স্পেন-ইতিহাসের হাতছানি by রাজীব হাসান

গোধূলির আকাশের মতো লাজরাঙা সারা কার্বোনেরোকে দেখার জন্য আবারও প্রস্তুত হন। প্রস্তুতি নিন সেই রোমান্টিক দৃশ্যের জন্যও: কার্বোনেরোর গোলাপি সিক্ত ঠোঁটে ইকার ক্যাসিয়াসের প্রগাঢ় চুম্বন! ১ জুলাই ২০১২। কিয়েভের অলিম্পিক স্টেডিয়াম। অধরা ইউরোপ সেরার ট্রফিটি জেতার ইংলিশদের ব্যাকুল স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দিল স্পেন।


ফাইনালে ইংলিশদের হারাল ২-১ গোলে। এরপর মঞ্চস্থ হলো আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইদানীংকালের সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য: ‘ভিভা এসপানা, ভামোস এসপানা’ স্লোগানে প্রকম্পিত গ্যালারিকে সাক্ষী রেখে, অজস্র কনফেত্তির ওড়াউড়ির মধ্যে চকচকে ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরলেন ক্যাসিয়াস।
শিরোপা নিয়ে উল্লাস, ল্যাপ অব অনারসহ যাবতীয় অনানুষ্ঠানিক আনুষ্ঠানিকতা সেরে এক ফাঁকে স্পেন অধিনায়ক এলেন সুনয়না টিভি সাংবাদিক কার্বোনেরোকে সাক্ষাৎকার দিতে। পৃথিবীর ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত, কিন্তু রোমান্টিকতম সাক্ষাৎকার শেষে প্রেয়সী কার্বোনেরোর ঠোঁটে ক্যাসিয়াসের সেই চুম্বন! ২০১০ বিশ্বকাপ জেতার পরপর সারা বিশ্বের কৌতূহলী চোখের সামনে চুমু এঁকে দিয়েছেন। টানা দ্বিতীয় ইউরো জেতার আনন্দে আরেকটি চুম্বন দিতে দোষ কোথায়!
ওপরের সবকিছুই কল্পনা। কিন্তু এই দৃশ্যাবলির মঞ্চায়নের সম্ভাবনা কিন্তু অল্প নয়। কল্পনার আলপনায় আঁকা শুধু একটি নাম—স্পেন!
চু-য়া-ল্লি-শটি বছর ধরে একটি শিরোপার জন্য স্প্যানিয়ার্ডদের বুভুক্ষ, চাতক অপেক্ষার অবসান হওয়ার পর থেকেই যেন ফুটবল-বিধাতা পাত্র উছলিয়া সাফল্য দান করে চলেছে স্পেনকে। ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো—এই শিরোপাত্রয়ী জেতার সমুজ্জ্বল সম্ভাবনার সামনেও দাঁড়িয়ে ভিসেন্তে দেল বস্কের দল।
গত দুই ট্রফি জয়ের পেছনে স্পেনের সাফল্য কাঠামোর মেরুদণ্ড হয়েছিল বার্সেলোনা। ৪৪ বছরের অপেক্ষা শেষে ২০০৮-এর ইউরো জয়ের পেছনে মূল অবদান রাখা ডেভিড ভিয়া অবশ্য তখন ভ্যালেন্সিয়াতেই খেলতেন। তবে গত বিশ্বকাপজয়ী স্পেন একাদশের ৮ জনই ছিলেন বার্সার। ভিয়াও এদের অন্যতম। কিন্তু ২০০৮ ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতাই এবার নেই। চোট থেকে প্রায় সেরে উঠলেও ইউরোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত মনে করেননি স্পেনের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
তার পরও কিন্তু এবারও স্পেন দলে বার্সার সাত খেলোয়াড়। যাঁদের ছয়জনই থাকতে পারেন একাদশে। রক্ষণে ‘শত্রুতা’ ভুলে রামোস-আলবিওলদের সঙ্গে কাঁধ মেলাবেন পিকে। মাঝমাঠে ইনিয়েস্তা-জাভিদের সঙ্গে জাবি আলোনসো। আক্রমণে অবশ্য রিয়াল-বার্সার এমন যুথবদ্ধতা দেখার সুযোগ হচ্ছে না। বার্সার প্রতিনিধি হিসেবে পেদ্রো সেখানে থাকলেও বাকি তিন ফরোয়ার্ড চেলসি (তোরেস), সেভিয়া (নেগ্রেদো) আর বিলবাওয়ের (লরেন্তে)।
১০ জুন ইতালির সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে শুরু করবে বাছাইপর্বে সবগুলো ম্যাচ জিতে আসা স্পেন। আয়ারল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গ্রুপ পর্বে তাদের বাকি দুই ম্যাচ ১৪ ও ১৮ জুন।

চূড়ান্তপর্ব
১২ (১৯৬০, ১৯৬৪, ১৯৬৮, ১৯৭৬,
১৯৮০, ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০০০,
২০০৪, ২০০৮, ২০১২)
সেরা পারফরম্যান্স: চ্যাম্পিয়ন (১৯৬৪, ২০০৮), রানার্সআপ (১৯৮৪), কোয়ার্টার ফাইনাল (১৯৬০, ১৯৬৮, ১৯৭৬, ১৯৯৬, ২০০০)
বড় জয়: ৪-১, রাশিয়া (২০০৮)
বড় পরাজয়: ০-২, জার্মানি (১৯৮৮), ফ্রান্স (১৯৮৪)
সবচেয়ে বেশি গোল: ১০, রাফায়েল গোরদিলো
ইউরো রেকর্ড
ম্যাচ জয় ড্র হার স্ব./বি.
৩০ ১৩ ৯ ৮ ৩৮/৩১

 ৯ গোল নিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি। সব কটি গোলই এক আসরে— ১৯৮৪-এর টুর্নামেন্টে।

 ম্যাচের জয়ের হিসাবে সাফল্যের সবচেয়ে বেশি হল্যান্ডের— ৫৩.১%। শতকরা ৫২.২ ভাগ সাফল্য নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে পর্তুগাল। যৌথভাবে এই তালিকার তৃতীয় স্থানে জার্মানি ও ফ্রান্স (৫০%)।

No comments

Powered by Blogger.