ঘুরে দাঁড়াতে চায় হতাশ আ.লীগ

পাঁচ সিটি করপোরেশনে পরাজিত আওয়ামী লীগ হতাশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। এ জন্য বিতর্কিত বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে দলকে নির্বাচনমুখী করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল জানায়, নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে আর কোনো বিতর্কে জড়াতে চান না দলীয় নেতারা। এ ছাড়া সরকারের মেয়াদকালেই দু-একজন যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকতে চান তাঁরা।
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের চিন্তাভাবনায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। শুধু উন্নয়ন করলেই যে নির্বাচনে জয়লাভ করা যায় না; এর পাশাপাশি মানুষ সুশাসন চায়, দলীয় নেতারা তা বুঝতে পারছেন। তাঁরা মনে করছেন, সরকার ও দলের মধ্যে কোথাও সমস্যা আছে। মেয়াদের বাকি সময়ে সরকার ভুল শুধরিয়ে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার দিকে মনোযোগী হবে।
কিন্তু সরকারের হাতে সময় মাত্র সাড়ে তিন মাস। এত অল্প সময়ে সব সমস্যার সমাধান করে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে দলের নেতারাও সন্দিহান।
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে পদ্মা সেতু, হল-মার্ক ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বাড়াবাড়ি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান ইত্যাদি ঘটনা সরকারের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তবে পদ্মা সেতু নিয়ে অতিকথন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিপরীতমুখী বক্তব্যে সরকার নিজেই একে জাতীয় বিষয়ে পরিণত করেছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তাও দলকে অনেকাংশে পিছিয়ে দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সাংগঠনিক দুর্বলতার চেয়েও সরকারের জন্য বড় সমস্যা কতগুলো রাজনৈতিক বিষয়। নির্বাচনের আগে এ বিষয়গুলোর রাজনৈতিক সমাধান না হলে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় জানায়, দলকে নির্বাচনমুখী করতে আওয়ামী লীগের ইশতেহার তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইশতেহারে নতুন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকতে পারে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কতগুলো কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিগুলো সামাল দিতে চায় সরকার।
দলীয় নেতারা জানান, ঈদের পর আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করার চেষ্টা থাকবে। জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর ও বর্ধিত সভা করার পরিকল্পনা আছে। এসব সফরে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা যোগ দেবেন। মন্ত্রী-সাংসদদের সঙ্গে কর্মীদের এবং দলের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব কমানোর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলকে নির্বাচনমুখী করতে সম্ভাবনাময় আসনগুলোয় প্রার্থী চিহ্নিত করার কাজ চলছে। উপযুক্ত প্রার্থীদের ঈদের পরপরই নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। একইভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী যাতে না থাকে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমান সাংসদদের মধ্যে যাঁদের বদনাম আছে, তাঁদের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করেন, বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করলেও শেষ পর্যন্ত তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেবে। বিশেষ করে পাঁচ সিটি করপোরেশনে জয়ের পর বিএনপির নেতাদের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে একটা ইতিবাচক ধারণা লক্ষ করা যাচ্ছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, এ সরকারের সময় কতগুলো কেলেঙ্কারি ঘটনার তদন্ত চলছে। দায়ী ব্যক্তিদের সাজার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসের বিষয়টি অনেক বড়। আমরা এ বিষয়টি ঢাকতে পারছি না। এ বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করা হবে।’
সর্বশেষ সংবাদ শুনতে আপনার মোবাইল ফোন থেকে ডায়াল করুন ২২২১

No comments

Powered by Blogger.