ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার নিয়মিত প্রকাশ করবে কর্তৃপক্ষ

ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদের হার নিয়মিত ভিত্তিতে প্রকাশ করা হবে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) বেঁধে দেওয়া নীতির মধ্যে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ক্ষুদ্র অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণবিধি: কার উপকার?’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এমআরএ তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে, যা আজ সোমবার থেকে শুরু হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হারের বিষয়টি জটিল। এখানে বিভিন্ন ধরনের ঋণসেবার বিভিন্ন ধরনের সুদ ও মাশুল আছে। ঋণ পরিশোধের ধরনে রকমভেদ আছে।
এই বাস্তবতায় এমআরএ সুদের হার নির্ধারণের জন্য নীতিনির্দেশনা দিয়ে দেবে, যা নিয়ে এখন কাজ চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এমআরএ পরিচালক লীলা রশিদ বলেন, ‘এটা ঠিক যে, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার অনেক চড়া। ১৫ শতাংশ ঘোষিত সুদ শেষ পর্যন্ত ২৫-৩০ শতাংশও হয়ে যায়। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে, মানুষের বাড়ির দোরগোড়ায় ঋণসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়। যে কারণে ব্যাংক এই ক্ষুদ্রঋণ দিতে পারে না।’
আর তাই এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে সুদের হার নির্ধারণ করার কাজটি জটিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লীলা রশিদ আরও বলেন, ইতিমধ্যে ৫০০ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের সেবা মাশুল ও সুদের হারসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, এমআরএ সুদবিষয়ক নীতি নির্ধারণ করবে, যার আওতায় প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে সুদের হার ঘোষণা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, বিশ্বমন্দার ঝাপটায় বাংলাদেশ যে বড়ভাবে আক্রান্ত হয়নি তার জন্য কৃষি উত্পাদন ও প্রবাসী-আয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্রঋণ একটি ভূমিকা রেখেছে। সুতরাং ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সুষ্ঠু নিয়মনীতির নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
গভর্নর বলেন, দেশের ভেতর চাহিদা সৃষ্টি করতে ক্ষুদ্রঋণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, তাহলে লাখ লাখ মানুষ বিপদে পড়বে। আর তাই এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য নিয়ন্ত্রণবিধি জরুরি।
আতিউর রহমান ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষুদ্রঋণের অভিজ্ঞতা ও ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক নিয়ন্ত্রণবিধির বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে, মতবিনিময় করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এমআরএর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মুজহারুল হক বলেন, কারা ক্ষুদ্রঋণ দেবে আর কারা ক্ষুদ্রঋণ পাবে, তা নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে। তাই প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণবিধি। তিনি আরও বলেন, ব্র্যাকের মতো বড় প্রতিষ্ঠান যেমন ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে, তেমনি অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানও এ খাতে রয়েছে। কিন্তু সবার জন্য অভিন্ন বিধিমালা সমভাবে প্রযোজ্য নয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মুজহারুল হক বলেন, এমআরএ থেকে এক হাজারের মতো প্রতিষ্ঠানকে (এনজিও) কার্যক্রম বন্ধের জন্য বলা হয়েছে এটা ঠিক। তবে এ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য বা ব্যাখ্যা থাকলে তা জানানোরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম, হাওর-বাঁওড় ও চরাঞ্চলের মতো কিছু এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু শিথিলতা আনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, তিন দিনের এই সম্মেলনে ২০টি দেশের ৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন। বাংলাদেশ থেকে থাকবেন ১৫০ জন। আজ সকালে সোনারগাঁও হোটেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। বুধবার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান।

No comments

Powered by Blogger.