শঙ্কায় ভারতের কূটনীতিকেরা

ভারতের কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লির মধ্যে যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের কূটনীতিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ওই কূটনীতিকদের আশঙ্কা, গৃহকর্মী ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারে। এই পরিস্থিতি এড়াতে গৃহকর্মীদের মর্যাদা পরিবর্তনের বিষয়টিও বিবেচনা করছে ভারত সরকার। ভারত অভিযোগ করেছে, গৃহকর্মী সঙ্গীতা রিচার্ডসের ভিসার আবেদনে পারিশ্রমিক সম্পর্কে ‘মিথ্যা’ তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দেবযানীকে গ্রেপ্তার করে চরম হেনস্তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনৈতিক দায়মুক্তির আওতায় গত শুক্রবার ভারতে ফেরেন দেবযানী। যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালনরত ভারতের কূটনীতিকদের আশঙ্কার কারণ, তাঁদের অনেকের গৃহকর্মী দেবযানীর গৃহকর্মীর গ্রেডের ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। এ জাতীয় ভিসার আওতায় কেউ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকলে তিনি মার্কিন আইনের আওতায় পড়েন। তাই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারতীয় অন্য কূটনীতিকদের গৃহকর্মীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কূটনীতিকদের আশঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনীতিকদের গৃহকর্মীদের মর্যাদা পরিবর্তনের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। এ জন্য পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। জানা যায়, কূটনীতিকদের গৃহকর্মীকে ‘ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী’ মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে ওই কর্মীরা মার্কিন আইনের আওতা নয়, ভারতের আইনের আওতায় থাকবেন।
এতে করে গৃহকর্মী ইস্যুতে কূটনীতিকদের আশঙ্কারও অবসান হবে। গৃহকর্মীদের মর্যাদা পরিবর্তনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি প্রয়োজন বলেই ওই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব। সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের কূটনীতিকেরা যত দ্রুত সম্ভব গৃহকর্মীদের মর্যাদা পরিবর্তনের বিষয়টির সুরাহা চাচ্ছেন। কয়েক দিনের মধ্যে বিষয়টির সুরাহা না হলে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা গৃহকর্মীদের ভারতে ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারেন। গত ১২ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার করা হয় দেবযানীকে। প্রায় এক মাস পর গত শুক্রবার দেশে ফিরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। দেবযানীকে গ্রেপ্তার করায় ভারতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। ভারত সরকারও দেবযানীর পক্ষে বেশ শক্ত অবস্থান নেয়। দেবযানী জামিনে মুক্তি পেলে সরকার তাঁকে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনে জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরে কূটনৈতিক দায়মুক্তি পান তিনি। তবে মার্কিন বিচার বিভাগ অভিযুক্ত করে দেবযানীকে। দেবযানী ভারতে ফেরার দিনই নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত দেবযানীর সমমর্যাদার মার্কিন একজন কূটনীতিককে প্রত্যাহার করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানায় ভারত সরকার। এ ইস্যুতে দুই পক্ষের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের কূটনীতিকদের শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এনডিটিভি।

No comments

Powered by Blogger.