দূরদেশ- গাজার ‘সাময়িক যুদ্ধবিরতি’ by আলী রীয়াজ

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। অর্থাৎ, এক সপ্তাহ ধরে গাজায় নিরপরাধ মানুষের ওপর ইসরায়েলের যে অব্যাহত বোমা হামলা চলছিল, তা সাময়িকভাবে হলেও বন্ধ হবে। অন্যদিকে, গাজা থেকে হামাসের ছোড়া রকেট হামলা থেকে ইসরায়েলিরা নিষ্কৃতি পাবে।
সেটাও যে সাময়িক, তা-ও নিশ্চিত করে বলা যায়। ইতিমধ্যে গাজায় যে দেড় শর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, তার মধ্যে আছে কমপক্ষে ৩৭ জন শিশু। আহত ব্যক্তির সংখ্যা হাজারের বেশি। ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা পাঁচ।
পরিবার-পরিজন হারানো, ধ্বংসস্তূপের ওপর বসে থাকা ফিলিস্তিনিরা এখন আবার নতুন করে ‘স্বাভাবিক’ জীবনের জন্য চেষ্টা করবে। কিন্তু তাদের বুকের ভেতরের ক্ষত যে সারবে না, তা যে কেউই বলতে পারে। তাদের অনেকেই হয়তো ভবিষ্যতে এই হামলার প্রত্যুত্তর দেওয়ার জন্য মনে মনে প্রস্তুতি নেবে। সহিংসতার এক বৃত্তচক্রে আরেকটা উদাহরণ যুক্ত হলো, নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক জনমত ও আইনের ব্যাপারে ইসরায়েলের যে কোনো তোয়াক্কা নেই, সেটা আরেক দফ প্রমাণিত হলো। এই যুদ্ধে হামাসের প্রতীকী বিজয় হয়েছে, এটা অনস্বীকার্য; কিন্তু ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার পথে আরেক কদম অগ্রসর হওয়া গেল কি?
যত দিন না পর্যন্ত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, যত দিন না পর্যন্ত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন পারস্পরিকভাবে দুই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকার করে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে একমত হচ্ছে, তত দিন ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত এড়ানো দুরূহ। কিন্তু এই লড়াইয়ের পটভূমি কী, সেটা এখন বোধ হয় খতিয়ে দেখা দরকার।
গাজায় এই সহিংসতার পেছনে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যে একটা বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে, তা আমরা এখন সবাই জানি। (এ বিষয়ে দেখুন আমার নিবন্ধ: গাজায় হামলার পেছনে নির্বাচনী রাজনীতি? প্রথম আলো, ১৮ নভেম্বর ২০১২) একই সঙ্গে এই সংঘাতের পেছনে গাজার অভ্যন্তরের ঘটনাপ্রবাহ আংশিকভাবে হলেও কাজ করেছে। কয়েক মাস ধরেই গাজার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থী সংগঠন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এদের মধ্যে আছে ইসলামিক জিহাদ বলে পরিচিত একটি সংগঠন। তাদের সঙ্গে হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও সম্প্রতি তারা একত্রে কাজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি উগ্রপন্থী সংগঠন জইস-এ-উম্মার কার্যক্রম নিয়ে হামাস অত্যন্ত বিপদগ্রস্ত অবস্থার মধ্যে আছে অনেক দিন ধরে। তাদের অবস্থান যে কেবল হামাসের চেয়ে বেশি মাত্রায় ইসরায়েলবিরোধী তা-ই নয়, তারা হামাসের জন্যও হুমকি হয়ে উঠছে। কেননা, তাদের কারও কারও—যেমন, জইস-এ-উম্মার—সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার যোগাযোগের কিছু লক্ষণ স্পষ্ট।
হামাসের জন্য এসব যোগাযোগ ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয় দুটি কারণে। প্রথমত, গাজায় হামাসের শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হলে প্রয়োজন নিরঙ্কুশ আধিপত্য। যেকোনো শাসকের জন্যই তা জরুরি। হামাস তার ব্যতিক্রম নয়। দ্বিতীয়ত, এতে করে হামাসের এত দিনের যে আদর্শিক অবস্থান, সাংগঠনিকভাবে তারা ফিলিস্তিন অধিকারের জন্য লড়ছে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্য নয় বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নয়; ইসরায়েল ছাড়া তাদের আর কোনো শত্রু নেই বলে যে দাবি তারা করে, তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। হামাসের নেতারা চান না তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহূত হোক।
হামাসের জন্য এ রকম চ্যালেঞ্জ নতুন নয়। ২০০৯ সালে এ রকম একটি সালাফিপন্থী সংগঠন জুন্দ-আনসার-আল্লাহ একইভাবে তাদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। আবেদল লতিফ মুসার নেতৃত্বাধীন এই দলকে হামাস শক্ত হাতে মোকাবিলা করে। সামরিক অভিযান চালিয়ে, নেতাদের আটক করে, ক্ষেত্রবিশেষে আইনবহির্ভূত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেই সংগঠনকে হামাস নিঃশেষ করে দেয়। অনেকের হয়তো মনে থাকবে যে ২০০৯ সালে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি আমিরাত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় এই দলের সদস্যরা। একপর্যায়ে রাফা শহরের একটা মসজিদে এই গোষ্ঠীর ১০০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা আশ্রয় নেয় এবং হামাসের বাহিনীর সঙ্গে তাদের গোলাগুলিতে ২৮ জন মারা যায়; অধিকাংশই হলো ওই দলের সদস্য। এই দলের বেঁচে যাওয়া কেউ কেউ এখন আবার জইস-এ-উম্মার আকারে মাথচাড়া দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে এদের অধিকাংশই নতুন করে সংগঠিত হয়েছে বলে সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর।
এসব গোষ্ঠীর উত্থান হামাসের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। কেননা, তাদের কোনো কোনো অংশ ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে শোনা যায়। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, তারা বাইরে থেকে অস্ত্র, বিশেষত রকেট এনে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাচ্ছিল। এসব ঘটনা হামাসের নেতারা তাঁদের অস্তিত্বের জন্য খুব ইতিবাচক মনে করেননি। তাঁরা নিজেদের সংগঠন গড়ে ওঠার ইতিহাস মোটেই ভুলে যাননি। একসময় পিএলওর নেতৃত্বকে দুর্বল করতে হামাসের প্রতি বিদেশি, এমনকি ইসরায়েলের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। তাদের প্রতিষ্ঠা ও উত্থানের এই ইতিহাসের কারণেও সম্ভবত হামাসের নেতারা সব সময়ই এ ধরনের চ্যালেঞ্জ অঙ্কুরে মোকাবিলা করতে চান। বিস্ময়কর মনে হলেও সত্য যে এসব গোষ্ঠী নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের উদ্বেগ একই রকম। তারা মনে করে, এই গোষ্ঠীগুলো গাজায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অস্ত্র নিয়ে আসছে। তা ছাড়া তাঁদের সঙ্গে সিনাইয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসা ছোট ছোট জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
সিনাই এলাকার বিষয়ে উদ্বেগ কেবল যে হামাসের বা ইসরায়েলের তা-ই নয়, সিনাই-পরিস্থিতি মিসরের ক্ষমতাসীনদের জন্য এখন একটা বড় চিন্তার বিষয়। মোবারক সরকারের পতনের সময় যে ক্ষমতার শূন্যতার সৃষ্টি হয়, সে সুযোগে অনেক জঙ্গি সংগঠন সেখানে ঘাঁটি গেড়েছে। ১৯৭৯ সালের ইসরায়েল-মিসর শান্তি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী—সিনাই ‘ডি-মিলিটারাইজড জোন’—সেখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নেওয়ার জন্য দুই দেশেরই সম্মতি লাগে। কিন্তু এ ব্যবস্থা এলাকার জঙ্গিদের জন্য সোনায় সোহাগা হয়ে উঠেছে। গত বছর জুলাই মাসে জঙ্গিরা মিসরের পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালায় এবং আল-কায়েদার সিনাই শাখা বলে দাবিদার একটি গোষ্ঠী সিনাইয়ে ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের ঘোষণা দেয়। এ বছরের আগস্ট মাসে জঙ্গিরা সিনাইয়ে মিসরের সেনাবাহিনীর ওপর চড়াও হয়ে ১৬ জন সেনাকে হত্যা করে। সেনাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুটি গাড়ি নিয়ে ৩৫ জন জঙ্গি ইসরায়েলের সীমান্তচৌকিতে হামলা চালায়; ইসরায়েলিরা ছয়জনকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনার পর ইসরায়েল মিসরের বাহিনীকে জঙ্গি দমন অভিযানের জন্য ভারী অস্ত্র আনার অনুমোদন দেয়। মিসরের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাপ্রধানের চাকরিচ্যুতি ঘটে। ফলে, সিনাইয়ের এই জঙ্গিরা মিসর, ইসরায়েল ও হামাস—সবার জন্যই এখন একটা বড় হুমকি। গাজায় তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো গোষ্ঠীই হামাসের জন্য দুঃসংবাদ। কেননা, তারা হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এ জঙ্গিরা ক্রমাগতভাবে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালানোর জন্য আংশিকভাবে দায়ী। পাশাপাশি এদের সম্ভাব্য জনপ্রিয়তা রোধের জন্য হামাসকেও নিতে হয়েছে আরও কঠোর অবস্থান। ফলে হাতে আসা নতুন ভারী অস্ত্র, বিশেষত রকেট—যেগুলো ইরান ও হিজবুল্লাহর সূত্রে প্রাপ্ত—ব্যবহার করে হামাস যে শক্তি প্রদর্শনের তাগিদ অনুভব করেছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
অবস্থাকে আরও জটিল করেছে হামাসের নেতৃত্বের লড়াই। হামাসের নেতা খালিদ মিশাল এ বছরের গোড়াতে ঘোষণা করেন, তিনি দলের পলিটব্যুরো থেকে—অর্থাৎ, কার্যকর নেতৃত্ব থেকে—সরে দাঁড়াবেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটা অন্যতম কারণ হলো সিরিয়া-পরিস্থিতি। ১৯৯৯ সালে জর্ডান থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর মিশাল ও হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদর দপ্তর ছিল সিরিয়ায়। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হামাস এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি, সমর্থন তো দেয়ইনি। এর কারণ, হামাসের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক। কিন্তু এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হামাস শেষ পর্যন্ত দামেস্ক থেকে তাদের দপ্তর গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইরানের সেটা পছন্দ হয়নি। সিরিয়ার সরকারি গণমাধ্যমে এ নিয়ে কেবল প্রবল সমালোচনাই হয়েছে তা-ই নয়, খালিদ মিশালকে ‘জায়নবাদীদের এজেন্ট’ বলেও বর্ণনা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে হামাসের সাহায্যে এগিয়ে আসে কাতার। তাদের আশা, এই সুযোগে সুন্নি সংগঠন হামাসকে শিয়া ইরানের প্রভাবমুক্ত করা যাবে। যে কারণে সম্প্রতি কাতারের সরকার গাজায় তাদের একটি অফিস খুলেছে এবং প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে কাতারের আমির গাজা সফরে যান। তাঁর এই সফর যে ইরান কত অপছন্দ করেছে, এর একটা উদাহরণ: ১৯ নভেম্বর ইরানি বার্তা সংস্থা এই খবর প্রচার করে যে কাতারের আমির তাঁর সফরের সময় হামাসের নেতাদের যেসব কলম দেন, সেগুলো থেকে লো-ফ্রিকোয়েন্সি সিগন্যাল পাঠায়, যার মাধ্যমে ইসরায়েলের স্যাটেলাইটগুলো নেতাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারে এবং তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করতে সক্ষম হয়।
খালিদ মিশালের পদত্যাগের ঘোষণার পর সংগত কারণেই নেতৃত্বের জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা কেবল বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যেই নয়। নেতৃত্বে গাজায় যাঁরা আছেন, তাঁরা আসবেন, নাকি যাঁরা গাজার বাইরে আছেন, তাঁরা আসবেন, সেটাই প্রতিযোগিতার একটা বড় দিক। মনে করা হয়, খালিদ মিশালের পছন্দের উত্তরসূরি হচ্ছেন সালেহ আল আরুরি। তিনি এখন হামাসের পশ্চিম তীরের (ওয়েস্ট ব্যাংক) রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান এবং ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দীবিনিময়ের প্রধান স্থপতি। অন্যদিকে রয়েছেন আবু মারজুক। তিনি এখন খালিদ মিশালের সহকারী। তিনি মিসর থেকে তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাঁর সঙ্গে গাজার নেতাদের সম্পর্ক ভালো। কিন্তু তাঁদের পাশাপাশি প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে ইসমাইল হানিয়ের নাম। হানিয়ে গাজায় আছেন এবং তাঁর সঙ্গে গাজার মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সম্পর্ক ও যোগাযোগ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। গাজায় যাঁরা আছেন, তাঁরা মনে করেন, গাজায় অবস্থানকারী ব্যক্তিদেরই নেতৃত্বে আসা উচিত, বিশেষ করে সিরিয়া থেকে দপ্তর সরিয়ে আনার পর দেশের বাইরের নেতাদের কোনো স্থায়ী অবস্থান তৈরি হয়নি বলে এখন গাজাভিত্তিক নেতাদেরই দলের দায়িত্ব পাওয়া উচিত। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক গণমাধ্যমে এ ধরনের আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে যে, এই যুদ্ধের ফলে তাঁদের পক্ষে দেখানো সম্ভব যে তাঁরা ইসরায়েলিদের মোকাবিলা করতে সক্ষম এবং তাঁদের চেয়ে যোগ্য নেতৃত্ব এখন আর কেউ হতে পারে না। নেতৃত্বের এই লড়াই গত কয়েক মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হামাসের কোনো অংশকে উৎসাহিত করেছে কি না, সেটাও ভেবে দেখার অবকাশ আছে।
গাজায় এখন সাময়িকভাবে ‘যুদ্ধবিরতি’ ঘটেছে। এ ধরনের যুদ্ধবিরতি আগেও হয়েছে। কিন্তু এগুলো কোনো স্থায়ী সমাধান দেয় না। বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ যখন আবার জটিল হয়ে ওঠে, যখন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির তাগিদ সৃষ্টি হয়, ইসরায়েলি রাষ্ট্রের আপন স্বার্থ উদ্ধারের প্রয়োজন দেখা দেয়, তখনই আবার যুদ্ধের আগুন জ্বলে ওঠে। সেই সঙ্গে যদি হামাসের নেতৃত্বের সংকট থাকে, থাকে অন্যান্য বিবেচনা, তখন তাদের ভূমিকা সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়ার কাজটা করে সহজেই। এই সুযোগে ফিলিস্তিনিদের অনৈক্য আরও জোরদার হয়। সেটা ২০০৬ সাল থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি। এবারের এই অব্যাহত বোমা হামলার মুখেও তার অন্যথা হয়নি। ক্রমাগতভাবেই গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে বলেই পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকাই এই সংকটে চোখে পড়েনি। এই নেতৃত্ব কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে কি না, সেটাও এখন একটা প্রশ্ন। পশ্চিমা বিশ্বে হামাসের গ্রহণযোগ্যতা যখন প্রশ্নবিদ্ধ, বিশেষ করে ইসরায়েলের অস্তিত্ব অস্বীকারের কারণে, তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যদি অকার্যকর হয়ে পড়ে, তবে এতে ইসরায়েলেরই লাভ, ক্ষতি ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের। তারা ইসরায়েলের হামলায় প্রাণ দেবে, কিন্তু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন সুদূরপরাহতই থাকবে।
ইলিনয়, ২১ নভেম্বর ২০১২
 আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।

No comments

Powered by Blogger.