পবিত্র কোরআনের আলো-পৃথিবীর ইতিহাসে সব নবী-রাসুল পুরুষ ছিলেন

১০৯. ওয়ামা--- আরসালনা- মিন কাবলিকা ইল্লা- রিজা-লান নূ-হী--- ইলাইহিম মিন আহলিল কুরা, আফালাম য়াসীরূ ফিল আরদি ফায়ানযুরূ কাইফা কা-না 'আ-কিবাতুল্লাযী-না মিন কাবলিহিম, ওয়ালাদা-রুল আ-খিরাতি খাইরুল লিল্লাযী-নাত্তাকাও, আফালা- তা'কিলূনা।
সুরা ইউসুফ।
অনুবাদ : ১০৯. তোমার আগে আমি যতজনকে রাসুল করে পাঠিয়েছি, তারা বিভিন্ন জনপদে বসবাসকারী সবাই পুরুষ ছিল;* আমি তাদের কাছে ওহি পাঠাতাম। তারা কি দেশ-দুনিয়ায় ভ্রমণ করে না, যাতে করে পূর্ববর্তীদের পরিণতি কী হয়েছিল, তা দেখে নিতে পারে? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য আখিরাতের ঠিকানাই সবচেয়ে উত্তম। তবু কি তোমরা বুঝবে না?
তাফসির : * আল্লাহ তায়ালা কেবল পুরুষগণকেই নবী-রাসুল হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। কোনো নারীকে নবী-রাসুল হিসেবে মনোনীত করা হয়নি। বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরাম এ অভিমতকেই সমর্থন করেছেন। সুতরাং কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের যুক্তি দিয়ে কিছুসংখ্যক নারীকে নবী হিসেবে দাবি করলেও তা সঠিক নয়। শরিয়তের ধারক-বাহক হয়ে পৃথিবীতে কোনো নারীর আবির্ভাব হয়নি। কারো কারো মতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্ত্রী সারাহ, মুসা (আ.)-এর মা এবং ঈসা (আ.)-এর মা মারয়াম বিনতে ইমরান নবুওয়তপ্রাপ্ত ছিলেন। প্রমাণ হিসেবে তাঁরা বলেন, হজরত সারাহকে ফেরেশতাগণ সুসংবাদ দিয়েছিলেন, ইসহাক (আ.)-এর পর তাঁর গর্ভে ইয়াকুব (আ.) জন্মগ্রহণ করবেন। হজরত মুসা (আ.)-এর মায়ের কাছেও ওহি নাজিল হয়েছিল। 'আমি মুসার মায়ের নিকট ওহি পাঠিয়েছিলাম, তুমি তাকে দুধ পান করাও'। কোরআন শরিফে স্পষ্ট করে 'ওহি' শব্দটিও এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। হজরত মারয়াম (আ.)-এর কাছে ফেরেশতা এসে হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মগ্রহণ করার সুসংবাদ দিয়েছিলেন। কোরআন শরিফে তা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, 'যখন ফেরেশতাগণ বললেন, হে মারয়াম, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে মনোনীত করেছেন। পবিত্র করেছেন। বিশ্বের সকল নারীর ওপর আপনার মর্যাদা নিশ্চিত করেছেন। হে মারয়াম, আপনি আপনার রবের ইবাদত করুন। তাঁকে সিজদা করুন। যাঁরা রুকু করেন, তাঁদের সঙ্গে আপনিও রুকুতে অংশ নিন।' নারীগণ নবী-রাসুল হওয়ার বিষয়ে এসব আয়াত ও ঘটনাকে যাঁরা প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন, তাঁদের জবাব হলো, উল্লিখিত ঘটনাগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় না, কোনো নারী নবী-রাসুল ছিলেন। কারণ দু-একবার বা দু-চার-দশ বাক্যের ওহি দ্বারা নবুওয়তের ধারক-বাহক হওয়া বোঝা যায় না। তবে নবী বলে যদি নারীসমাজের মধ্যে তাঁদের মর্যাদা বোঝানো হয়, তাহলে তা হতে পারে। এতে কোনো আপত্তি বা সংশয় নেই। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিশ্বাস হলো, কোনো নারী নবী-রাসুল হতে পারেন না। আল্লামা আবুল হাসান আশআরি (রহ.) তা-ই বলেছেন। তিনি বলেন, নারীরা নবী-রাসুল হতে না পারলেও সিদ্দিকা হতে পারেন। কোরআন শরিফে বলা হয়েছে- 'ঈসা (আ.) কেবল আল্লাহর রাসুল ছিলেন। তাঁর আগেও অসংখ্য রাসুল অতীত হয়েছেন। তাঁর মা সিদ্দিকা ছিলেন। তাঁরা উভয়ে পানাহার করতেন।' আলোচ্য আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় হজরত মারয়াম (আ.)-কে সর্বোচ্চ যে সম্মান ও মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে, তা হলো সিদ্দিকা। তিনি নবী বা রাসুল হয়ে থাকলে অবশ্যই তা উল্লেখ করা হতো।
তাফসিরে ইবনে কাছির অবলম্বনে হাসানুল কাদির

No comments

Powered by Blogger.