আন্নার হাতে অহিংসার ঝান্ডা

তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়িচালক। একসময় জীবনের প্রতি বিরক্ত হয়ে ভেবেছিলেন আত্মহত্যা করবেন। তবে সরে আসেন সেই পথ থেকে। তারপর মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। এ কাজেই তিনি খুঁজে পান জীবনের অর্থ। সাদা পোশাক আর মাথায় গান্ধী টুপি চাপানো আন্না হাজারে এখন সাধারণ ভারতীয়দের চোখের মণি। ভারতে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি এক সোচ্চার কণ্ঠ।
ভারতবর্ষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল মহাত্মা গান্ধীর হাতে। সেটা অনেক দিন আগের কথা। গান্ধীর যোগ্য অনুসারী আন্না হাজারের মাধ্যমে এ শতকে ভারতবাসী আবার দেখেছে অহিংস আন্দোলনের মহিমা। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই আন্না হাজারে নয়া সত্যাগ্রহের এক অবিসংবাদিত নেতা।
১৯৪০ সালে মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার র‌্যালেগান সিদ্ধি গ্রামে আন্না হাজারের জন্ম। ১৯৬৩ সালে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গাড়িচালক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। চাকরি ছেড়ে তিনি তাঁর গ্রামে চলে আসেন। মানুষের জন্য আন্না হাজারের সংগ্রামের সূচনা সেখানেই।
আন্না র‌্যালেগান সিদ্ধিকে একটি পরিবেশবান্ধব গ্রামে পরিণত করেছেন। তিনি কৃষকদের সংগঠিত করে পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংক নির্মাণ করেছেন। বৃক্ষে বৃক্ষে ভরে দিয়েছেন পুরো গ্রাম। আন্না হাজারের অক্লান্ত শ্রমে এক দশকেরও কম সময়ে র‌্যালেগান সিদ্ধি ভারতের একটি আদর্শ গ্রামে পরিণত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তিনি তাঁর গ্রামে মাদকবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি শিক্ষার বিস্তারেও আন্দোলন করেছেন। তিনি সমাজে প্রচলিত সংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। যৌতুক প্রথা, বিয়ের জমকালো আয়োজন ও শ্রেণীবিদ্বেষের বিরুদ্ধে আন্না হাজারের কণ্ঠ সব সময়ই সোচ্চার।
সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন করে আন্না সবার নজর কেড়েছেন। ভারতে লোকপাল নিয়োগের বিল পাস করার দাবিতে ৫ এপ্রিল তিনি দিল্লির যন্তর-মন্তরে আমরণ অনশন শুরু করেন। আন্নার কঠোর অহিংস আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার তাঁর দাবি মেনে নিয়ে লোকপাল বিলের খসড়া তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
আন্না হাজারে এর আগেও কয়েকবার অনশন করেছেন। মহারাষ্ট্র সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর অনশনের পরিপ্রেক্ষিতে একজন মন্ত্রী পদত্যাগে পর্যন্ত বাধ্য হন। ১৯৯৭ সালে মহারাষ্ট্রে তথ্য অধিকার আইন কার্যকর করার দাবিতে তিনি অনশন করেছেন। সরকার তাঁর দাবি মেনে নেওয়ার কথা বললেও পরে তার বাস্তবায়ন নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আবার অনশনে যান। একটানা ১২ দিন অনশন করার পর ২০০৩ সালে রাজ্য সরকার এ আইন পাস করে। তাঁর এ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে ভারত সরকার ২০০৫ সালে তথ্য অধিকার আইন পাস করে।
আন্না হাজারের সর্বশেষ এই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কিছু টিভি চ্যানেল দিল্লির যন্তর-মন্তরকে কায়রোর ‘তাহরির স্কয়ার’ বলে অভিহিত করেছে। আর কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম হাজারেকে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের যোগ্য ধারক বলে আখ্যা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.