তিনজনের দুই রকম অভিষেক

দুই দলের ক্রিকেটারদের সম্মানে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজের একটা ছবি ছাপা হয়েছে সিডনির সান-হেরাল্ড পত্রিকায়। দুজন আছেন ছবিতে। ক্যাপশন—‘একজনের হাতে এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজ, আরেকজন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।’ অনুমান করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের সঙ্গের লোকটি কে? মাইকেল ক্লার্ক!
ছবির ক্যাপশনটাই বলে দিচ্ছে, কেমন চাপে আছেন ক্লার্ক। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে, অথচ সেটি উদ্যাপন করার কি উপায় আছে! ২৪ বছর পর দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারার শঙ্কা যে চোখ রাঙাচ্ছে। সেটি ঠেকানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ টেস্ট অধিনায়কত্বে অভিষেক ক্লার্কের, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও যাঁর অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা নেই।
টেস্ট অধিনায়ক ক্লার্কের অভিষেক টেস্টে অভিষেক হচ্ছে আরও দুজনের। একজন সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই প্রথম ঢুকলেন দুই দিন আগে, এক বছর আগে যাঁর স্বপ্নের পরিধি ছিল প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা পর্যন্ত। আরেকজনের জাতীয় দলে আশপাশে ঘোরাঘুরি বছর খানেক ধরেই, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে গড় ৫১.৭০। রিকি পন্টিংয়ের চোট উসমান খাজাকে সুযোগ করে দিচ্ছে টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণের। মাইকেল বিয়ারের জন্য টেস্ট খেলাটা তো স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু!
অচেনা এই দুজন সিডনিতে চমকে দেবে ইংলিশদের, এমন প্রত্যাশা গোটা অস্ট্রেলিয়ার। তবে ম্যাচের আগেই দুজনের জন্য একটা চমক রেখে দিয়েছেন ক্লার্ক। রিকি পন্টিংয়ের অধিনায়কত্বের সময় ব্যাগি গ্রিন ক্যাপটা অভিষিক্তদের নিজ হাতে তুলে দিতেন পন্টিং। ক্লার্ক ফিরে যাচ্ছেন স্টিভ ওয়াহর যুগে, যখন টেস্ট ক্যাপ তুলে দিতেন সাবেক কোনো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। বিয়ারের হাতে শেন ওয়ার্ন ক্যাপ তুলে দেবেন বলে একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, তবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নতুন দুই সেনানির অভিষেকের মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করতে পুরোটাকেই একটা চমক হিসেবে রেখেছিলেন ক্লার্ক।
তবে ক্লার্কের অধিনায়কত্বের অভিষেকটা স্মরণীয় হবে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। দলের তো বটেই, নিজেরও চলছে চরম দুঃসময়। প্রথম চার টেস্টে ২১.১৪ গড়ে করতে পেরেছেন মাত্র ১৪৮ রান। টেস্ট শুরুর আগের দিন চাপটাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে ভোলেননি প্রতিপক্ষ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, ‘দীর্ঘ সময়ের জন্য অধিনায়ক হতে হলে ক্লার্ককে আগে রানে ফিরতে হবে।’ তবে ক্লার্কের কিন্তু নিজের সামর্থ্যের ওপর অগাধ বিশ্বাস, ‘আশা করি, কাল (আজ) মাঠে এসে আমি স্রেফ নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেব, নিজের ভাবনামতো কাজ করব। ক্যারিয়ারজুড়ে যাঁরা আমাকে সাহায্য করেছেন, তাঁরা এমনটাই বলেছেন।’
ক্লার্কের প্রচন্ড আস্থা খাজা ও বিয়ারের ওপরও। জন্মভূমি পাকিস্তান ছেড়ে তিন বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসা খাজা ব্যাটিং করবেন পন্টিংয়ের সমার্থক হয়ে দাঁড়ানো তিন নম্বরে। ক্লার্কের কোনো সন্দেহই নেই লম্বা দৌড়ের ঘোড়া তাঁর রাজ্য দলের সতীর্থ, ‘আমি নিশ্চিত উসমান শুধু একটি নয়, আরও অনেক টেস্ট খেলবে।’ খাজা তো তবু ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত সৈনিক, কিন্তু বিয়ার তো প্রথম শ্রেণীর ম্যাচই খেলেছেন মাত্র ৭টি! টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। গত দুই টেস্টে পানি-তোয়ালে টানার পর সিডনির স্পিন-সহায়ক উইকেটই অভিষেকের সুযোগ এনে দিচ্ছে তাঁকে। তবে শুধু টেস্টেই নন, সিডনি মাঠেও অভিষেক হচ্ছে তাঁর! নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বিয়ারকে সাহস দিয়েছেন ক্লার্ক, ‘অভিষেকের আগে আমিও কখনো বেঙ্গালুরু যাইনি, ওই ড্রেসিংরুমে ঢুকিনি, ওই উইকেটে খেলিনি। এটা তাই ভিন্ন কিছু নয়। ওর তো আরও সৌভাগ্য সিডনির ভরা গ্যালারির সামনে অভিষেক হচ্ছে। সিডনির উইকেটে শেষের দিকে নিশ্চিতভাবেই স্পিন ধরবে। আমার তো মনে হচ্ছে ও বড় একটা ভূমিকা রাখবে।’
তবে এটা নিশ্চিত, অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজ বাঁচাতে হলে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে ক্লার্ককেই।

No comments

Powered by Blogger.