চাই সঠিক পরিকল্পনা ও কৃচ্ছ্রসাধন-সরকারি খাতের অপচয়

নয়াদিল্লি থেকে এএফপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্দেশ্যে পাঁচতারা হোটেলে সরকারি বৈঠক নিষিদ্ধ, নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং সরকারি অফিসে নতুন পদ সৃষ্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।


অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ভারতের কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আমাদের নীতিনির্ধারকদেরও ভেবে দেখার অবকাশ আছে বলে মনে করি।
ভারত শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। কয়েক বছর ধরে দেশটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে থাকলেও চলতি অর্থবছর সেই ধারা অক্ষুণ্ন থাকেনি। ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। ভারত সরকার যখন বাজেটের ঘাটতি লাঘবে নানামুখী কৃচ্ছ্রসাধনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তখন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনেরা কী করছেন?
এ মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি না হলেও এর ভিত সুদৃঢ় বলা যাবে না। বিপুল অঙ্কের বাজেট ঘাটতি সরকার সামাল দিচ্ছে ব্যাংকিং খাত থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে। এটি মোটেই সুস্থতার লক্ষণ নয়। সরকারি ব্যয় কমাতে ভারত যেখানে পাঁচতারা হোটেলে অনুষ্ঠান আয়োজন নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে বাংলাদেশে অনুরূপ কর্মসূচি পাঁচতারা হোটেলে করা বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। একই কথা প্রযোজ্য মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রেও। যেকোনো প্রকল্পের নামে নতুন গাড়ি কেনা কিংবা রাজনৈতিক বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের দায়টা দেশবাসীকেই নিতে হয়। অতএব, মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ জরুরি। আর কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি শুরু করতে হবে শীর্ষ পর্যায় থেকেই। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কৃচ্ছ্রসাধন করলে অধস্তনেরাও তাঁদের অনুসরণ করবেন। যে বিদেশ সফর বৃহত্তর জনগণের মঙ্গল আনবে না, তা বাদ দেওয়াই শ্রেয়। একই কথা প্রযোজ্য লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রেও। নতুন লোকবল নিয়োগের আগে বিদ্যমান জনশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সরকারের ভুল নীতিও অনেক সময় বাজেট ঘাটতির বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের প্রয়োজনীয়তা ছিল কি না, সেই বিতর্কে আমরা যাব না। কিন্তু এ খাতে যে হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হলো, তার বিনিময়ে জনগণ কী পেয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার নিশ্চয়ই তাদের আছে।
যথাসময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়াও একটি বড় সমস্যা। কোনো বছরই এডিপি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ভারত সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আমাদের অর্থনীতির গতি সচল রাখতে তা যে আরও জরুরি, সেই কথাটিই সরকারের কর্তাব্যক্তিদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আশা করি, আগামী অর্থবছরের বাজেটে এর প্রতিফলন থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.