বসবাসের অনুপযোগী ঢাকা-প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা ও বিকেন্দ্রীকরণ

রাজধানী ঢাকা প্রায় দেড় কোটি মানুষের চাপ সইতে অপারগ। পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে অতিরিক্ত মানুষ, কলকারখানা, গাড়ি, আবর্জনা আর আবাসিক ভবনের অধিক ঘনত্বের কারণে। আধুনিক যুগের এই শহরও তাই মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে দিনের পর দিন।


কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় এ সমস্যা সমাধানে? মোটামুটি একই রকম সুপারিশ আসে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে। আগেও যেসব আশঙ্কা করা হয়েছে, সেগুলোরই গুরুত্ব বৃদ্ধি করে পরিবেশবাদীরা সোচ্চার আছেন এখনো। মানুষ, যানবাহন, কলকারখানা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের সঙ্গে মহানগরীর আয়তনের সামঞ্জস্য না থাকার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে দেশকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, একমাত্র রাজধানীর যানজটের কারণে বছরে ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যে জন্য দেশকে ২০ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়। তার সঙ্গে যুক্ত আছে মানুষের দুর্ভোগ।
অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো কাটিয়ে তোলা যায় সদিচ্ছা আর সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে। আজকে ঢাকা শহরের ভেতরে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে গার্মেন্ট। তেজগাঁও শিল্প এলাকা এখনো মানব বসতির জন্য ক্ষতির অন্যতম কারণ। কয়েক হাজার ক্ষুদ্র্র কারখানা এই নগরীতে নিত্য পরিবেশ দূষণ করছে। জীবন বিষিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী ট্যানারি শিল্পকে সরানোর পরিকল্পনা ঝুলে আছে ব্যবসায়ী এবং সরকারের অবহেলায়। মেট্রোরেল কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেমে আছে সরকারের আন্তরিকতার অভাবে। সহজে অধিক মানুষ পরিবহনে সক্ষম রেলের উন্নয়ন নিয়ে ভাবছে না কেউ। রাজধানী থেকে মানুষের চাপ কমানোর জন্য একসময় ঢাকার বাইরে একাধিক জায়গায় হাইকোর্ট স্থাপন করা হয়েছিল, তাও আবার কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে ঢাকায়। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভালো চিকিৎসাকেন্দ্র প্রভৃতি ঢাকার বাইরে কিছু কিছু হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। দীর্ঘদিন ধরেই এ সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ সরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবে পাঁচ বছরের এই লোকসানের পরিমাণ টাকায় যদি হিসাব করা হয়, তাহলে দেশ প্রতিবছর ২০ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। গার্মেন্ট শিল্পকে অতি দ্রুত ঢাকা শহরের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। ঢাকার বাইরে অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীগুলোকে কার্যকর করতে হবে পরিকল্পিতভাবে। ঢাকার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি জেলা ও উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, অফিস-আদালতকে জেলা ও উপজেলায় বিকেন্দ্রীকরণ, আনুষঙ্গিক অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি, চিকিৎসা ও শিক্ষা সুবিধাকে রাজধানীর বাইরে সম্প্রসারণের মাধ্যমে ঢাকা শহরের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা সম্ভব। আজকে জনসংখ্যার চাপে ন্যুব্জ ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী করতে হলে ঢাকার বাইরে ঢাকার সুযোগ-সুবিধাগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.