যুদ্ধ চালানোর সামর্থ্য নেই ভারত-পাকিস্তানের

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হলে তা চালিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য ভারত-পাকিস্তানের নেই। কাজেই দুই দেশের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসায় আলোচনাকেই একমাত্র পথ বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা বলেছেন, পাকিস্তানকে ‘বাধ্যতামূলক শত্রুতার’ মনোভাব পরিহার করতে হবে, তা না হলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা কোনো কাজে আসবে না।
গত শনিবার রাতে পিটিভি এবং দুনিয়া টিভিতে যৌথভাবে আয়োজিত একটি সরাসরি প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী গিলানি। এ সময় তিনি স্বীকার করেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ক্ষেত্রে মুম্বাই হামলাকে ইস্যু করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। তবে তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তানকে কোনো ছাড় দিতে ভারত প্রস্তুত নয়।
গিলানি বলেন, ‘আমার সঙ্গে একাধিক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জানিয়েছেন, আলোচনার ক্ষেত্রে মুম্বাই হামলা কোনো বাধা হবে না। কিন্তু মনে হচ্ছে, পাকিস্তানকে কোনো ছাড় না দেওয়ার জন্য তিনি নিজের দেশেই রাজনৈতিকভাবে চাপের মুখে আছেন।’
৫০ মিনিটের ওই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও এর সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক বিভন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন গিলানি।
পাকিস্তানে জঙ্গিদের আস্তানা ভেঙে দেওয়ার নামে কয়েক বছর ধরে সেখানে ধারাবাহিকভাবে ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন বাহিনী। ফলে পাকিস্তানের সরকারবিরোধীরা বলছে, পাকিস্তানেরও এ বিষয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ সময় গিলানি বলেন, ‘পরমাণু শক্তিধর দায়িত্বশীল একটি রাষ্ট্র হয়ে পাকিস্তান ওই হামলা বন্ধ করার জন্য কোনো দায়িত্বহীন পদক্ষেপ নিতে পারে না। তবে আমাদের বিশ্বাস, ড্রোন হামলা বন্ধ করার জন্য আমরা বিশ্ব সম্প্রদায় এবং যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে পারব। আমরা ওয়াশিংটনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে ওই হামলায় কোনো কাজ হচ্ছে না বরং জঙ্গিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার নতুন বছরে (২০১১) দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করবে। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করাই হবে নতুন বছরে আমাদের প্রতিজ্ঞা। সমঝোতার মাধ্যমে আইন তৈরির জন্য আমি মিয়া সাহেবের (বিরোধী দল পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরীফ) সঙ্গে কথা বলেছি। এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমনভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে কেউ এর দিকে আঙুল তুলতে না পারে।’
এদিকে, পাকিস্তানকে বিদ্বেষমূলক মনোভাব পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে গতকাল রোববার এক সাক্ষাৎকারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা বলেন, ‘আমরা খুবই আন্তরিকভাবে আশা করছি যে আমাদের প্রতিবেশী গঠনমূলক আলোচনার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবে এবং বাধ্যতামূলক শত্রুতার মনোভাব ত্যাগ করবে।’
কৃষ্ণা বলেন, ‘আমাদের শুধু একটাই প্রত্যাশা, পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে জঙ্গিদের অবকাঠামো ভেঙে দেবে। কেবল শান্তিপূর্ণ ও সন্ত্রাসবাদমুক্ত পরিবেশেই ফলপ্রসূ এবং স্থায়ী সংলাপ এগিয়ে যেতে পারে।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় মদদে বা মদদ ছাড়া সে যেভাবেই হোক আজকের বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই এবং সবার সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপাটন করা উচিত।’ গত শনিবার নতুন বছরের প্রথম দিনে ভারত ও পাকিস্তান তাদের নিজ নিজ পরমাণু অস্ত্র ও স্থাপনা তালিকা বিনিময় করেছে।
ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার হাতে নিজেদের পরমাণু অস্ত্র ও স্থাপনার তালিকা তুলে দেয় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের কাছে তালিকা হস্তান্তর করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একটি চুক্তির আওতায় দুটি দেশ দুই দশক ধরে এ তালিকা বিনিময় করে আসছে।

No comments

Powered by Blogger.