সংবিধান সংশোধনীতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে লালমনিরহাটে বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী by জাহাঙ্গীর আলম শাহীন ও আব্দুর রউফ সরকার

লালমনিরহাট থেকে ॥ বর্তমান সরকারের আমলেই ’৭১-এর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করা হবে। দেশে যেন আর কোনদিন জঙ্গীবাদ মাথা তুলতে না পারে। তাই সরকার জঙ্গীবাদ নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গীবাদ কঠোরহস্তে দমন করা হয়েছে।


দেশের মানুষ এখন শান্তিতে আছে। শান্তিতে রাতে ঘুমাতে পারে। ২০২১ সালের মধ্যেই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা হবে। বঙ্গবন্ধু ’৭১ সালে দেশের মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারেনি। তার আগেই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে আমি দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চাই। সে লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করছি। সকলকে এই অর্র্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমাকে সহায়তা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ সরকারের আমলেই করা হবে।
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে দেশে কোনদিন অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্যই সংবিধানে ১৫তম সংশোধনী করা হয়েছে। এ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে ভোটের রাজনীতি নিশ্চিত করা হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাট জেলা শহরের কালেক্টরেট মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসমুদ্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ৪ বছর পূর্বে সরকার গঠনের সময় দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ছিল। ৩০ লাখ মেঃ টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে সরকার ক্ষমতায় আসে। বর্তমান দেশে কোন খাদ্য ঘাটতি নেই। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। দেশের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে। আগামীতে দেশে কোন দরিদ্র মানুষ থাকবে না। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি সমৃদ্ধিশালী দেশে হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাবে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। জনসভাস্থলে উপস্থিতির আগে দুপুর আড়াইটায় উত্তরবঙ্গের অর্ধকোটি মানুষের স্বপ্ন তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত তিস্তা সেতুটির উদ্বোধন করেন। এ সময় সেতু প্রান্তে সংক্ষিপ্ত আকারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেতুটি কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরের মানুষের ভাগ্যের দ্বার খুলে দিয়েছে। খুব দ্রুত এ অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ফলে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা স্থাপনে সরকার উদ্যোক্তাদের সহায়তা করবেন বলে আশস্ত করেছেন। এ সময় যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রেলমন্ত্রী মোঃ মজিবুল হকসহ কেন্দ্রীয় নেতা, সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রংপুরের গৃহবধূ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে তাঁর সরকার রংপুরকে বিভাগ করেছে। যার ফলে রংপুর বিভাগের অধীনে থাকা জেলাগুলোর সমন্বিত উন্নয়ন করা যাবে। লালমনিরহাট কুড়িগ্রামে মৌসুমী মঙ্গা ছিল। বর্তমান সরকার নানামুখী কর্মসূচী হাতে নিয়ে সেই মঙ্গা মোকাবেলা করেছে। বর্তমান মঙ্গা নেই। আর কোনদিন যাতে মঙ্গা না আসে সে জন্য সরকার কাজ করছে।
নতুন নতুন জাতের ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করে মঙ্গা দূর করা হয়েছে। বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে বিনা জামানত ঋণ নিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য করার সুযোগ সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূর করতে সাহায্য করা হয়েছে। এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের ফলক উন্মোচন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে রংপুরের গৃহবধূ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশরতœ ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছেন। তিনি বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে জনসভার প্রাক্কালে মঞ্চে ওঠার পূর্বে কালেক্টরেট মাঠে অস্থায়ীভাবে নির্মিত প্রতীকী তিস্তা সেতু, বুড়িমারী লালমনিরহাট পুনঃসংস্কারকৃত প্রায় এক শ’ কিলোমিটার রেললাইন, ৪টি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের নবনির্মিত বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্বোধন করেন। এ সেতু খুলে যাওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার অর্ধকোটি মানুষের স্বপ্ন (৭৫০ মিটার দীর্ঘ) তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত সড়ক সেতু। সেতুটি চালু হওয়ায় দু’জেলার লাখ লাখ মানুষের সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল। মুক্ত পেল সড়ক যোগাযোগের দুর্ভোগ থেকে। এই সেতুটি ঘিরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কারনে এ অঞ্চলে খুব দ্রুত কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা ঘরে উঠবে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২২ কোটি টাকা। নানা কারণে সময় লেগেছে প্রায় ১১ বছর। প্রধানমন্ত্রী পিপিআর প্রকল্পের অধীনে ১০০ শয্যার ডায়াবেটিক হাসপাতালের নবনির্মিত বহুতল ভবন উদ্বোধন করেন। এতে ব্যয় হয় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ২৮ কোটি টাকা। ১৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে লালমনিরহাট বুড়িমারী রেললাইন পুনর্নির্মাণসহ ৪টি দ্রুতগামী ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা উদ্বোধন করেন।

No comments

Powered by Blogger.