রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব স্বাস্থ্যসেবায়ও by রাজবংশী রায়

দেশের স্বাস্থ্যসেবায়ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে। গত দেড় মাস সরকার ও বিরোধী জোটের পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস পরিস্থিতির কারণে রাস্তায় বের হওয়াই কষ্টসাধ্য। তাই অসুস্থ হলেও পার্শ্ববর্তী হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় মফস্বলের রোগীরা ঢাকায় আসতে পারছেন না। পাশাপাশি রাজধানী ও আশপাশের এলাকার মানুষও ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এ কারণে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে স্বাভাবিক অবস্থায় এবং হরতাল-অবরোধের সময় রোগী ভর্তির সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। রোগী ভর্তির সংখ্যা কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হরতাল-অবরোধসহ সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করেনি। ফলে ঢাকার বাইরের রোগীরা আসতে না পারায় ভর্তির সংখ্যা কমে গেছে।
গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছিলেন ২৯৪ জন আর জরুরি বিভাগে টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৯৪০টি। এর এক মাস পর ১৭ নভেম্বর ২৭৯ জন রোগী ভর্তি এবং জরুরি বিভাগে টিকিট বিক্রি হয় ৮৮০টি। ডিসেম্বরজুড়ে চলে হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সহিংসতা। শুক্রবার ও বিজয় দিবস ছাড়া পুরো মাসই বন্ধ থাকে দূরপাল্লার বাস। এতে ঢাকা মেডিকেলে রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। ৩০ ডিসেম্বর ভর্তি হন ১৯২ রোগী আর টিকিট বিক্রি হয় ৪৯০টি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ৩ জানুয়ারি রোগী ভর্তি হন ২১২ জন আর টিকিট বিক্রি হয় ৫৯০টি। হরতাল-অবরোধ চলাকালীন একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হন ২৯৪ জন। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এ হাসপাতালে গড়ে সাড়ে তিনশ' থেকে চারশ' রোগী ভর্তি হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে অন্তত ৫০ জন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সবার বাড়ি রাজধানী ও এর আশপাশে। মেডিসিন বিভাগে ভর্তি মর্জিনা আক্তার বলেন, তার বাড়ি মানিকগঞ্জে। অসুস্থ থাকার পরও হরতাল-অবরোধের কারণে চিকিৎসা নিতে ঢাকায় আসতে পারেননি। পরে ডিসেম্বরের শেষ শুক্রবার এসেছেন।
মিটফোর্ড হাসপাতালেও একই চিত্র। গত ৮ অক্টোবর এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছিলেন ২৯৫ জন আর জরুরি বিভাগে টিকিট কেটেছিলেন ৭৫০ জন। কিন্তু এক মাস পর ৮ ডিসেম্বর রোগী ভর্তি নেমে দাঁড়ায় ১২০ জনে, জরুরি বিভাগে টিকিট কাটেন ২৫০ জন। পুরো ডিসেম্বরে রোগীর সংখ্যা কমেছে। ডিসেম্বরের কোনো দিনই রোগী ভর্তি ২০০ অতিক্রম করেনি। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে এ হাসপাতালে আড়াইশ' থেকে তিনশ' রোগী ভর্তি হন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ আবদুুল বাতেন সমকালকে জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ঢাকা মেডিকেলে সাড়ে তিনশ' থেকে চারশ' রোগী ভর্তি হন। হরতাল-অবরোধে দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় ঢাকার বাইরের রোগীরা আসতে পারেননি। এ কারণে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দুইশ' থেকে আড়াইশ' রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, কিডনি হাসপাতাল, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতালসহ সরকারি কয়েকটি হাসপাতালের চিত্রও একই। প্রতিটি হাসপাতালেই হরতাল-অবরোধে রোগী ভর্তি কমে গেছে। কর্তাব্যক্তিরা সমকালকে বলেছেন, ঢাকার বাইরের রোগীর সংখ্যা একেবারেই কম। মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান সমকালকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ২৫০-৩০০ রোগী মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এখন রোগীর সংখ্যা কমে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.