কাশ্মীরে নিরাপত্তা ও উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে সহিংসতার আশঙ্কা

কাশ্মীরের ভারত-শাসিত অংশের জনগণ রোববার ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে পেট্রল স্টেশন এবং এটিএম মেশিনগুলোতে লাইন ধরে ছিল। রাজ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাপক জোরদার করার পর সেখানে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

শুক্রবার থেকে হাজার হাজার পর্যটক ও হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর আগে ভারত সরকার হিন্দুদের ৪৫ দিনের বার্ষিক অমরনাথ যাত্রা বাতিল করে। কর্মকর্তারা বলেছেন, তীর্থযাত্রীদের যাত্রাপথে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে মর্মে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছেন তারা।

কাশ্মীরের জনগণকে আতঙ্কিত না হতে বলা হয়েছে, যদিও হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর কারফিউ বলবৎ রয়েছে এবং সেগুলো খালি করে দেয়া হচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই কাশ্মীরকে নিজেদের দাবি করে এবং আংশিকভাবে দুই দেশই এটা শাসন করছে। ভারতীয় অংশে প্রায় তিন দশক ধরে সহিংসতা চলছে, এবং হাজার হাজার মানুষ এতে নিহত হয়েছে।

গত সপ্তাহে দিল্লী কাশ্মীরে ১০,০০০ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করলে এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, দিল্লী সংবিধান থেকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরিকল্পনা করছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সব সময় এটা বাতিলের কথা বলে আসছে। কিন্তু সেটা করলে প্রায় নিশ্চিতভাবে এখানে সহিংসতা বাড়বে এবং পাকিস্তানের সা্থেও উত্তেজনা বেড়ে যাবে।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর শ্রীনগরে অনেকেই ঈদের প্রস্তুতি নেয়া বাদ দিয়েছেন, যেখানে ঈদের আর মাত্র সপ্তাহ খানিক বাকি। শনিবার রাতে পেট্রল স্টেশনে অপেক্ষারত একজন বললেন, “তারা চায় যাতে আমরা উদ্বেগে মারা যাই”।

এই মানুষের সারি রোববারও দীর্ঘসময় বজায় ছিল এবং বহু তেল পাম্পের তেল শেষ হয়ে যায় এ সময়।

শ্রীনগরের ডাল লেকে ৪০ বছর ধরে নৌকা চালান নিসার আহমেদ। তিনি বললেন, তার জীবনে কখনও এমন অবস্থা দেখেননি। তিনি বলেন, “একদিন প্রচুর পর্যটক ছিল এখানে, ঠিক পরের দিনই একেবারে শুনশান অবস্থা”।

যে কজন পর্যটক অবশিষ্ট আছেন, তারাও কাশ্মীর ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। আহমেদ বলেন, “কেউই জানে না যে, আগামীকাল কি হতে চলেছে”।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত কোন স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না যে কেন এই বিপুল সেনা সমাগম করা হলো। কর্মকর্তারা শুধু নিরাপত্তা হুমকির কথা বলেছেন।

অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশানের অ্যাসোসিয়েট ফেলো খালিদ শাহ বলেন, “সেখানে ৩০ বছর ধরে সন্ত্রাসের হুমকি রয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না যে এখন কি ধরনের হুমকির কথা বলা হচ্ছে, যেটা এতটা অস্বাভাবিক”।

অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, বিয়ের মওসুম এবং ঈদ উদযাপন সবকিছুই এবার হারিয়ে যেতে পারে। ফায়জান আহমেদের পরিবার বহু মাস ধরে তার বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে আসছিলেন, যেটা ২৪ আগস্ট হওয়ার কথা। তিনি বলেন, “পুরো পরিবার এখন এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে। কি করা ঠিক হবে, এটা নিয়ে এক ধরনের মানসিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে”।

>>>আজহার ফারুক ও রেবেকা র‍্যাটক্লিফ

No comments

Powered by Blogger.