এখন অভিনন্দনের ডালি

পেনিনসুলা হোটেলের সামনে ভিড় লেগে থাকল সারা দিনই। কেউ আসছে ফুলের তোড়া নিয়ে, কারও হাতে মিষ্টি। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীই বেশি। দুপুরের দিকে ব্যান্ড বাজাতে বাজাতে একটা বিজয় মিছিলও চলে গেল হোটেলের সামনের রাস্তা দিয়ে। আসছেন কোনো সাংসদের প্রতিনিধি কিংবা অতি সাধারণ কোনো ক্রিকেট-ভক্ত। হূদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ করে দিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের জানাতে হবে অভিনন্দন!
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বজয় করে ফেলেনি। তবে ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার পরের ম্যাচেই ইংল্যান্ড-বধ অসাধারণ কিছু তো বটেই! টিম হোটেলের সামনের ভিড়টা সে কারণেই। অসাধারণ এই উপহার যাঁরা দিলেন, কালকের দিনটা তাঁরা কাটালেন খুবই সাদামাটাভাবে। ভক্ত-সমর্থকদের অভিনন্দন গ্রহণ করতে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ছাড়াও দু-চারজন ক্রিকেটারকে হোটেলের লবিতে আসতে হয়েছে। নইলে ছুটির দিনে হোটেল থেকে বের হওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা খুবই কম। বিকালে দল বেঁধে অনেকের ফয়ে’স লেকে ঘুরতে যাওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের আগেই সে পরিকল্পনা বাতিল। জয়ের দুই নায়ক মাহমুদউল্লাহ আর শফিউল ইসলাম একটা সংবাদ সম্মেলন করলেন, তাও হোটেলেই।
আয়েশে গা ভাসিয়ে একদমই নিজের মতো করে কাটানো দিনটাতে উড়ে বেড়াল জয়ের রেণু। স্বপ্নের মতো পাওয়া জয়টা যেন কালও বিশ্বাস হচ্ছিল না কারও! সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবাল নিজের মাঠে পাওয়া এই জয়টাকে উঁচিয়ে ধরলেন আর সব জয়ের ওপরে, ‘এটাই আমাদের সেরা জয়। এ রকম পরিস্থিতিতে ছোট দলের বিপক্ষে আমরা জিতেছি, কিন্তু ইংল্যান্ডের মতো বড় দলের বিপক্ষে এটা খুবই কঠিন কাজ।’
সাকিবের মতো তামিমেরও একটা পর্যায়ে বিশ্বাস হয়নি বাংলাদেশ জিতবে। ম্যাচের শেষ দিকে দুজনে কথা বলছিলেন ড্রেসিংরুমের ভেতরে। কে কীভাবে আউট হলেন, ব্যক্তিগত ব্যাপার-স্যাপার—ইত্যাদি বিচ্ছিন্ন বিষয়ে আলোচনা। যে জায়গায় কথা হচ্ছিল, সেখান থেকে টেলিভিশনেও ভালোভাবে খেলা দেখা যাচ্ছিল না। তবে বাইরে থেকে দর্শকদের উল্লাস শুনে অনুমান করতে পারছিলেন কিছু একটা হচ্ছে। তামিম-সাকিবের গোপন কুসংস্কার নড়ে উঠল তখনই। কথা বন্ধ করে দিলে বা ড্রেসিংরুমের বারান্দায় গেলে যদি খেলা উল্টে যায়! যে যেভাবে ছিলেন, সেভাবেই কথা চালিয়ে গেলেন, কথার বিষয়ও বদলাল না। একটু পর কার কাছ থেকে যেন শুনলেন জিততে হলে আর মাত্র ৫ রান দরকার। তবু কেউ নড়লেন না। তামিম শুধু স্যান্ডেলে একটা পা গলিয়ে দিলেন, যেন ম্যাচ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাঠে দৌড়ে যেতে পারেন। তবে স্যান্ডেলে পা-টা এতই আলতো করে গলালেন, যেন স্যান্ডেলও টের না পায়! কুসংস্কার বলে, ম্যাচ উল্টে যাওয়ার শঙ্কা লুকিয়ে সেখানেও।
শফিউলের ২৪ বলে অপরাজিত ২৪ রানের দারুণ ভূমিকা বাংলাদেশের জয়ে। তামিম তরুণ এই পেসারকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করালেন স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের সামনে, ‘ও যেভাবে ব্যাট করেছে, সেটা শুধু লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের জন্যই নয়, দলের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের জন্যও একটা উদাহরণ। শফিউলের ব্যাটিং থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’
তবে কোচ জেমি সিডন্স শফিউলের ব্যাটিংয়ে মোটেও বিস্মিত নন, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই টেস্টে গত বছর একটা ফিফটি করেছে ও। স্লগ ওভারে যে শফিউল এ রকম ব্যাট করতে পারে, সেটা আমি জানি।’ কোচ বেশি খুশি হয়েছেন বরং মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং দেখে, ‘রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। অনেক নিয়ন্ত্রিত আর পরিণত মনে হয়েছে তাকে।’ সিডন্সের কাছে ইংল্যান্ডের ২২৫ রান অতিক্রমযোগ্য মনে হলেও সহজ মনে হয়নি কখনোই। ১৬৯ রানে ৮ উইকেট পড়ার পর তো মনে হয়েছে অসম্ভব, ‘হাতে মাত্র ২ উইকেট রেখে ৬০ রান—আমার মনে হয় বাংলাদেশের কেউই বিশ্বাস করেনি, এটা সম্ভব। শফিউল-রিয়াদের কারণেই শেষ পর্যন্ত হলো।’
আর হলো বলেই এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ফোনালাপের শুরুতে ‘কেমন আছেন’ প্রশ্নে বলতে পারলেন, ‘ভালো আছি...এক সপ্তাহ আগের চেয়ে অনেক ভালো।’

No comments

Powered by Blogger.