ভারত-মার্কিন সম্পর্কে ভাটার টান, বিশেষজ্ঞের হুঁশিয়ারি

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে গত দুই দশক ধরে যে উর্ধ্বমুখি প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল তাতে এখন ভাটার টান লাগতে যাচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন একজন প্রখ্যাত ইন্দো-আমেরিকান কমিউনিটি নেতা। তার মতে দুই দেশ তাদের বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সম্পর্কে অবনতি অব্যাহত থাকবে।

মার্কিন পণ্যের উপর ভারত যে শুল্ক আরোপ করে রেখেছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা চলছে।

গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লিগথিজার ঘোষণা করেন যে ভারতের জিএসপি সুবিধা বাতিল করবে যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘোষণা কার্যকরের পর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ভারত ২৮টি মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে।

ইউএস-ইন্ডিয়া সিকিউরিটি কাউন্সিলের বোস্টনভিত্তিক প্রেসিডেন্ট রমেশ কাপুর বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে ভারতের জন্য বাণিজ্য সমস্যাগুলো নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনা করা এবং সেগুলো যতদ্রুত সম্ভব নিরসন করা গুরুত্বপূর্ণ।

তা না হলে দুই দেশের সম্পর্ক ঝুঁকিতে পড়বে এবং শিগগিরই ভেঙ্গে পড়তে শুরু করবে।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনের মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন কাপুর ও ইন্দো-আমেরিকান কমিউনিটির অন্য নেতারা। পরে পিটিআইকে কাপুর বলেন, তা না হলে কাশ্মির ইস্যু উষ্কে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি মহলে কাশ্মির ইস্যু হাজির হতে থাকবে।

ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তিনদিনের সফর শেষ হওয়ার পরপরই ভারতীয় নেতাদের বেঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন ইমরান।

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কাপুর। এছাড়াও গত দেড় দশকে কংগ্রেসে ভারতকেন্দ্রিক বেশকিছু আইন পাসের ক্ষেত্রে পর্দার আড়ালে কাজ করেন তিনি।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বাসভবনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কাপুর ও ইন্দো-আমেরিকান কমিউনিটি অন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারা যোগ দেন।

এই সুযোগে কমিউনিটি নেতারা ওয়াশিংটনে আমেরিকান আইনপ্রণেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

প্রায় দুই দশক ধরে ক্যাপিটল হিলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা কাপুর বলেন, গত সপ্তাহে হিলে অন্তত দুটি বৈঠকে কাশ্মির প্রসঙ্গ উত্থাপিত হওয়ায় তিনি বেশ অবাক হয়েছেন। দুবারই উত্থাপন করেছে রিপাবলিকানরা।

কাপুর বলেন, এটা ভালো লক্ষণ নয়। এ পরিস্থিতিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনের বিষয়ে অগ্রগতি লাভের সম্ভাবনা কম। ইউএস-ইন্ডিয়া সিকিউরিটি কাউন্সিল ও ভারতের অন্য বন্ধুরা এসব আইন কংগ্রেসে পাস করানোর চেষ্টা করছে।

তার মতে, সবকিছুই ভালোভাবে চলছিলো। এখনো সম্পর্ক ভালো। তবে আরো ভালো হতো যদি আমাদের এক্সপোর্ট কন্ট্রোল আইনটি পাস করানো যেতো। এটা হতো ন্যাটো প্লাস সিক্স।

ভারতীয় সম্প্রদায়ের এই নেতা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন যে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক গতি হারাতে যাচ্ছে, অন্তত বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির দিনগুলোর অবস্থায় নেই।

সতর্ক করে দিয়ে কাপুর বলেন, একবার গতি হারালে ফের শুরু করা খুবই কঠিন হবে। তাই ভারত সরকারের উচিত হবে দ্রুত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ইস্যুগুলোর সুরাহা করা।

বাণিজ্য বিরোধ মিটে গেলে আফগানিস্তান ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত ইস্যু সুবিধাজনক অবস্থায় চলে আসবে বলে কাপুর মনে করেন।

তিনি বলেন, এখন তারা ভাবছে যে আফগানিস্তানের জন্য পাকিস্তানকে তাদের প্রয়োজন। কালই তারা আফগানিস্তান থেকে চলে যেতে পারে। কিন্তু বাণিজ্য আলাদা কাহিনী। বাণিজ্য ছাড়া আপনি চলতে পারবেন না।

No comments

Powered by Blogger.