ছত্রাকের জীবনরহস্য উদ্ভাবন-গবেষক দলকে অভিনন্দন

পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের পর আমাদের একদল বিজ্ঞানী ফসল ও উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর একটি ছত্রাকের জিনরহস্য আবিষ্কার করে একই ধরনের সাফল্য অর্জন করেছেন_ এ আমাদের জাতীয় গৌরব। কমবেশি পাঁচশ' উদ্ভিদের শত্রু এই ছত্রাক; বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের ক্ষেত্রে এর প্রাসঙ্গিকতা আমাদের জন্য সম্ভাবনা


ও সমৃদ্ধির নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। প্রাকৃতিক তন্তুর স্বর্ণযুগ যখন ফিরে আসছে, তখন ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পচন রোধের বিষয়টি উৎপাদন ও গুণগত মানের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বড় অগ্রগতি। আলোচ্য ছত্রাকের আক্রমণ সহনীয় জাতের পাট উদ্ভাবন এখন কঠিন হবে না আশা করা যায়। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সমকালের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। জিনবিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলমকে বিশেষ সাধুবাদ। তার নেতৃত্বেই পরপর দু'বার বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হলো। কৃতী বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন বসু, মেঘনাদ সাহা ও কুদরত-ই-খুদার পর বিশ্ববিজ্ঞানে বাঙালির সাফল্যে যে দীর্ঘ ছেদ পড়েছিল, তিনি তা ঘুচিয়ে দিলেন। আমরা বিশ্বাস করি, তার এই সাফল্যে আগামী দিনগুলোতে আরও অনেক তরুণ অনুপ্রাণিত হবেন। ড. হক নিজেও বলেছেন, কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে এ দেশের তরুণরা বিশ্বমানের কাজ করতে পারবে। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি গত কয়েক দশক ধরে যে নিম্নগতি পরিলক্ষিত হচ্ছিল, একদল বিজ্ঞানীর সাফল্য তাতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমাদের আশা। বুধবার সংসদে এই আবিষ্কারের ঘোষণা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন যে, এত দিন বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে তাদের উদ্ভাবন গ্রহণ করেছে, এখন বিশ্ববাসী আমাদের কাছ থেকে নেবে। সরকারকেও মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয়তাও কিন্তু দুই দফা সাফল্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো। বিজ্ঞানী মাকসুদুল হকও সংবাদমাধ্যমের কাছে সেটা শিকার করেছেন। আমরা আশা করি, গবেষণা খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় বড় প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের গবেষণা কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। উন্নত দেশে এমন নজির মেলে অহরহ। সহায়তার হাত প্রসারিত হলে একই সঙ্গে অনেক বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা সম্ভব হবে। দেশের প্রধান ফসল ধানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের গবেষণা যদি উৎসাহিত করা যায়, কৃষিপণ্য ও খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে অনুসরণীয় হয়ে উঠবে। জীবনরহস্য উন্মোচিত হয়েছে যে ছত্রাকের, সেটি পাট ছাড়াও যেসব ফসলের শত্রু, আমরা দেখতে পাচ্ছি তার মধ্যে ধান, গম ও ভুট্টা রয়েছে। এই তিনটি ফসলই বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়। পাটের পাশাপাশি ওই ফসলগুলোকেও যদি ছত্রাকসহিষ্ণু করে তোলা যায়, খাদ্যশস্যের উৎপাদনও বাড়বে। কমবে প্রতিবেশ, স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকারক কীটনাশকের ব্যবহার। আনন্দ জাগানো সাফল্যের এই সময়ে সেই তাগিদ এবং আরও দায়িত্বশীলতার কথাও আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই। নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব সুরক্ষা বড় চ্যালেঞ্জ। সে প্রক্রিয়াও অনেক এগিয়ে গেছে জেনে স্বস্তিবোধ করছি। একই সঙ্গে উদ্ভাবনগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব কাজে লাগাতে হবে। পাটের জীবনরহস্য এবং সংশ্লিষ্ট ছত্রাকের জীবনরহস্য উদ্ভাবনের পর আমরা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব কৃষকের হাতে সেই সোনাফলা পাট কতদিনে পেঁৗছবে।
 

No comments

Powered by Blogger.