সরেজমিন-ঢাকা যেন ডাস্টবিন by অমিতোষ পাল

শাহবাগ মোড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার প্রবেশপথে শাহবাগ থানার পাশেই মূল সড়কের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। পাশের ডাস্টবিন থেকে ময়লা উপচে পড়েছে রাস্তায়। ফুটপাতের ওপর ছড়িয়ে থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধে এই পথ দিয়ে চলাফেরা করা রীতিমতো 'শ্বাসরুদ্ধকর'।
নাক চেপে ধরে চলতে হয়।
শাহবাগ মোড়ের ভাই ভাই ফ্লাওয়ার মিলের কর্মচারী বিজয় রায় জানান, প্রায়ই ময়লা ফেলে ফেলে রাস্তার অর্ধেকটা বন্ধ করে ফেলা হয়। সব সময়ই আবর্জনার তীব্র গন্ধ থাকে। বাধ্য না হলে এখান দিয়ে কেউ হাঁটে না।
এই পথে যাতায়াতকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ভাস্কর্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহমেদ তারেক জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, শাহবাগ থানা ও জাতীয় জাদুঘর- এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রস্থলে এমন ময়লার ভাগাড় থাকা খুবই দুঃখজনক।
কেবল এখানে নয়, রাজধানীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কেরই এমন হাল। রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। অলিগলির অবস্থা আরো খারাপ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে যে চিত্র দেখা গেছে, তা কোনো রাজধানী শহরের সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মৌচাক মার্কেট থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রগতি সরণি যেন সিটি করপোরেশনের ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। সড়কের দুই পাশেই ময়লা-আবর্জনা ফেলার কনটেইনার থাকায় জনসাধারণের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব কনটেইনার থেকে রাতের বেলা ময়লা অপসারণের কথা থাকলেও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেগুলো সময়মতো পরিষ্কার করে না। অনেক ক্ষেত্রে দিনের বেলায়ও ময়লা অপসারণ করতে দেখা যায়। ময়লার গাড়িও দিনের বেলা চলতে দেখা যায় ব্যস্ত রাজপথে। যানজটের ভেতরে পড়লে তখন দুর্গন্ধে ভোগান্তির শেষ থাকে না। মালিবাগ থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা পর্যন্ত অন্তত ১৫টি স্থানের অবস্থা বেশ খারাপ। বিশেষ করে রামপুরা বাজার ও বাড্ডা এলাকার রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখার দৃশ্য নিয়মিতই চোখে পড়ে।
মধ্য বাড্ডা আবুল হোটেলের উত্তর পাশ, মধ্য বাড্ডা রাস্তার পূর্ব পাশে হাজী মার্কেটের সামনে, বাড্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে ও সুবাস্তু টাওয়ারের পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপরে প্রায়ই ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। এলাকাবাসী জানায়, সিটি করপোরেশনকে বারবার জানানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। এমনকি প্রতিদিন সকাল হওয়ার আগে ময়লা পরিষ্কারের নিয়ম থাকলেও কাজ চলে দুপুর পর্যন্ত। অভিযোগ পাওয়া গেছে, যে সংখ্যক ট্রিপ দিয়ে আবর্জনা পরিষ্কার করার কথা, বর্জ্যবাহী যানবাহনের অসাধু চালকরা ওই সংখ্যক ট্রিপও দেয় না। ফলে আবর্জনা থেকেই যায়।
হাজী মার্কেটের দোকানি আরশাদ আলম জানান, প্রতিদিন সকালে নাক চেপে দোকানে যেতে হয়। দুপুরে বের হওয়ার সময়ও একই অবস্থা। ময়লা যত্রতত্র পড়ে থাকার কারণে রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। এতে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।
রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে বাজারের সামনের সড়কের অবস্থাও বেহাল। কনটেইনার উপচে আশপাশেও ছড়িয়ে পড়েছে বর্জ্য। তা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের ঢুকতে হচ্ছে নাক চেপে ধরে। কোলাহলপূর্ণ ওই পয়েন্টে বাসগুলো থামে। ওঠা-নামার সময় যাত্রীদের পড়তে হয় বিপাকে। দিনের পর দিন চলছে এই অবস্থা।
শাহবাগ, প্রগতি সরণি বা শেওড়াপাড়ার মতো ময়লা-আবর্জনায় শ্রীহীন হয়ে পড়েছে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা। যত্রতত্র পড়ে থাকা বর্জ্যের উৎকট গন্ধে বিষিয়ে উঠছে নগরজীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরান ঢাকার রসুলপুর-কোম্পানীঘাটের সংযোগ সড়কের দুই পাশেই আবর্জনার স্তূপ। প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষকে নাকে রুমাল চেপে এ পথে চলাচল করতে হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দারা ডায়রিয়াসহ জীবাণুবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশে বুড়িগঙ্গা শাখা-নদীর তীরঘেঁষে কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত দুই পার থেকে ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। কাপ্তানবাজার এলাকায় ময়লার স্তূপের চিত্র সার্বক্ষণিক। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শুষ্ক মৌসুমের ধুলোবালি। বর্তমানে নির্মাণকাজের মৌসুম চলায় অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। অনেকে নির্মাণসামগ্রী রাস্তার ওপরই ফেলে রাখছেন। যানবাহনের চলাচলে তা ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শ্যামলী, রামপুরাসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। সামান্য বৃষ্টি হলে এসব ময়লা-আবর্জনা একাকার হয়ে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। আর রোদ হলে ধুলোবালিতে একাকার হয়ে যায় পুরো এলাকা।

No comments

Powered by Blogger.