চবিতে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে নিহত ১

(৩০ জন আহত আটক ১৮) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তার নাম মামুন হোসেন। তিনি শাহ আমানত হলের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেছে ছাত্রশিবির। গতকাল রোববার চবির আমানত হলে এ সংঘর্ষের ঘটনায় আরও ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাহাত ও রকি নামের দু'জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ দু'জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ভাংচুর করা হয়েছে আমানত হলের অন্তত ৫০টি কক্ষ। পরে আমানত হলে অভিযান চালিয়ে শিবিরের ১৮ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। মামুন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জহিরুল ইসলাম। চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. রাখালচন্দ্র বড়ূয়া বলেন, 'রাহাত ও রকি নামের দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের বাঁচাতে প্রচুর রক্ত দরকার।'
ছাত্রশিবির চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, হল দখল করতে ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। হামলায় আমানত হলের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন নিহত হন। এদিকে ছাত্রলীগ চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, শিবিরের হামলায় ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী সংঘর্ষের জন্য উভয় পক্ষকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, সিলেটে ছাত্রলীগের এক নেতাকে কোপানোর জের ধরে গতকাল ক্যাম্পাসে মিছিল করে ছাত্রলীগ। এর পর মিছিলটি শাহ আমানত হলে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন সমকালকে বলেন, শনিবার রাত থেকেই ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। রোববার দুপুরে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় সন্ধ্যার পর মামুন হোসেন নামের একজন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানান তিনি।
শনিবার রাতে সিলেটে চবি ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক জালাল আহমেদের ওপর হামলা হয়। এর জন্য শিবিরকে দায়ী করছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে ছাত্রলীগ শিবির নিয়ন্ত্রিত শাহ আমানত হলে যায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হলে আসার তথ্য আগাম পেয়ে প্রস্তুতি নেয় ছাত্রশিবির। ছাত্রলীগ হলে গেলে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি করে; ছুড়তে থাকে ইটপাটকেলও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি করে পুলিশ। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে কেউ গুলিবিদ্ধ, আবার কারও শরীরে জখমের দাগ দেখা গেছে। গুরুতর আহত ছাত্রলীগ কর্মী এনামুল হক সাধারণ ইতিহাস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। রাহাত নামের পদার্থবিদ্যার আরেক শিক্ষার্থীর অবস্থাও সংকটজনক। সে শিবিরকর্মী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ছাড়া পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মুজাহিদ, আইন বিভাগের শরীফ, মামুন হোসেন ও রকি নামের আরও চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহত মামুন সয়েল সায়েন্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে। এদিকে, ১৮ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে আটকের সংখ্যা স্বীকার করা হয়নি। আটককৃতদের নাম-ঠিকানাও জানাতে পারেননি হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন।

No comments

Powered by Blogger.