ঘর-মন-জানালা মাঝে মাঝে তুই

প্রিয় তন্ময়,
কত দিন পর তোকে লিখছি বল তো? এক বছর? হবে হয়তো।
জানি না। কথা তো তোর সঙ্গে রোজই হয়। তাও লিখতে বসলাম। আজ কিন্তু ক্লাসের কথা, বন্ধুদের কথা, অফিসের কথা, সেই সুন্দর টিচারের কথা, ভাববাজ ছেলের কথার কোনোটাই বলব না। আজ পুরোনো কথা হবে। মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় তোর ওপর। আমি এত কিছু বলি, তুই চুপ করে শুনিস। কেন? তোর কিছু বলার নেই বুঝি? ডাক্তার হয়েছিস বলে কি তোর আরেকটা মাথা গজিয়েছে? নাকি তুইও সেই লম্বুটার মতো ভাব মারতে শুরু করলি? একটা কিছু তো বল। প্লিজ তন্ময়।
জানিস, তুই আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার পর আমার ভীষণ কষ্ট হতে শুরু করে। ভালোবাসার মানুষ চলে গেলে বুকের ভেতর কেমন করে, সেটা আমি আগে বই-পুস্তকে পড়েছি। বুঝতে পারিনি। কেমন কেমন করাকে ভেবেছিলাম নতুন প্রেমে পড়লে বা বদহজম হলে যেমন বুক জ্বালা করে বা অস্থির লাগে সে রকমই হবে। তোকে সাদা চাদরের নিচে শুয়ে থাকতে দেখে বুঝলাম ব্যাপারটা একদম তা না। এতটা কষ্ট হয় যে নিঃশ্বাস নিলেও মনে হয় কোথাও পাথর চাপা পড়েছি। সবাই ভাবতে শুরু করল এবার আমিও মরে যাব। মরার কথাই ছিল বোধ হয়। তবে তুই কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবি না। আমি তো আর তোকে কথা দিইনি যে তুই মরে গেলে আমিও তোর পিছু নেব। পৃথিবীতে ভালোবাসার সম্পর্ক কয়টা বল তো? মাথা চুলকাস কেন? জানিস না? আমিও কিন্তু জানি না। আমি যেমন অভিমানী বাবাকে, মিষ্টি গন্ধের মাকে ভালোবাসি, তেমন ভার্সিটির কানের সামনে ‘টেকা দেন, আপা টেকা দেন ভাত খামু’ বলে ঘ্যানঘ্যান করা বাচ্চাদেরও ভালোবাসি। আমি কিন্তু তোকেও ভালোবাসি। হয়তো বাসতাম বললে ঠিক শোনাত। পারছি না। কথাটা প্রতিবার মুখের কাছে এসে জড়িয়ে যায়। তোর মনে আছে, একসময় সবাই বলত, আমরা প্রেমে পড়ে যাব! কী হাসাহাসিই না করতাম শুনে!! বাবা যদি সারা জীবন বাবাই থাকে, তো বন্ধুকে প্রেমিক হতে হবে কেন? সবার সঙ্গে প্রেম করলে বন্ধু পাব কোথায়?
আচ্ছা, তুই এত হারামি হয়ে গেলি কেমন করে বল তো? একবার সামনে এলে কী হয়? তোর রূপ কমে যাবে? দোস্ত জানিস, সেদিন একটা ছেলে হাত ধরে আমায় রাস্তা পার করেছে। বলতে লজ্জা লাগছিল বলে তাকে জানাতে পারিনি। কিন্তু ঠিক এ জন্য আমি তার ১০০টা অপরাধ মাফ করে দেব। দেখিস, তুই আবার প্রেম ভেবে নিস না। তাকে বলেও দিস না কিন্তু। তুই কী বলবি? তুই বদলে গেছিস। তোকে এত করে বললাম আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে আসতে। এলি না কেন? আমার সঙ্গে ব্যস্ত ভাব দেখাস? আমার জন্মদিনে আমি সারা দিন তোর অপেক্ষা করেছি। তুই এলি না।
তন্ময়, তোর সামনে চিঠি নিয়ে এত ভ্যাজরভ্যাজর করছি কেন জানিস? একটা প্রশ্ন করব বলে। করি? জন্মদিনে কী চাস আমার কাছে? আমার সবটুকু আয়ু? দিয়ে দেব। ফিরে আয়। তোর মনে আছে, আগে জন্মদিনের উপহার কেনার টাকা থাকত না? সস্তা কিছু উপহার দিতাম। অথচ সেটার আত্মিক মূল্য ছিল কোটি টাকা।
এখন আমার হাতে টাকা আছে রে। বল তোর কী চাই? আচ্ছা আর কিচ্ছু বলতে হবে না। শুধু এটা বল, আমি ‘শুভ জন্মদিন তন্ময়’ কথাটা কোথায় গিয়ে বলব? কার কাছে লিখে পাঠাব? কেমন করে জানাব তোকে তোর জন্মদিনটা আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
লিনা দিলরুবা শারমিন
পরিসংখ্যান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.