নিবন্ধ- কপাটে তালা দিয়ে কেন এই মৃতু্যর আয়োজন by ফিরোজ আহমদ

রেকটি ভয়াবহ অগি্নকাণ্ডের ঘটনায় হা-মীম গার্মেন্টর ২৬ জন নারী-পুরুষ শ্রমিককে অসহায়ভাবে প্রাণ দিতে হল, যাতে আহত হয়েছে শতাধিক। '৮০'র দশকে গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত অগি্নকাণ্ডের ঘটনায় সহসরীহ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছে। সবচেয়ে হূদয়বিদারক হল সেই দৃশ্য যেখানে কারখানার বিভিন্ন ফ্লোরে আগুন লাগার পরে ধোঁয়া, তাপ, আগুন থেকে বাঁচার জন্য শ্রমিকরা সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা চালানোর সময় যখন দেখতে পায় বের হওয়ার সব দরজা বা কোলাপসিবল গেটে তালা লাগানো।
এর পরের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। দিশেহারা আদম সন্তান শ্রমিকরা তখন মরিয়া হয়ে জানালা দিয়ে নিচে ঝাঁপ দেয় কিংবা হাতের সামনে থাকা গার্মেন্টর কাপড় জোড়া দিয়ে দড়ির মতো তৈরি করে নিচে নামতে চায়, যেমনটি ঘটেছে হা-মীম গ্রুপের পোশাক কারখানায়। এভাবেই অনেক শ্রমিকের তাৎক্ষণিক মৃতু্য হয় কিংবা গুরুতর আহত হয়ে পরে হাসপাতালে তারা মারা যায়। অনেকক্ষেত্রে দরজা তালাবদ্ধ না থাকলেও সিঁড়ি সংকীর্ণ হওয়ায় ওপর থেকে হুড়োহুড়ি করে নামার সময় সহকমর্ীদেরই পায়ের চাপে অনেকে হতাহত হয়। এ পর্যন্ত বেশির ভাগ আগুন লাগার ঘটনায় এই অভিন্ন চিত্র আমরা দেখতে পাই।
কিন্তু বারবার এই যে এত বিপুলসংখ্যক শ্রমিক পরিহারযোগ্য এসব দুর্ঘটনায় মারা পড়ছে তাতে মালিক বা ব্যবস্থাপনা কতর্ৃপক্ষ, বিজেএমই,সরকার তথা নজরদারি কতর্ৃপক্ষ কারোরই কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। আজও কেন গার্মেন্টস মালিকদের কাজ চলাকালীন সময় প্রত্যেক ফ্লোরের নিষ্ক্রমণ পথ বা কোলাপসিবল গেট খুলে রাখতে বাধ্য করা গেল না? গার্মেন্টসে অগি্নকাণ্ডের পরপরই দেখা যায়, মালিক ও বিজেএমইএ কর্মকর্তারা কালবিলম্ব না করে হতাহতদের কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে সেটা নিয়ে আসর গুলজার করছেন। কি সুন্দর মানবতা বোধ! যেন কিছু টাকা ছড়ালেই তারা সব দায়-দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাবেন আর নিহত শ্রমিকদের জীবনের মূল্যস্বরূপ প্রদত্ত ওই টাকায় তাদের পরিবার-পরিজনরা উদ্ধার পেয়ে যাবে। গার্মেন্টস কমর্ীরা হতাহত হলে বিজেএমইএ কতর্ৃপক্ষ ও মালিকরা যেভাবে টাকার থলি নিয়ে ছুটে আসেন, তারা কি তাদের 'উদারতার' সেই টাকায় আগে থেকেই সম্ভাব্য দুর্ঘটনা থেকে তাদের রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন না?
এ প্রসঙ্গে একটি মর্মান্তিক অগি্নকাণ্ডের কথা উলেস্নখ না করে পারছি না, ব্যক্তিগতভাবে যে ঘটনার দু:সহ স্মৃতি আজও আমাকে তাড়া করে ফেরে। সেটা হল গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে জাপান-বাংলাদেশ গার্ডেন সিটির অগি্নকাণ্ড যাতে দু'টি শিশু ও এক কিশোরীসহ ৭ জনের মর্মান্তিক মৃতু্য হয়। ব্যক্তিগত বলছি এ কারণে যে, এই দুর্ঘটনায় আমার ফুফাতো বোন রাশিদা বেগম জুলি, তার স্বামী রফিক, রফিকের ভাই ও তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান এবং কাজের মেয়ে ধোঁয়া ও আগুনের তাপে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। ওই দুর্ঘটনায় গার্ডেন সিটি কতর্ৃপক্ষের গাফিলতি, এক ভাড়াটের ঘর সাজানোর বিলাসিতায়, শ্রমিকদের কথিত অসাবধানতা, অগি্ননির্বাপক সাজ-সরঞ্জাম অকেজো থাকা ইত্যাদি বিষয় বাদ দিলেও যদি সে সময় ছাদে যাওয়ার দরজা তালাবদ্ধ না থাকত তবে ওই অসহায় নিরীহ প্রাণগুলোকে ধোঁয়া আর দহনে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হত না। বাহারি নামের ওই হাউজিং কমপেস্নক্স কতর্ৃপক্ষ যদি প্রতি ফ্লোরের ভাড়াটেদের কাছে অন্তত: ছাদে যাওয়ার দরজার তালার চাবি সরবরাহ করতেন তবে ওই ৭ দুর্ভাগা ছাদের মুক্ত হওয়ায় গিয়ে তাদের প্রাণ বাঁচাতে পারত।
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের ওই দুর্ঘটনার পরপরই কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে ব্রিটিশ আমলের বহুতল ভবন স্টিফেন কোর্টেও অনুরূপ অগি্নকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ জনের মৃতু্য হয়। সেখানে ফেয়ার এসকেপ না থাকাতে এতগুলো মৃতু্যর জন্য দায়ী করা হয়েছে। সে সময় বার্তা সংস্থা এএফপি ওই দুর্ঘটনা সম্পর্কে যে খবর পরিবেশন করে তা উদ্ধৃত করছি। 'নিহত ২৪ জনের মধ্যে ৪ জন জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে মৃতু্যবরণ করে। একইভাবে ২ জন গুরুতর আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যায়। অগি্নদগ্ধ হয়ে নিহত অপর ১৮ জনের লাশ ছাদে ওঠার সিঁড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। শীর্ষ তলার ছাদে যাওয়ার দরজা তালাবদ্ধ ছিল। ছাদে পৌঁছাতে পারলে তারা প্রাণে বাঁচতে পারত। ওই খবরটির শিরোনাম ছিল:'লক্ড ফায়ার এসকেপ বেস্নম্ড ফর হাই ক্যাজুয়ালটিজ ইন কলকাতা বিল্ডিং।
আবার আগের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আজকাল অনেক গার্মেন্টসের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়োজিত থাকতে দেখা যায় (যেমনটি হা-মীমেও ছিল)। আমরা জানি, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণে শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা, মানবজীবনের প্রতি মমত্ববোধ ইত্যাদি বিষয়ও অন্তভর্ুক্ত থাকে। তবুও তারা তাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে গার্মেন্টর ফ্লোরে ফ্লোরে কাজ চলাকালীন সময়ে দরজা তালাবদ্ধ রাখার চরম অমানবিক বিষয়টি কিভাবে মেনে নেন, সেটাই প্রশ্ন।
=========================
বিজয়ের অর্থনীতি ও সম্ভাবনা  মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লক্ষ্মীর মুখোমুখি  একেই কি বলে আমলাতন্ত্র?  আত্মসমর্পণের সেই বিকেল  আমরা তাঁদের ভুলতে পারি না  সংবিধানের অনেক বক্তব্য পারস্পরিক সংঘাতমূলক  পরাশক্তির বিরুদ্ধে এক ‘ভবঘুরের’ স্পর্ধা  আবু সাঈদ চৌধুরীর ভাষণ দেওয়া হলো না  শুভ নববর্ষ ২০১১- দিনে দিনে বর্ষ হলো গত  এরশাদের বিচারে দুই দলেরই আগ্রহ কম  কিশোরদের সাদামাটা ফল  জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৫২ জন  এরশাদের বিচার হওয়া উচিত  ছোটদের বড় সাফল্য  প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাঃ পাস ৯২%, প্রথম বিভাগ বেশি  বাংলাদেশের বন্ধুঃ জুলিয়ান ফ্রান্সিস  নিষ্ফল উদ্ধার অভিযানঃ দখলচক্রে ২৭ খাল  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ভ টিজিং : জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয়  প্রতিশ্রুতির দিন  শোকের মাস, বিজয়ের মাস  চীনা প্রধানমন্ত্রীর পাক-ভারত সফর  দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন মন্তব্য  নতুন প্রজন্ম ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা  খিলক্ষেতে আগুনঃ কয়েলের গুদামে রাতে কাজ হতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে  ভারতে বিহার রাজ্যের নির্বাচন  স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে  আমাদের আকাশ থেকে নক্ষত্র কেড়ে নিয়েছিল যারা...  মুক্তির মন্দির সোপান তলে  আবেগ ছেড়ে বুদ্ধির পথই ধরতে হবে  বছর শেষে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ  দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ কি সম্ভব  গ্যাসের ওপর বিপজ্জনক বসবাস  উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ  সময়ের দাবি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি  জনসংখ্যা বনাম জনশক্তি  ব্যাংকের টাকা নয়ছয় হওয়া উচিত নয়  একটি পুরনো সম্পর্কের স্মৃতিচিত্র  পাটশিল্প ঘুরিয়ে দিতে পারে অর্থনীতির চাকা  ড. ইউনূসকে বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ ফিরোজ আহমদ
সাংবাদিক ও সাহিত্যকর্মী


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.