয় হয়নি। বিদেশি সহায়তা বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ফলে বিদেশি সহায়তার পুরোটাই ফেরত দেওয়া হয়েছে। সেতু বিভাগ বলেছে, মূল সেতুর অবকাঠামো খাতে কোনো কাজ না হওয়ায় পদ্মা প্রকল্পের বরাদ্দের বেশির ভাগ টাকাই খরচ করা যায়নি।
সেতু বিভাগের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গত জুনে বাজেট ঘোষণার সময় সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু করা। সেই বিবেচনা মাথায় রেখে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এ প্রকল্পে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় পদ্মা প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ পিছিয়ে পড়ে। চলতি বছরের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ খরচ হবে মূল সেতু এবং নদী শাসন কাজের পেছনে। ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা প্রকল্পের অন্যতম অংশ মাওয়া অ্যাপ্রোচ সড়ক উদ্বোধন করা হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এর আগে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জাজিরা অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের উদ্বোধন করা হয় গত বছরের জুনে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সার্ভিস এরিয়া (অবকাঠামো) নির্মাণে ব্যয় হবে ২০৮ কোটি টাকা। এসব কাজের দেখভাল করতে পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

No comments

Powered by Blogger.