টুকিটাকি-এবার জৈবিক প্রযুক্তির মেমোরি

মার্কিন গবেষকেরা জীবিত কোষে ডিএনএর ক্ষুদ্র অংশকে পুনরায় লেখার উপযোগী তথ্য বা বিট হিসেবে ব্যবহার করার উপায় প্রতিপাদন করেছেন। এ গবেষণায় তাঁরা ডিএনএ বিটকে উল্টে দেওয়ার জন্য ভাইরাস থেকে অভিযোজিত দুটি প্রোটিনকে ব্যবহার করেছেন।


ধরা যাক, একটি ক্রোমোজোমে অবস্থিত ডিএনএ অণুর একটি শিকলের একটি ক্ষুদ্র অংশের ক্রম হলো AAATCTCAGGCCTAAT. এখন যদি এর মধ্যকার CTCAG অংশটি (অর্থাৎ প্রদত্ত ক্রমের পঞ্চম থেকে নবম বেস পর্যন্ত) উল্টে দেওয়া যায়, তবে ক্রমটি হবে AAATGACTCGCCTAAT যা অবশ্যই আগের ক্রম থেকে ভিন্ন। এই দ্বিতীয় ক্রমটির ওই নির্দিষ্ট অংশটি উল্টে দিলে আবার আদি ক্রমটি পাওয়া যাবে। ওপরের উদাহরণে পঞ্চম থেকে নবম বেস পর্যন্ত উল্লিখিত ক্রমটি দুই বিপরীতক্রমে সাজানোই হলো তার দুটি সম্ভাব্য অবস্থা। এভাবে একটি ক্রম সম্ভাব্য দুটি অবস্থায় থাকতে পারে এবং ইচ্ছামতো তাদের এক অবস্থা থেকে অপর অবস্থায় পরিবর্তনের চাবিকাঠি বিজ্ঞানীদের হাতের মুঠোয়। তাই ডিএনএর এমন ক্ষুদ্র অংশগুলোকে বাইনারি বিট হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। যদিও গবেষণাটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এর অগ্রগতি ভবিষ্যতে জৈবিক প্রক্রিয়ায় গণনা ও স্মৃতি সংরক্ষণের পথ সুগম করতে পারে। ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের একটি দল জানিয়েছে, এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বয়োবৃদ্ধি ও ক্যানসার গবেষণায় ব্যবহার করা যেতে পারে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব প্রকৌশল বিভাগের গবেষণা দলটি তিন বছর ধরে জৈবিক প্রণালিতে সূক্ষ্মসংগতি এনে বিটের মান পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছে। দুটি ভিন্ন প্রোটিনের উপস্থিতিতে ডিএনএর ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে বিট তৈরি করা হয়, যেন তা ইকোলাই ব্যাকটেরিয়ামের ক্রোমোজোমের মাঝে দুটি দিকের কোনো একটিকে নির্দেশ করে। ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে এমন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া থেকে এ দুটি প্রোটিন সংগ্রহ করা হয়। ৭৫০ বারের বেশি করার চেষ্টার পর গবেষকেরা প্রোটিনের সঠিক সমন্বয় খুঁজে পেয়েছেন, যার মাধ্যমে এখন তথ্যের কোনো ক্ষতি না করে ইচ্ছামতো অনেকবার বিট উল্টানো যাচ্ছে। ডিএনএতে শুধু তথ্য রাইট করা নয়, বিট উল্টানো নাকি সোজা কোন অবস্থায় আছে, তা রিড করারও উপায় বের করেছে মার্কিন বিজ্ঞানীদের এই দল। এখন তাঁরা একটি সম্পূর্ণ ‘বাইট’ তৈরি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আটটি একই ধরনের বিটকে সমন্বয় করে একটি বাইট তৈরি করা হয়। এ গবেষণার লেখক ড্রিউ অ্যান্ডি জানিয়েছেন, এ গবেষণার প্রয়োগগুলো অদূর ভবিষ্যতে মানবজাতির সামনে আসবে। ড্রিউ অ্যান্ডি বলেন, ‘জিনগত তথ্য সংগ্রহের উপায় কীভাবে কার্যকরি হবে তা নিয়ে আমি মোটেও উদ্বিগ্ন নই, বরং যত দ্রুত সম্ভব scalable জৈবিক বিট তৈরি করার কাজে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। তারপর আমরা এগুলোকে আমাদের বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দেব যেন তাঁরা এদের বিশ্ববাসীর কল্যাণে কাজে লাগাতে পারেন।’
ব্যাকটেরিয়াকে ৯০ বার দ্বিগুণ করার পর ডিএনএর ক্ষুদ্র অংশগুলো তাদের সঠিক ক্রম বজায় রাখে। সুতরাং, নিশ্চিতভাবেই ডিএনএ বিটকে ক্যানসার কোষের বার্তাবাহক বিট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। দেখা যাক, জৈব ব্যবস্থার মাঝে গণনার জন্য গবেষকদের এই গণনীয় উপাদানগুলোর দীর্ঘমেয়াদি একত্রকরণের চেষ্টা তথ্যপ্রযুক্তি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানকে কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যায়।
সুদীপ্ত দেবনাথ

No comments

Powered by Blogger.