‘আমি কি স্বপ্ন দেখছি!’

জাপানে এযাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর যে প্রলয়ংকরী সুনামি হয়ে গেল, সেটাকে অনেকে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাঁদের ধারণা, তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন আর না হয় সিনেমার কোনো কল্পকাহিনি অবলোকন করছেন। কয়েক মুহূর্তের তাণ্ডবে এত ক্ষতি হয় কীভাবে? এটা কি আদৌ সম্ভব?
চোখের সামনে নজিরবিহীন ধ্বংসলীলার বিশাল নজির থাকলেও অনেকের কাছে এটাকে স্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে। তাঁদেরই একজন হিটাচি শহরের বাসিন্দা ইচিরো সাকামাতোর। তিন দিন আগে ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকরী দুর্যোগকে বাস্তব বলে মেনে নিতে যেন তাঁর কষ্ট হচ্ছিল।
৫০ বছর বয়সী সাকামাতোর ভাষ্য হচ্ছে, ‘এটি কি স্বপ্ন? আমার মনে হচ্ছে, আমি কোনো সিনেমা দেখছি। আমি যখন একা থাকি তখন গায়ে চিমটি কাটি। স্বপ্ন দেখছি না বাস্তব অবস্থা অবলোকন করছি, সেটা জানার এ কাজটা করি।’
হিটাচির মতো একই অবস্থা ১০ লাখ লোকের শহর সেনদায়ির। এ শহরও সুনামির কারণে কাদায় একাকার হয়ে গেছে। উপড়ে পড়া গাছপালা আর ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরে একাকার হয়ে গেছে শহরটি। এখানেও চারদিকে ধ্বংসের ক্ষত। এ শহরের বাসিন্দা মিচিকো ইয়ামাদা বললেন, তাঁর ৭৫ বছরের জীবনে অনেক সুনামি দেখেছেন কিন্তু এমন এমন প্রলয়ংকরী সুনামি আর দেখেননি। তিনি জানালেন, এ সুনামিটি ছিল কালো। চোখের সামনে তিনি অনেক লোককে ভাসিয়ে নিতে দেখেছেন। তাঁর সামনেই গাড়িতে বসা ছিল এক বৃদ্ধ দম্পতি। সুনামি তাঁদের এক টানে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
ইয়ামাদার গ্রামের ধ্বংসস্তূপ থেকে অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কিয়োডো নিউজের খবর অনুসারে সুনামিতে ওসুচি নামের ওই গ্রামের পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
ফুকোশিমা শহরেও চলছে উদ্ধার তৎপরতা। সেখানে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ ভাসমান একটি ঘরের চালা ধরে কোনোমতে বেঁচে ছিলেন। উদ্ধারকর্মীরা পরে তাঁকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধার করেন। উপকূলসংলগ্ন ছোট শহর অফুনাতোতোর এক বাসিন্দা ভেসে গিয়েছিলেন জলের তোড়ে। তাঁকে উদ্ধার করে রাখা হয়েছে একটি নার্সিংহোমে। এ শহরের লোকসংখ্যা ১৭ হাজার ৫০০। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে শহরের অর্ধেক লোকের কোনো হদিস নেই।
দিন যত গড়াচ্ছে জাপানের সুনাসি আর ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা তত বাড়ছে। বেরিয়ে আসছে তাণ্ডবলীলার ভয়াবহ চিত্র।

No comments

Powered by Blogger.