ভরাট হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি by মোঃ আলী আশরাফ খান

শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, বস্ত্র ও বিনোদনের মতো বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আমরা পেয়ে থাকি কৃষি খাত থেকে। সে কৃষি খাতকে আমাদের যে কোনো মূল্যে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। কিন্তু দেশে সুপরিকল্পিত নগরায়ন ও বাসস্থানের অভাবে কৃষিজমির পরিমাণ অধিক হারে কমে যাচ্ছে।


কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভরাট করা হচ্ছে কৃষিজমি, পুকুর, খাল-বিল ও ডোবা; বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীসহ বহু জলাশয়। এসব ভরাট হওয়া জায়গায় যত্রতত্র গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, কল-কারখানা, দোকানপাট, বিলাসবহুল মার্কেট ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
আমি যে এলাকায় বাস করি, দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরের ৬-৭ বছর পূর্বের অবস্থা আর এখনকার অবস্থা অনেক তফাত। যেখানে অনেক কৃষিজমি, পুকুর, খাল-বিল ও ছিল ডোবা। এসব রাতারাতি ভরাট হয়ে আলিশান অট্টালিকায় ভরে গেছে এখন। এমনও দেখা গেছে, সরকারি জায়গা লিজ নিয়ে ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে-হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা, চলছে পূর্বেকার মতো সরকারি নেতাকর্মীদের মধ্যে দখলদারিত্বের মহোৎসব। ড্রেনিজ সিস্টেমও রাখা হচ্ছে না এসব স্থাপনাগুলোতে। যার ফলে একটু-আধটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার কঠিন মাশুল দিতে হচ্ছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র গৌরীপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের এবং স্থানীয় অনেক পরিবারকেও। উল্লেখ্য, সম্প্রতি দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারে একটি ভয়াবহ অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গৌরীপুর বাজারের একমাত্র সম্বল ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এ পুকুরটি আছে বলেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা করে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ পুকুরটিও লিজ দেওয়া হয়েছে সরকার সমর্থিত স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে। যিনি প্রতি বছরই পুকুরটি সেচে মাছ ধরেন এবং পরে পুকুরে বিষ প্রয়োগ করেন অপ্রয়োজনীয় মাছ নিধনে। ফলে এ বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষের ওজু-গোসল ও প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহে বড় রকমের সমস্যায় পড়তে হয়। এসব সমস্যা সমাধানে স্থানীয়রা প্রশাসন বরাবরে অভিযোগ করলেও কোনো রকম উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন।
কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ নামে একটি আইন করার মাধ্যমে সরকার চেষ্টা করছে এ সমস্যা সমাধানে। সরকার বলছে, 'অকৃষক' কোনো ব্যক্তি কৃষিজমি কিনতে বা ভোগদখল করতে পারবে না, জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না, কৃষিজমিতে বসতবাড়ি, ইটখোলা, শিল্প-কলকারখানা এবং অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা তৈরি করতে পারবে না ইত্যাদি। কিন্তু এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে স্বয়ং সরকার এবং দলীয়রাই লিজ দিয়ে-নিয়ে পরিবেশ ও জনসাধারণের বারোটা বাজাচ্ছে। আমরা মনে করি, এই আইন বাস্তবায়নে সরকারকে আরও বেশি আন্তরিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
ৎ গৌরীপুর, দাউদকান্দি, কুমিল্লা
 

No comments

Powered by Blogger.