সিরিয়ায় আত্মঘাতী হামলা-বিদ্রোহের নতুন অধ্যায় শুরুর সংকেত?

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে শুক্রবারের জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবিরোধী আন্দোলনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে। এ মন্তব্য বিশ্লেষকদের। সরকারবিরোধীরা অবশ্য ওই হামলার মদদদাতা হিসেবে সরকারের নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনীর দিকেই সন্দেহের আঙুল তুলেছে। দামেস্কে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যালয়ে গত শুক্রবার পৃথক দুটি হামলায় ৪০ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। গতকাল গণমাধ্যমের খবরে


প্রথমে বলা হয়, ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে সিরীয় মুসলিম ব্রাদারহুড। তবে মুসলিম ব্রাদারহুড পরে এক বিবৃতিতে জানায়, ইন্টারনেটে প্রকাশিত ওই বিবৃতি তাদের নয়। তারা ওই হামলার সঙ্গে জড়িত নয়।
দামেস্কে বোমা হামলাা ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। তিনি সিরিয়ায় রক্তপাত অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানান। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সব ধরনের সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডই আন্তর্জাতিকভাবে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পথে বড় হুমকি।
সিরিয়ার প্রধান বিরোধী দল সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের মুখপাত্র বাসমা কাদমানি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, সরকারই ওই হামলার সংগঠক হতে পারে।’ সরকারবিরোধীদের এ দাবির পেছনে যুক্তি হচ্ছে, আরব লিগের পর্যবেক্ষকদের অগ্রবর্তী দলটি গত বৃহস্পতিবার দামেস্কে পৌঁছেছে। কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে পর্যবেক্ষকদের বোঝাতে চায় যে সিরিয়া সহিংস হামলার শিকার। আর এটা প্রমাণ করতে সরকার রাজধানীতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতেও রাজি।
তবে আসাদবিরোধীদের এই তত্ত্ব মানতে নারাজ অধিকাংশ বিশ্লেষক। যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিয়া বিশেষজ্ঞ জোসুয়া ল্যান্ডিস বলেন, ‘সরকার যে এটা করবে, তার পেছনে কোনো যুক্তি আছে বলে আমি মনে করি না। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইবে। তারা বিরোধীদের বর্বর হিসেবে চিত্রায়িত করতে চাইবে তা ঠিক, তবে জনগণ যাতে খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত না হয়, সেটা সামাল দেওয়া নিয়েই তারা বেশি উদ্বিগ্ন।’
আরব লিগের পর্যবেক্ষকদের অনুমতি না দেওয়ার ব্যাপারে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অচল ছিল দামেস্ক। তবে শেষমেশ তাঁদের অনুমতি দেয় সরকার। আরব পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিরিয়ার সরকার সহিংসতা বন্ধে আগ্রহী কি না, তা সরেজমিনে দেখবেন ওই পর্যবেক্ষকেরা। আরব লিগের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে রেহাই পেতে সিরিয়ার সরকারকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তারা আরব লিগের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজি।
বিশ্লেষকদের মতে, এ রকম একটি পরিস্থিতিতে খোদ রাজধানীতে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যালয় লক্ষ্য করে বোমা হামলার ঘটনা দেশটির জন্য অপমানজনক।
আবার আসাদ সরকারের বর্ণনার সঙ্গেও ওই বোমা হামলা ঘটনার সামঞ্জস্য পাওয়া যেতে পারে। সরকারের দাবি, দেশে নয় মাস ধরে চলমান সহিংসতায় বিদেশি মদদপুষ্ট ইসলামি সন্ত্রাসীদের হাত রয়েছে। রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.