শুভ বড়দিন-খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন

জ বড়দিন। দুই সহস্রাধিক বছর আগে এই দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক মহামানব যিশু জেরুজালেমের কাছে বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। বিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা আজ উৎসবমুখর পরিবেশে পবিত্র এই দিনটি পালন করবে। শুধু আনন্দ-উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না এ দিনের কর্মসূচি, যিশুখ্রিস্টের শান্তির বাণীও ছড়িয়ে দেওয়া হবে মানুষের মধ্যে। মানবজাতির ত্রাতা বা উদ্ধারকর্তা হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়েছিল


যিশুখ্রিস্টের। হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অত্যাচার ও পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষকে সুপথে আনার জন্যই যিশু আবির্ভূত হয়েছিলেন। যিশুর জন্মদিন তাই শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য নয়, পুরো মানবজাতির জীবনেই উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যিশুখ্রিস্ট সারা জীবন মানব সমাজে আর্তমানবতার সেবা, ত্যাগ ও শান্তির আদর্শ প্রচার করেছেন। হিংসা-দ্বেষ ভুলে তিনি সবাইকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খ্রিষ্টীয় মতে, যিশু ঈশ্বরের পুত্র এবং জগতের সব মানুষের ত্রাণকর্তা। শাসকের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষ নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি ওই সময়ের শাসকের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে জীবন দিতে হয়েছিল।
যিশুখ্রিস্ট পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের দেখিয়েছেন আলোকিত পথ। তিনি বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষকে দিয়েছেন বাঁচার অনুপ্রেরণা। মানবজাতিকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তিনি ফেরাতে চেয়েছিলেন মমতা, ভালোবাসা ও ক্ষমাশীলতার পথে। মানবসেবার অন্যতম আদর্শ তিনি। মুসলমানদের কাছেও যিশুখ্রিস্ট গভীর শ্রদ্ধার পাত্র। মুসলমানদের কাছে তিনি হজরত ঈসা (আ.) নামে পরিচিত। যিশুর পথ ছিল সংযম, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার। মানুষের নৈতিক দৈন্যের কারণে সারা বিশ্বে আজ হিংসা, হানাহানি ও অশান্তি বেড়েই চলেছে। বড়দিনের বাণী এই দৈন্য ও সংকীর্ণতার ঊধর্ে্ব ওঠার জন্য। পৃথিবীজুড়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, যুদ্ধবিগ্রহ ও হিংসা-বিদ্বেষের এই যুগে যিশুর শিক্ষা অনুসরণীয়।
বড়দিনের উৎসব পালনের কিছু প্রথাগত নিয়ম থাকলেও পৃথিবীর নানা দেশে আঞ্চলিক সংস্কৃতি এই উৎসবকে প্রভাবিত করেছে। বড়দিনের উৎসবে অন্য দেশের মতো বুড়ো সান্তা ক্লজের উপস্থিতি বাংলাদেশেও দেখা যায়। তিনি সব সময় শিশুদের ভালোবাসেন এবং নানা রকম উপহার দেন। পৃথিবীর অন্য সব দেশের খ্রিস্টানদের মতো এবার বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও দিনটি যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে উদযাপন করবে। বাংলাদেশে বড়দিনের উৎসব কেবল শহরেই অনুষ্ঠিত হয় না, বরং তা শহরের বাইরে কিছু কিছু খ্রিস্টান অধ্যুষিত গ্রামগঞ্জেও আবেগ ও আনন্দময় পরিবেশে উদযাপিত হয়। প্রতিটি ধর্মেরই মূল বাণী হলো মানবতাবোধ। বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম ও আশার বাণী প্রচার করা হয়, তারও মূলে রয়েছে মানবতা। তবু ধর্মকে কেন্দ্র করে এই একবিংশ শতকেও কিছু মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত পরিলক্ষিত হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই এবারের বড়দিন প্রতিটি মানুষকে শান্তি, প্রেম ও সম্প্রীতির শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করুক_এটাই সবার কাম্য। পৃথিবী থেকে বিদায় নিক হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদের মতো নিকৃষ্ট সব চিন্তাধারা। আজ এই পবিত্র উৎসবের দিনে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ উৎসব সবার জন্য আনন্দময় হয়ে উঠুক। পৃথিবীজুড়ে ভালোবাসার বিস্তার ঘটুক, শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরে আসুক।
শুভ বড়দিন।

No comments

Powered by Blogger.