টিপাইমুখ সমীক্ষাদল এখনো করেনি ভারত-আস্থা বাড়াতে দিল্লির 'সফর' উদ্যোগ by আশরাফুল হক রাজীব ও মেহেদী হাসান

টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে যৌথ সমীক্ষার জন্য এখনো দল গঠন করেনি ভারত। বাংলাদেশ কয়েক মাস আগেই এ দল গঠন করেছে এবং আশা করছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সম্ভাব্য বৈঠকের আগেই দিল্লি তার দল গঠন করে ঢাকাকে জানাবে।


এদিকে টিপাইমুখ নিয়ে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলকে প্রকল্প এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে ভারত। যৌথ সমীক্ষাদলের বৈঠকের আগে এ সফর টিপাইমুখ নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে নেতিবাচক ধারণা দূর করতে সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন।
ভারতের মণিপুর রাজ্যের টিপাইমুখ নদীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পকে ঘিরে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। ওই প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে ভারত আশ্বাস দিলেও এ দেশের পরিবেশবাদীরা শঙ্কিত। গত মাসে দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে প্রথম যৌথ পরামর্শক সভায় যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) আওতায় টিপাইমুখ নিয়ে একটি দল (সাবগ্রুপ) গঠনের ব্যাপারে উভয় পক্ষ একমত হয়। এরও আগে ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ জেআরসি সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেনকে আহ্বায়ক করে যৌথ সমীক্ষার জন্য ১০ সদস্যের দল গঠন ও কাজের পরিধি ঠিক করে।
এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারত এখনো যৌথ সমীক্ষাদল গঠন করেনি। অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দিল্লিতে টিপাইমুখ নিয়ে যৌথ সমীক্ষাদলের প্রথম বৈঠকটি হতে পারে। বাংলাদেশ আশা করছে, বৈঠকের আগেই ভারত তাদের দল চূড়ান্ত করবে। জানা গেছে, প্রথম বৈঠকে সমীক্ষাদলের কার্যপরিধি চূড়ান্ত করা হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরবে।
পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'টিপাইমুখে যৌথ সমীক্ষার জন্য এখনো ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নাম জানা যায়নি। তবে যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে তারা আন্তরিক। দল গঠন শেষে শিগগিরই বৈঠক হবে বলে আমরা আশা করছি। টিপাইমুখ প্রকল্পে যৌথ সমীক্ষার জন্য দুই দেশের প্রতিনিধিদল বৈঠক করবে। যৌথ সমীক্ষার পরে এ প্রকল্পের লাভ-ক্ষতি জানা যাবে।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, টিপাইমুখ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের নদ-নদীর পানিপ্রবাহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ার পাশাপাশি ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। যৌথ সমীক্ষাদলের জন্য বাংলাদেশ যে কাজের পরিধির প্রস্তাব করেছে তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ, তা কাটিয়ে ওঠার উপায় নির্ধারণ ছাড়াও লাভের সম্ভাবনাগুলো পর্যালোচনা করবে। ওই সমীক্ষার জন্য সময় ধরা হয়েছে দুই বছর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারত কখনোই বলেনি যে টিপাইমুখ প্রকল্প বন্ধ হবে। বরং তারা বারবার জোর দিয়ে বলেছে, এতে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। অথচ বিশেষজ্ঞরা ক্ষতির জোর আশঙ্কা করছেন। একই আশঙ্কা ভারতের পরিবেশবাদীদেরও আছে।
তিনি বলেন, টিপাইমুখ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিবেদনের মুখে এর আগে একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলকে হেলিকপ্টারে করে টিপাইমুখ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্যোগপ্রবণ আবহাওয়ার কারণে দলটি সেখানে নামতেই পারেনি। এবারও সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদলকে ভারত টিপাইমুখ এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে তাঁদের ধারণা দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, এ ধরনের সফর অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু পাশাপাশি আস্থা বৃদ্ধির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলোও সচল করা উচিত। টিপাইমুখ অনেক পুরনো ইস্যু। দুই দেশের মধ্যে অনেক যোগাযোগের পর ভারত যৌথ সমীক্ষার ব্যাপারে রাজি হওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেও এখনো দল গঠন করেনি। খুব দ্রুত যৌথ সমীক্ষার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবেন টিপাইমুখ প্রকল্পে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে, না লাভ হবে।
ওই কূটনীতিক বলেন, পানি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু। তিস্তার পানিবণ্টনের মতো বহুল প্রত্যাশিত চুক্তি যেমন আটকে আছে, তেমনি তা নিয়ে আলোচনার জন্য জেআরসির বৈঠকের জন্য চাপ দিয়েও ভারতের কাছ থেকে সাড়া মিলছে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়েরও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.