যেমন কর্ম তেমন মন্ত্রণালয়

নতুন বছর নতুন সরকার। চারদিকে নতুনের জয়জয়কার। সমালোচকরা অবশ্য নতুন সরকার মানতে নারাজ। তাদের মতে, ইহা নতুন বোতলে পুরনো মাল। সে যাই হোক, আমরা রাজনীতির মধ্যে জড়াতে চাই না। আমরা চাই সরকারকে উপদেশ দিতে। তাও আবার বিনামূল্যে। বিনামূল্যে উপদেশ বলে নাক সিটকাবেন না। জানেন তো, গোবরেও পদ্মফুল ফোটে। নতুন সরকার মানে অর্ধশত নতুন মন্ত্রী। বিজ্ঞাপনের ভাষায় একটি দুর্ঘটনা যেমন সারা জীবনের কান্না, তেমনি একটি ভুল সিদ্ধান্ত মানে আম আদমির (শব্দটা ইদানীং খুব খাচ্ছে) পাঁচ বছরের বিলাপ। সুতরাং মন্ত্রিত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো রকম ভুল সিদ্ধান্ত কাম্য নয়। সঠিক লোকটিকে সঠিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। তা না হলে সরকারের সাফল্য ফসকে যেতে পারে। ইমন চৌধুরী দলের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিবাজ কোনো নেতা থাকলে তাকে দিতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কারণ কীভাবে টাকা কামাতে হয় বা বানাতে হয়, এ ধরনের নেতারা সবচেয়ে ভালো বোঝেন। সুতরাং এ ধরনের কেউ অর্থমন্ত্রী হলে দেশে কখনও টাকার অভাব হবে না।
আন্দোলনে পিকেটারদের প্রায়ই ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্স করতে দেখা যায়। রাজপথে এমন ক্রেজি পারফরম্যান্স যাদের ঝুলিতে আছে, সেসব দলীয় পিকেটারদের মধ্য থেকে বাছাই করে কাউকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। আশা করি, জ্বালাও-পোড়াও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে জ্বালিয়ে দিতে, দুঃখিত এগিয়ে নিতে পারবেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রথমেই কোনো স্বাস্থ্যবান নেতা নির্বাচন করা উচিত। তালপাতার সেপাই টাইপের কাউকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলে দেখা যাবে, তিনি নিজের স্বাস্থ্য নিয়েই চিন্তায় আছেন সবসময়। ফলে পাবলিকের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার সময়ই পাবেন না। এমন কাউকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে হবে, যার অন্তত নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। অবশ্য বাংলাদেশের নেতারা স্বাস্থ্যবানই হন।
কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হয়। সুতরাং দলের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী কেউ থাকলে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। কারণ সন্ত্রাসী কারা এবং তাদের অবস্থান কোথায়, তিনি ছাড়া আর কারও পক্ষে সেটা ভালো জানার কথা নয়। সুতরাং সন্ত্রাসীদের নাড়ি-নক্ষত্র খুঁজে বের করতে হলে সন্ত্রাসী নেতাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলুন।
মন বসে না পড়ার টেবিলে। এটি একটি বাংলা সিনেমার নাম। ছবিতে হিরোইনের অবস্থা বোঝাতে এমন নামকরণ বলে জানা যায়। শুধু বাংলা সিনেমার হিরোইনই নয়, অনেক নেতারও কাজে মন বসে না। মন উড়ূ উড়ূ করে। এ ধরনের কাউকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে উড়ে উড়ে বেড়াবেন তিনি। এতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগটাও রক্ষা হবে।
দলের দখলবাজ নেতাটিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। কারণ তার পক্ষেই ভূমির দখল ধরে রাখা সম্ভব। একই সঙ্গে বাড়তি দখলের মাধ্যমে সরকারের ভূমির পরিমাণও বাড়াতে সক্ষম হবেন, এ ধরনের কেউ মন্ত্রী হলে। মোট কথা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের জন্য ভূমিদস্যুই পারফেক্ট!
সাংসদদের টেলিফোন বিল মারিংয়ের একটা ঐতিহ্য আছে আমাদের দেশে। লাখ লাখ টাকা বিল না দিয়ে অনেক সময় দিব্যি পার পেয়ে যান তারা। শীর্ষস্থানীয় কোনো টেলিফোন বিলখেলাপিকে দেওয়া যেতে পারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। যিনি এমন দক্ষতার সঙ্গে টেলিফোন বিল মারিং করতে পারেন, তার পক্ষে দক্ষতার সঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় চালানো কোনো ব্যাপারই নয়। কারণ এ মন্ত্রণালয়ের ফাঁকফোকর তার চেয়ে ভালো আর কেউ জানেন বলে আমরা মনে করি না।
রাজনীতির সঙ্গে ডিগবাজির একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে। অন্যদিকে ডিগবাজি খেলাধুলারই একটি অংশ। বলাবাহুল্য, ডিগবাজিতে পারদর্শী কোনো নেতাকে দেওয়া যেতে পারে খেলাধুলা তথা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
রাজনীতিতে তৈলমর্দন চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কারও কারও মতে, তৈলবাজরা তৈল প্রদানের মাধ্যমে সব মহলে ভালো যোগাযোগ রেখে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারেন। মোদ্দাকথা আপনি যত তৈলমর্দন করতে পারবেন, আপনার যোগাযোগ তত বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কোনো তৈলবাজ নেতারই প্রাপ্য। কারণ তৈল প্রদানের মাধ্যমে তিনি সব দিকেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে পারবেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
সরকারি অর্থে আন্ডা-বাচ্চাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের বাতিক আছে কিছু কিছু নেতার। ইবনে বতুতার মতো ভ্রমণ বাতিক আছে, এ ধরনের কোনো নেতাকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। ভ্রমণও হলো, পর্যটন এলাকাগুলোর দেখাশোনাও হলো।
(বি.দ্র. ইহা একটি প্রয়োগ অযোগ্য টিপস)

No comments

Powered by Blogger.