বিদ্যুতের দাম পাইকারি ১৭ ও খুচরা ১৫ ভাগ বাড়ল

পাইকারি এবং খুচরা উভয় ধরনের বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেন বিইআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন।


পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৬৮ পয়সা অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৯২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ৭৫ পয়সা অর্থাৎ গড়ে ১৫ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে বর্ধিত দাম কার্যকর হবে। আবাসিক গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের তিনটি সø্যাব ভেঙ্গে ছয়টি করা হয়েছে। সকল সø্যাবের সুবিধা দেয়া হবে গ্রাহককে। বর্তমান সরকারের সময় এ নিয়ে ষষ্ঠ দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হলো। কমিশন সূত্র বলছে, অস্বাভাবিক হারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি না পেলে বর্তমান সরকারের সময় আর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হবে না।
দাম বৃদ্ধির সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, গত মার্চে সø্যাব সুবিধা প্রত্যাহার করায় গ্রাহকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। বিষয়টি কমিশনের ভুল ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারিনি এর ফলে কি প্রভাব পড়বে। মাসের শেষভাবে এসে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হলেও গ্রাহকরা সকল সø্যাব সুবিধা পাওয়ায় বিদ্যুত বিল চলতি মাসে কম আসবে।
এছাড়া কৃষিতে পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো ও ওজোপাডিকোর জন্য ১১ দশমিক ০৬ ভাগ বৃদ্ধি করে প্রতি ইউনিটের দাম ২ দশমিক ৫১ টাকা এবং আরইবির জন্য ১১ ভাগ বৃদ্ধি করে ইউনিটপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ দশমিক ৭৬ টাকা।
ক্ষুদ্র শিল্পে সকল বিতরণ কোম্পানির জন্য ফ্ল্যাট রেট হিসেবে এক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৫ দশমিক ৪৫ ভাগ হারে বৃদ্ধি করে ইউনিটপ্রতি ৬ দশমিক ৯৫ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক ও সকল বিতরণ কোম্পানির জন্য ১৫ দশমিক ৫৩ ভাগ বৃদ্ধি করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ইউনিট ৯ টাকা।
১১ কেভি বিতরণ লাইনের গ্রাহকদের জন্যও ১৫ দশমিক ৪২ ভাগ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এই শ্রেণীর গ্রাহক এখন থেকে ৬ টাকা ৮১ পয়সা হারে বিদ্যুতের দাম দিতে হবে। ৩৩ কেভির সরবরাহ লাইনে ১৫ দশমিক ৫১ ভাগ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে ইউনিটপ্রতি ৬ দশমিক ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ১৩২ কেভির বিতরণ লাইনে প্রতি ইউনিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ১৬ টাকা। এই শ্রেণীর গ্রাহকদের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৭ ভাগ।
খুচরা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরইবির জন্য ১৫ দশমিক ১৪, ওজোপাডিকোর ১৫ দশমিক ২৫, পিডিবির ১৫ দশমিক ৪৫, ডেসকোর ১৪ দশমিক ৩৬ ভাগ এবং ডিপিডিসির ১৪ দশমিক ৮৩ ভাগ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকার থেকে চলতি অর্থবছরে বিদ্যুতে তিন হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। ভর্তুকিসহ চলতি অর্থবছরে পিডিবির রাজস্ব আদায় হবে ১৮ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা।
পিডিবি যেসব গ্রাহকের কাছে বকেয়া পাবে বিইআরসি তার তালিকাও চেয়েছে। ইউসুফ হোসেন বলেন, আমরা পিডিবিকে বলেছি তাদের কি পরিমাণ দেনা রয়েছে এবং কি পরিমাণ বকেয়া রয়েছে তা জানাতে। হিসেব করে দেখা গেছে, দেনার চেয়ে পাওনাই বেশি। এখান থেকেও পিডিবি ৪০০ কোটি টাকার মতো সংস্থান করতে পারবে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে বিইআরসি ‘এনার্জি সাপোর্ট ফান্ড’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। লাভজনক বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির নিট লাভের একটি অংশ অলাভজনক বিতরণ কোম্পানির ঘাটতি লাঘবের লক্ষ্যে বিতরণ করা হবে। ওই তহবিল ব্যবস্থাপনায় একটি নীতি তৈরি হবে। সø্যাব সুবিধা প্রত্যাহারে বিতরণ কোম্পানি যে লাভ করেছে তার ৩০ ভাগ এবং বিইআরসির দেয়া এক কোটি টাকার অনুদান নিয়ে এই তহবিল প্রাথমিকভাবে গঠিত হবে। সরকার এই তহবিল গঠনে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পিডিবির বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের হিসেব দেয়ার কথা কমিশনের চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পিডিবি প্রথমে ৮০ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। পিডিবি জানায়, চলতি অর্থবছরে তারা ৩৪ দশমিক ৭৯ ভাগ বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গত বছর তারা উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে ১৩ ভাগ। আর এর আগের দু’বছর উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে সাড়ে সাত ভাগের কম (২০১০-১১ তে ৭ দশমিক ২৩ ভাগ এবং ২০১১-১২ তে ৭ দশমিক ৩৩ ভাগ)। ওই হিসেবে গড় করলে দেখা যায়, উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ৯ দশমিক ১৮ ভাগ। পিডিবি তাদের সংশোধিত প্রস্তাবে ৩৪ দশমিক ৭৯ থেকে কমিয়ে ২৮ ভাগ উৎপাদন বৃদ্ধির কথা জানায় কমিশনকে। কিন্তু কমিশন তাও গ্রহণ না করে ২০ ভাগ উৎপাদন বৃদ্ধি হবে বিবেচনা করে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর ধরা হয়েছে গড়ে ৩৫ ভাগ। যার মধ্যে ফার্নেস অয়েলে ৩৯ ভাগ এবং ডিজেলে ২০ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর ধরা হয়েছে।
পিডিবি তাদের প্রথম প্রস্তাবে বলেছিল উৎপাদন মূল্য পড়বে প্রতি ইউনিটে ৬ দশমিক ০৩ টাকা। সংশোধিত পরবর্তী প্রস্তাবে যা পাঁচ দশমিক ৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কমিশন সাবসিডিসহ উৎপাদন ব্যয় ৪ দশমিক ৭০ টাকা নির্ধারণ করল।
কমিশন বলছে, পিডিবি যে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে তার পুরোটা বৃদ্ধি করা হবে ধরে নিয়ে বিতরণ কোম্পানি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। গত ২৪ জুন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুত বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। এর পরের দিন পিডিবি তাদের বিতরণ এলাকার গ্রাহকদের জন্য ৫৫ থেকে ৫৭ ভাগ এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডও (আরইবি) ৫০ শতাংশের ওপরে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কমিশন এই প্রস্তাবগুলোর কোনটি আমলে না নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিল।
এর আগে আরও ৫ দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ২ টাকা ৩৭ পয়সা পাইকারি বিদ্যুতের দাম ছিল। আর খুচরা বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি গড় দাম ছিল ৪ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির তিন সদস্য মোঃ ইমদাদুল হক, ড. সেলিম মাহমুদ এবং দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.