দোহাতে নতুন দফা আলোচনায় শান্তি চুক্তির জোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান

আফগানিস্তানে ১৮ বছরের যুদ্ধের ইতি টানার জন্য কাতারের রাজধানী দোহাতে নতুন দফা আলোচনায় শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত করার জোর চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানরা। শনিবার এই অষ্টম দফা আলোচনা শুরু হয়েছে।

একটি তালেবান সূত্র এএফপি বার্তা সংস্থাকে বলেছে যে, আফগানিস্তানে নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন দূত জালমাই খলিলজাদ এবং তালেবান সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদারের মধ্যে সরাসরি একটা বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করা হচ্ছে, যিনি তালেবানদের রাজনৈতিক শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের কাছে এই নিশ্চয়তা চায় যে আফগানিস্তানের মাটি আর কোন সন্ত্রাসে ব্যবহৃত হবে না। অন্যদিকে তালেবানদের মনোযোগের জায়গাটা হলো আফগানিস্তানের মাটি থেকে বিদেশী সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার।

তালেবানদের দোহা অফিসের মুখপাত্র সুহাইল শাহীন শনিবার টুইটারে বলেন যে, যদি কোন চুক্তি চূড়ান্ত হয়, তাহলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা সব বিদেশী শক্তিকে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে এবং আফগান সরকারের সাথে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করবে।

মার্কিন প্রতিনিধিদের সাথে প্রায় এক বছর ধরে আলোচনা করছে তালেবানরা। তবে এখন পর্যন্ত আফগান সরকারের সাথে আলোচনায় রাজি হয়নি তারা। কাবুল সরকারকে তালেবানরা পশ্চিমাদের ‘পুতুল সরকার’ বলে আসছে।

সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য আফগান নির্বাচনের আগেই ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তালেবানদের সাথে একটা শান্তি চুক্তি করে ফেলতে চাচ্ছে ওয়াশিংটন। তাছাড়া ২০২০ সালে যে মার্কিন নির্বাচন হবে, তার আগেই সেনা প্রত্যাহার শুরু করতে চায় তারা। কিন্তু যে কোন শান্তি চুক্তির জন্য কাবুলের সাথে তালেবানদের আলোচনা করাটা পূর্বশর্ত।

খলিলজাদ শুক্রবার এক টুইটে বলেন, “আমরা শান্তি চুক্তির চেষ্টা করছি, সেনা প্রত্যাহার চুক্তি নয়, একটা শান্তি চুক্তি যেটার মাধ্যমে সেনা প্রত্যাহারটা সম্ভব হবে”। ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে আলোচনা সেরে দোহাতে ফেরার পর ওই টুইট করেন খলিলজাদ।

“আফগানিস্তানে আমরা শর্ত-সাপেক্ষে অবস্থান করছি, এবং সেনা প্রত্যাহার করতে হলেও সেটা শর্ত সাপেক্ষে হতে হবে”।

গত মাসে তালেবান এবং আফগান সিনিয়র কর্মকর্তারা তথাকথিত আফগান-অভ্যন্তরীণ আলোচনায় বসেছিলেন এবং সেখানে তারা আফগানিস্তানে ‘শান্তির রোডম্যাপ’ তৈরির ব্যাপারে শপথ করেন।

অগ্রগতির আরেকটি লক্ষণ হলো আফগান সরকার তালেবানদের সাথে আলাদাভাবে আলোচনার জন্য একটি আলোচক টিম গঠন করেছেন এবং কূটনীতিকরা আশাবাদ জানিয়েছেন যে, চলতি মাসের শেষ দিকে এই টিম তালেবানদের সাথে আলোচনায় বসতে পারে।

আলোচনার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও আফগানিস্তানে সঙ্ঘাত কমেনি। জাতিসংঘের হিসেব মতে, গত মাসে আফগানিস্তানে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা রেকর্ড স্পর্শ করে।

জুলাই মাসে সহিংসতায় দেড় সহস্রাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি এবং ২০১৭ সালে মে মাসের পর এই হার সর্বোচ্চ।

No comments

Powered by Blogger.