সিঙ্গাপুরিরা সবচেয়ে কম আবেগী

নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। প্রায় ৫৩ লাখ জনসংখ্যার ছোট এই দেশটি জীবনমান বিচারে অনেকখানিই এগিয়ে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক থেকে তাদের অবস্থান অনেক ওপরে। তবে একটি দিক থেকে তারা পিছিয়ে রয়েছে। সেটি হলো এখানকার মানুষের আবেগ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের এক জরিপে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বে সিঙ্গাপুরিরাই সবচেয়ে কম আবেগী। গত বুধবার জরিপটি প্রকাশ করা হয়।
তবে গ্যালাপের এই জরিপের সঙ্গে একমত নয় সিঙ্গাপুরিরা। তাদের মতে, তাদের সংস্কৃতিটাই এমন। এখানে বেশি আবেগ দেখানোর সুযোগ নেই। জাতিভেদে কোনো কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতেই পারে।
১৫০টি দেশে জরিপটি চালানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক যা-ই হোক_কোনো একটি বিষয়ে সিঙ্গাপুরের মাত্র ৩৬ শতাংশ মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখায়। আবেগহীন জাতি হিসেবে পরিচিত জর্জিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং রাশিয়ার মতো দেশকেও এ ক্ষেত্রে তারা পেছনে ফেলেছে। তবে আবেগের দিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়েছে ফিলিপাইনের মানুষ। সেখানকার ৬০ শতাংশ মানুষকেই জরিপে আবেগী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জরিপের প্রশ্নগুলো ছিল এ রকম : 'গতকাল কি আপনি পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেয়েছেন?', 'সারা দিন অন্যদের কাছ থেকে কি আপনি শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ পেয়েছেন?' কিংবা 'এদিন কি আপনি ব্যাপক হেসেছেন?' জরিপে বলা হয়, সিঙ্গাপুরের মানুষ এসব প্রশ্নে সবচেয়ে কম সাড়া দিয়েছে।
গ্যালাপের উপপরিচালক জন ক্লিফটন বলেন, 'জীবনমানের সাধারণ মাপকাঠিতে বিচার করলে সিঙ্গাপুর অনেক এগিয়ে। কিন্তু জীবনকে অর্থবহ করে তোলে, এমন সব বিষয় বিবেচনা করলে দেশটির মানুষ খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই।'
তথ্য মতে, বিশ্বে সিঙ্গাপুরের লোকজনই সবচেয়ে বেশি সময় কাজ করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, সপ্তাহে সাড়ে ৪৬ ঘণ্টা কাজ করে থাকে তারা, যা বিশ্বের অন্য দেশের চেয়ে বেশি।
জরিপটি প্রকাশের পর এ ব্যাপারে ইন্টারনেটে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে খোদ সিঙ্গাপুরের লোকজনের কাছ থেকেই। একজন টুইটারে লেখেন, 'বিশ্বে সবচেয়ে কম আবেগী সিঙ্গাপুরিরা_বুঝতে পারছি না কী প্রতিক্রিয়া জানাব। এই জরিপ ভুল। আমি তো নিজের মতো আমার আবেগ প্রকাশ করি।' আদ্রিয়ানা তান নামের এক সিঙ্গাপুরিও জানালেন একই কথা। তিনি বলেন, 'কোনো জাতি যখন খুব বেশি পরিশ্রম করে তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে আবেগের ছোঁয়া কম থাকবে। আবার সব বিষয়ে সবার মধ্যে মিলও থাকে না। একেক জাতি একেক বিষয়ে একেক রকমভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। ইউরোপীয়রা দুপুরে ঘুমাতে পছন্দ করে। অথচ এশিয়ায় দুপুরে ঘুমানোকে অলসতার সঙ্গে তুলনা করা হয়। তাই এক জাতির সঙ্গে আরেক জাতির দৃষ্টিভঙ্গি মিলবে না।'
জরিপে সবচেয়ে আবেগী দেশের তালিকায় ফিলিপাইনের পরেই আছে এল সালভেদর ও বাহরাইন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, জীবনে সুখী হওয়ার জন্য আবেগী হতে হবে_এমন কোনো কথা নেই। সূত্র : গার্ডিয়ান, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.