বিআইপির সেমিনারে বক্তারা-অপরিকল্পিত নগরায়ণ জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে

পরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে রাজধানী ঢাকার জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে। বাতাসে ক্রমশ কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের নিঃসরণ বাড়ছে। বাড়ছে হূদেরাগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা। রাস্তা বাড়ানোর উপায় নেই, যা আছে তার উল্লেখযোগ্য অংশ হকার ও বেআইনি পার্কিংয়ের দখলে। খোলা জায়গা নেই। কেটে ফেলা হচ্ছে বন-গাছপালা। গতকাল শনিবার রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ার মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স


(বিআইপি) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রসঙ্গে এসব সমস্যা তুলে ধরেন। বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস উপলক্ষে ‘গোয়িং পাবলিক: স্পেসেস ইন আওয়ার কমিউনিটিস’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইপির সভাপতি সারওয়ার জাহান।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, কলকারখানা থেকে নির্গত ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, জিংক ইত্যাদি ভারী রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করছে। এসব শরীরের খাদ্যনালি, লিভার, হূদেরাগ, কিডনিতে নানা জটিলতা তৈরি করছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালাম। তিনি তাঁর প্রবন্ধে নগরজীবনে খোলা জায়গার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া বেদখল হয়ে যাওয়া উন্মুক্ত স্থান, যেমন: পার্ক, খোলা মাঠ, জলাশয় পুনরুদ্ধার করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে দ্রুত স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।
সেমিনারের ‘নগর জলবায়ু নিয়ে সচেতনতা’ শীর্ষক দ্বিতীয় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম নূরুল হুদা। তিনি জানান, বাংলাদেশের পাঁচটি শহর: ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও খুলনা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকাগুলোর মধ্যে যথাক্রমে প্রথম, পঞ্চম, ২৪তম, ৩৭তম ও ৮০তম। আর ঘনবসতি এসব এলাকার মধ্যে প্রয়োজনীয় রাস্তা নেই। আছে প্রচুর গাড়ি, আবর্জনা ও কলকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ। এর ফলে অধিক পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। তাঁরা বলেন, আবর্জনাকে সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। এ থেকে অর্থ উপার্জন করে দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখা যায়। তাঁরা আবর্জনা থেকে সার, বিদ্যুৎ তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থান সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন।
আলোচনায় অংশ নেন বিআইপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শওকত আলী খান, সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক গোলাম রহমান প্রমুখ। সেমিনারে উপস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনাবিদেরা নিজেদের সুপারিশ তুলে ধরেন।

No comments

Powered by Blogger.