নরসিংদীতে লোকমান সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ, ৫ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ, ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহবান

মোর্শেদ শাহরিয়ার,নরসিংদী থেকে: শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর নরসিংদী সফরকে কেন্দ্র করে লোকমান সংগ্রাম পরিষদের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশ পুলিশের বাঁধার মুখে পন্ড হয়ে গিয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে  লোকমান সমর্থকদের সংঘর্ষে পৌর মেয়র কামরুজ্জামান, সাংবাদিক ও পুলিশসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার জেলা সদরে হরতাল আহবান করেছে লোকমান সমর্থকরা। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। বিআরটিসিসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কর্মসূচীর প্রথম দিন আজ মেয়র লোকমান হোসেনের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল। কিন্তু মন্ত্রীর সফরে নাশকতার আশংকায় প্রশাসন থেকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। শুক্রবার সকালে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি শহর জুড়ে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা টহল দেয়। সকাল দশটার দিকে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লোকমানের ছোট ভাই পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের বিক্ষোভ সমাবেশের গণসংযোগে পুলিশ বাঁধা দেয়। এর ফলে তিনি আর গণসংযোগ করতে পারেননি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর জুড়ে পুলিশের নজরদারী বাড়ানো হয়। একাধিক স্থানে বসানো হয় পুলিশের চেকপোষ্ট, বন্ধ করে দেয়া হয় সকল যানবাহন চলাচল। বেলা পৌনে তিনটার দিকে পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের নেতৃত্বে শহরের বাসাইল মার্কাস মসজিদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশস্থল জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে রওনা দেয়। মিছিলটি কিছুটা এগুতেই পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ে। এই সময় পৌর মেয়রসহ লোকমান সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশ লোকমান সমর্থকদের উপর লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। জবাবে লোকমান সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে পুলিশের লাঠিচার্জে পৌর মেয়র কামরুজ্জামান, নাজিম উদ্দিন, জামান মিয়া, নূর এ আলম, শরীফসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। ওই সময় দায়িত্বপালনকালে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি সঞ্জিত সাহার মাথায় পুলিশ আঘাত করে। ওই সময় মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলকে র‌্যাবের সদস্যরা ঘিরে রাখে। বিকাল পাঁচটার দিকে মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলীসহ বাসাইলের লোকমানের সমর্থকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলা হাসপাতালের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধের সৃষ্টি করেন। ওই সময় বিক্ষোভকারীরা বিআরটিসিসহ দুটি যাত্রীবাহী বাস ও একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ওই এলাকায় পুলিশ ও লোকমান সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে শতাধিক রাউন্ড গুলি ও দুইশ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। পাশাপাশি লোকমান সমর্থকদের ছোড়া ইটপাটকেলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল জিয়াউল হক ও সোহেল মিয়া আহত হন। অবরোধের ফলে মহাসড়কের উভয় পার্শ্বে প্রায় ৪০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে ঢাকা-চট্রগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে করে পাশ্ববর্তী বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন আটকে পড়ে। রাত আটটার দিকে আগুনে পোড়া গাড়ি রাস্তা থেকে সরালে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ বিষয়ে মেয়র কামরুজ্জামান বলেন, মেয়র লোকমান হোসেনের খুনিদের বিচারের দাবিতে ডাকা শান্তিপূর্ণ কমসূচীতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের সমর্থকদের শুধু লাঠিপেটাই করেনি গুলি ও টিয়ারসেলও নিক্ষেপ করছে। এতে আমিসহ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। নরসিংদীবাসী এই নিশংস হামলার প্রতিবাদে গর্জে উঠবে। পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। মেয়রের সমর্থকদের হামলায় ১৭ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। সন্ধ্যার পর থেকে মেয়রের লোকজন পুলিশের উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। এদিকে সাংবাদিকদের  উপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সভা হয়েছে নরসিংদী প্রেসকাবে। সভা থেকে সাংবাদিকরা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এবং দোষী পুলিশের শাস্তির দাবি জানান।

No comments

Powered by Blogger.