সুস্থ হয়ে শিগগিরই ফিরছেন তারেক রহমান : ফখরুল-রায় নিয়ে কথা নয়

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুস্থ হয়ে শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, 'লন্ডনে চিকিৎসাধীন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।
তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা জেনেছি। তাঁর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে তিনি শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন।'
যুক্তরাজ্য থেকে পৌঁছার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার সকালে শাহজালাল বিমানবন্দরে লন্ডন সফর নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন। তারেক শিগগিরই রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নির্ভর করছে তারেকের চিকিৎসকদের পরামর্শের ওপর।
ফখরুলের লন্ডন সফরের সময় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ড এবং দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় হয়। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, 'রায় নিয়ে কোনো কথা বলব না।'
'বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সুশাসন' শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে সম্প্রতি লন্ডনে গিয়ে তারেকের সঙ্গে দেখা করেন ফখরুল। ওই বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলের অবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে ফখরুল বলেন, 'দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। রাজনীতির খবর জানতে চেয়েছেন, তা জানানো হয়েছে।'
ওই বৈঠকে আগামী নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েও আলোচনা হয়েছে- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, 'এটি সঠিক সংবাদ নয়। আমাদের গণমাধ্যম মাঝেমধ্যে মনের মাধুরী দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। আমি কোনো কাগজ নিয়ে তাঁর কাছে যাইনি।' তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসবেন কি না, জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সফর সফল হয়েছে। আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচনের ভবিষ্যৎ, সংখ্যালঘু পরিস্থিতি প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে কেমন নির্বাচন হবে, তা নির্ধারণ করবে জনগণ। ব্রিটেন গণতন্ত্রের সূতিকাগার এবং তারা আমাদের একটি উন্নয়ন সহযোগী দেশ। বিশ্ব জনমতের কাছে আমাদের দেশের রাজনীতি ও বর্তমান অবস্থা আমরা তুলে ধরেছি। ওই সেমিনারে আমরা নির্দলীয় সরকারের প্রাসঙ্গিকতা উপস্থাপন করেছি।' সরকার বাস্তবতা উপলব্ধি করে সঠিক সময়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ফখরুল।
এদিকে জাতীয় সংসদে পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের এলডি ভবন প্রাঙ্গণে গতকাল বিকেলে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর ইফতার পার্টি ও চিকিৎসক সমাবেশে মির্জা ফখরুল সরকার হটানোর আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার জগদ্দল পাথরের মতো ক্ষমতায় বসে আছে। তারা দেশের গণতন্ত্র ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, 'এ থেকে মুক্তির জন্য এখন প্রয়োজন আমাদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্দলীয় সরকারের যে আন্দোলন চলছে, তাকে সফল করতে হলে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।'
নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন নয় : চিকিৎসক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকারের অধীনে সব নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে। তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই যত কলাকৌশল করা হোক না কেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া এ দেশে নির্বাচন হবে না।
সারাদেশ থেকে দেড় সহস্রাধিক চিকিৎসক এই ইফতারে অংশ নেন। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মাজেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপি সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, মোস্তাক করিম স্বপন ও আবদুস সালাম প্রমুখ।
ইফতারে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক জিন্নাতুন নেসা তাহমিনা খাতুন, অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. আবদুল মান্নান মিয়া, ডা. সালাহউদ্দিন মোল্লা প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.