মুবারকের যাবজ্জীবন

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন দেশটির আদালত। গত বছর মুবারকবিরোধী বিক্ষোভের সময় নিরস্ত্র জনতাকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যার দায়ে তাঁকে এ দণ্ড দেওয়া হলো। গতকাল শনিবার রাজধানী কায়রোর পুলিশ একাডেমীর ভেতরে স্থাপিত বিশেষ আদালতের বিচারক আহমেদ রিফাত এ রায় দেন।


একই মামলায় মুবারক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাবিব আল আদলিকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদলির সহযোগী পুলিশের সাবেক ছয় কমান্ডারকে খালাস দেওয়া হয়। দুর্নীতির পৃথক একটি মামলায় মুবারক ও তাঁর দুই ছেলে গামাল ও আলাকে খালাস দেন আদালত।
২০১১ সালের আরব বসন্তে পতন হওয়া রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে মুবারকই প্রথম ব্যক্তি যাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন মোবারকের আইনজীবীরা।
রায় ঘোষণার সময় গতকাল মোবারক ও তাঁর দুই ছেলে এবং সাবেক মন্ত্রী আদলি আদালতে স্থাপিত বিশেষ খাঁচায় উপস্থিত ছিলেন। গত বছর বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর সময় থেকেই অসুস্থ মোবারককে রাজধানীর বাইরে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল সেন্টারে রাখা হয়। গতকাল তাঁকে হেলিকপ্টারে করে রাজধানীতে আনা হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতের কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। রায় শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে বলা হয়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৮৪ বছর বয়সী মোবারককে তোরা কারাগারের হাসপাতালে রাখা হতে পারে।
মোবারককে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া রায় ঘোষণার পর পরই নিহতদের স্বজনরা আদালত চত্বরে উল্লাসে ফেটে পড়েন। তবে যখন তাঁরা জানতে পারেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগীদের খালাস দেওয়া হয়েছে তখন তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
তবে বিচারক আহমেদ রিফাত রায় ঘোষণার সময় বলেন, ১০ মাস ধরে চলা এ বিচারপ্রক্রিয়া পুরোপুরি নিরপেক্ষ হয়েছে। মোবারকের শাসনামলকে তিনি '৩০ বছরের অন্ধকার' বলে আখ্যা দেন। সেই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের তিনি 'জাতির সন্তান' উল্লেখ করে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রশংসা করেন।
রায় ঘোষণা করে বিচারক রিফাত বলেন, মোবারক ও আদলি নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো থেকে তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।
হোসনি মোবারক ১৯৮১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মিসর শাসন করেন। গত বছর মোবারকবিরোধী বিক্ষোভের সময় ৮৫০ জনের মতো বিক্ষোভকারীকে হত্যা করা হয়। তবে ওই বিক্ষোভের মুখেই শেষ পর্যন্ত তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।
ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে মোবারকের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বলে ধরে নিয়েছিল দেশবাসী। তবে আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিলেন। সমালোচকরা বলছেন, মামলার তদন্তে ত্রুটি ছিল। এমনকি আইনজীবীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আপিল করে মোবারক ও আদলি এই সাজা থেকেও রেহাই পেয়ে যেতে পারেন। সূত্র : বিবিসি ও এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.