ব্যাংককের রাস্তায় থাকসিন সমর্থকদের বিক্ষোভ

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার প্রায় এক লাখ সমর্থক গতকাল রোববার কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই রাজধানীর ব্যাংককে বিক্ষোভ করেছে। সরকারের কাছে তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। নয়তো ব্যাংকক অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের।
থাকসিনের ‘লাল শার্ট’ সমর্থকেরা গতকাল লাল শার্ট পরে অংশ নেয় বিক্ষোভে। বিক্ষোভের আয়োজকেরা জানান, বিক্ষোভে এক লাখেরও বেশি লোক অংশ নিয়েছে। এদের বেশির ভাগই উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র লোকজন। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল লাল পতাকা। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তারা নানা স্লোগান দেয় ও গান গায়। তাঁরা আরও জানান, বিক্ষোভে অংশ নিতে উত্তরাঞ্চলীয় ও আয়ুধুত্য প্রদেশ থেকে আরও লোকজন ট্রাক, পিকআপ, মোটরসাইকেল ও ভ্যানে চড়ে ব্যাংকক আসছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে ব্যাংককের রাজপথ, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় প্রায় ৭০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক থাউইল প্লিয়েস্রি রয়টার্সকে বলেন, বিক্ষোভকারীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
থাইল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালত দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিনের ১৪০ কোটি ডলারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করার দুই সপ্তাহ পর এই বিক্ষোভের ডাক দেয় তাঁর সমর্থকেরা। লাল শার্ট সমর্থকদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী অভিজিত্ ভেজ্জাজিভাকে পদত্যাগ করে ক্ষমতা ছাড়তে হবে এবং নতুন করে নির্বাচন দিতে হবে। তাদের দাবি, বর্তমানে ক্ষমতাসীনেরা অভিজাত ব্যক্তি। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে সামরিক বাহিনীর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তারা।
বিক্ষোভকারীরা গত শুক্রবার থেকে সড়ক ও নৌপথে ব্যাংকক পৌঁছায়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বিক্ষোভ শুরু হয় গতকাল দুপুরে রেড শার্ট নেতা ভিরা মুসিকাপংয়ের জ্বালাময়ী বক্তৃতার মধ্য দিয়ে। উদ্দীপিত জনতার উদ্দেশে ভিরা মুসিকাপং বলেন, ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা ফেরত এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে পুরো দেশের লালরা। আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরের অপেক্ষায় আছি।’
ব্যাংককের ৮০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে চুনবুরি অঞ্চল থেকে এসে গতকালের বিক্ষোভে অংশ নেন পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানির কর্মী ৫০ বছর বয়সী বেনজাওয়ান ফোলপ্রসার্ট। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের সহিংসতায় ভীত নই। আমরা শক্তি প্রয়োগ করব না। সরকারের দমন-পীড়নেও আমি ভীত নই।’
তবে প্রধানমন্ত্রী অভিজিত্ ভেজ্জাজিভা জনগণকে তোয়াক্কা করছেন না উল্লেখ করে বেনজাওয়ান বলেন, ‘আমরা যা চাই তা যদি পেতে চাই তবে ভয় পেলে চলবে না।’
প্রধানমন্ত্রী অভিজিতের সাপ্তাহিক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, ক্ষমতা না ছাড়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালেও তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। অভিজিত্ বলেন, ‘ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করা আমার অধিকার। ক্ষমতা ছাড়ার কোনো ইচ্ছা নেই।’ তিনি বলেন, মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই। মিছিল হবে শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলার সঙ্গে। বিক্ষোভের কারণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর অস্ট্রেলিয়া সফরও বাতিল করেছেন।
এদিকে বিক্ষোভ দীর্ঘস্থায়ী হওয়া নিয়ে আতঙ্কে আছেন বিনিয়োগকারীরা।
থাকসিন সিনাওয়াত্রা ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে থাকসিনের বিরোধী ‘হলুদ শার্ট’ সমর্থকেরা তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। এর কিছুদিন পর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন থাকসিন।

No comments

Powered by Blogger.