বিএনপির লুটপাটের কারণে তিস্তা সড়ক সেতু হয়নি: প্রধানমন্ত্রী

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি সরকারের সময়ে খুন, হত্যা, লুটপাট করে তারা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। একে একে তারা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা করে দেশকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছিল। তারা দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছিল। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকার জন্য মহাজোট সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। গতকাল লালমনিরহাট জেলা কালেক্টর মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ এক সময় মঙ্গায় ছিল। মহাজোট সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম অঞ্চলে নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করে মঙ্গা মুক্ত করেছে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য রংপুরকে বিভাগ করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিনা পয়সায় প্রথম শ্রেণী থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বই বিতরণ করা হয়েছে। ৩০ লাখ টন খাদ্যঘাটতি নিয়ে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। চালের দাম কমিয়ে দেশের মানুষ যেন খেয়েপরে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় এসে আমরা মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে। এ বিচার কার্য সমাপ্ত করা হবে। স্বাধীনতার পর জাতির জনক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেই। তিনি বলেন, ভোট নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি করতে দেয়া হবে না। গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর খেলা খেলতে দেয়া হবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তিনি অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি। আমি এদেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি, সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা, ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। ৭৫০ মিটার দীর্ঘ তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণ, ১৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে লালমনিরহাট বুড়িমারী রেল লাইন পুনঃস্থাপন, স্টেশন পুনঃ নির্মাণসহ ৪টি দ্রুতগামী ট্রেন চালু, উন্নত স্বাস্থ্য সেবার জন্য ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ডায়াবেটিক হাসপাতালের বহুতল ভবন নির্মাণ, ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর ভিত্তি স্থাপন, ১৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তার বাম তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, নার্সিং ট্রেনিং কলেজের ভিত্তিস্থাপন, ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাইমারি টিসার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণসহ লালমনিরহাটে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেন তিনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়নের ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল স্থাপন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, জেলায় প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র চালুকরণ, বুড়িমারী স্থলবন্দর সংস্কার ও অধুনিকীকরণ এবং দহগ্রাম আঙ্গোরপোতাবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষিত দাবি তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ব্যবস্থাকরণসহ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে লুটপাটের কারণে তিস্তা সড়ক সেতুর কাজ শেষ হয়নি। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করলো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধনের কারণে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার খুলে গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জাফর আলী এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, সাবেক এমপি আলহাজ আবুল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবু সাঈদ দুলাল, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল হক, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মতিয়ার রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নজরুল ইসলাম রাজু, আশরাফ হোসেন বাদল, মোফাজ্জল হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এডভোকেট সফুরা বেগম রুমী, কৃষক লীগ সভাপতি হাফিজুর রহমান কাজল, আবদুল আহাদ লুলু, গোলাম মোস্তফা স্বপন, রাজারহাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবু নুর মোহাম্মদ আক্তারজ্জামান প্রমুখ। রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, প্রধানমন্ত্রী বেলা ২টা ৬ মিনিটে কাউনিয়া ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে সভামঞ্চে এসে পৌঁছান। এ সময় ওবায়দুল কাদের ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর ফলক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২টা ৩০ মিনিটে হেলিপ্যাডে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে অবতরণ করেন। এ সময় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দলীয় নেতৃবৃন্দ ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর নিয়ে রংপুর থেকে মহাসড়কে তিস্তার উদ্দেশে রওনা হন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে মহাসড়কের দু’ধারে দুই শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়। সড়কগুলো সাজানো হয় বিভিন্ন রঙের ফেস্টুন ও পতাকা দিয়ে। রাস্তার দু’ধারে হাজার মানুষ হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এরশাদ বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেলেন না রংপুরের সভামঞ্চে মহাজোটের আওয়ামী লীগ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ থাকলেও বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেলেন না রংপুরের সন্তান এরশাদ। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.