বাঙালি পরিচয় আন্দোলন জোরদার হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে by সুবীর ভৌমিক

নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের গেরুয়া ব্রিগেডের ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানের সাথে বাঙালি সংস্কৃতির যোগ নেই বলে সমালোচনা করার কয়েক দিনের মধ্যে তার মন্তব্য-সংবলিত বিলবোর্ড কলকাতায় রাস্তায় রাস্তায় আবির্ভূত হতে থাকে।

অমর্ত্য সেনের তীব্র সমালোচনাকে স্বাগত জানায় বাঙালি মানবাধিকার গ্রুপগুলো ও রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতিবিদেরা।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি এখন গেরুয়া বাহিনীর প্রহারের মন্ত্র হয়ে পড়েছে। এর সাথে বাঙালি সংস্কৃতির কোনো যোগাযোগ নেই।

“‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান আগে কখনো শুনিনি। ইদানীং মানুষকে মারার জন্য এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আমার মনে হয় না এই স্লোগানের সাথে বাংলার সংস্কৃতির কোনো যোগাযোগ আছে,” বিলবোর্ডে লেখা হয়েছে। গত ৫ জুলাই কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে মতবিনিময়ের সময় অমর্ত্য সেন এমন কথা বলেছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

বিলবোর্ডে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে অমর্ত্য সেন তার চার বছরের নাতিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তার পছন্দের ভগবান কে? তিনি বলেন, ‘তার উত্তর, মা দুর্গা। ‘অর্থাৎ এখানে দুর্গা পূজা যে মর্যাদা পায়, তার সাথে রাম নবমীর কোনো তুলনাই হতে পারে না।

কে এসব বিলবোর্ড লাগিয়েছে, তা জানানো হয়নি, তবে নীল-সাদা রং তৃণমূলের।

তৃণমূলের সুপ্রিমো ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত সবাইকে বাংলা শিখতে ও বাংলায় কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর (এতে বিজেপি ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে জয়ী হতে সক্ষম হয়েছে) মমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক জোরালোভাবে ‘বাঙালি পরিচিতি’ কার্ড ব্যবহার করছেন।

তার দল প্রকাশ্যে কখনো ‘হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত ‘বাংলা পক্ষ’-এর মতো গ্রুপগুলোকে প্রকাশ্যে সমর্থন না করলেও এসব বাঙালি গ্রুপের নেতারা তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং এমনকি জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেল প্রশ্নে সীমাহীন বিতর্কে তাদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করেন।

‘বাংলা পক্ষ’ অনুপ্রেরণা পাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ১৯৫০-১৯৬০-এর দশকের উর্দুবিরোধী আন্দোলন ও একইসময়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিল নাড়ুর হিন্দিবিরোধী আন্দোলন থেকে।

আন্দোলনের নেতা গর্গা চ্যাটার্জি বলেন, আমরা কোনো ভাষারই বিরোধী নই। আমরা অহিন্দি ভাষাভাষী লোকজনের ওপর হিন্দি চাপিয়ে দেয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে। চ্যাটার্জি মর্যাদাসম্পন্ন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) শিক্ষক।

এরই প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে কেন্দ্রে মোদি সরকার সম্প্রতি সমগ্র ভারতে হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে যে নতুন খসড়া জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলেন, তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন।

‘বাংলা পক্ষ’ তীব্রভাবে বিজেপির ‘হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান’ ভিশনের বিরোধিতা করছে। এর সমর্থকেরা রেলওয়ে কোচগুলোতে থাকা উর্দু কবি মোহাম্মদ ইকবালের ‘হিন্দি হুঁ হাম, ওয়াতান হ্যায় হিন্দুস্তান হামারা’ বাণী ছিঁড়ে ফেলেছে।

চ্যাটার্জি বলেন, ‘আমরা হিন্দি নই। আমরা বাঙালি। আমাদের দেশ ইন্ডিয়া ও ভারত। আমাদের সংবিধানে কোথাও হিন্দুস্তান লেখা নেই। হিন্দুস্তান বলতে উত্তর ভারতকে বুঝায়। কিন্তু আমাদের তামিল, উড়িয়া, তেলেগু বা আসামীয় ভাইদের মতো আমরা বাঙালিরাও ভারতের অংশ, হিন্দুস্তানের নয়।

বিজেপি-আরএসএস ও তাদের ফ্রন্টগুলো পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ২০১৭ সালে রাম নবমী ও হনুমান জয়ন্তী উৎসব শুরু করলে বাংলা পক্ষের আবির্ভাব ঘটে।

কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী ও বাংলা পক্ষের সমর্থক অনির্বাণ ব্যানার্জি বলেন, আমাদের আন্দোলনে কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। গেরুয়া শিবিরের ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’ স্লোগান বাংলার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ কেবল মুসলিমদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিই নয়, সেইসাথে বাঙালিদের মতো স্বতন্ত্র জাতিগত গ্রুপগুলোর প্রতিও হুমকি সৃষ্টি করেছে।

তৃণমূল এই গ্রুপটির পক্ষে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, হিন্দি ভাষাভাষী ভোটারদের মধ্যে যাতে ক্ষোভের সৃষ্টি না হয়, সেজন্যই তারা এই পথ অবলম্বন করেছে। তবে বাংলা পক্ষের একটি বড় সমর্থক গোষ্ঠীই ক্ষমতাসীন দলের সদস্য।

গর্গা চ্যাটার্জি রাজ্যের নতুন নাম ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব কেন্দ্রের প্রত্যাখ্যান করার প্রেক্ষাপটে বলেন, তৃণমূল বাংলার। সিপিআই(এম) বাংলার। কিন্তু বিজেপি বাংলার নয়।

গত ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধান সভা সর্বসম্মতভাবে রাজ্যের নাম বাংলা করার একটি প্রস্তাব পাস করে তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

এছাড়া ২০১৬ সালে ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’, বাংলায় ‘বাংলা’ ও হিন্দিতে ‘বাঙ্গাল’ করার প্রস্তাবটিও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাব দেয়া হয় ‘বাংলা’ করার।

আগেকার প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করার সময় কেন্দ্রীয় সরকার এই বলে আপত্তি জানিয়েছিল যে ‘বাংলা’ নামটি বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, ফলে আন্তর্জাতিক ফোরামে দুটির মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হবে।

কিন্তু গর্গা চ্যাটার্জি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশ’ একইসাথে সহাবস্থান করতে পারবে। কারণ তারা জাতীয় সীমান্তজুড়ে বিস্তৃত একটি ভাষাকেন্দ্রিক গ্রুপের প্রতিফলন করে।

তিনি স্বীকার করেন যে এই মুহূর্তে তাদের আন্দোলন তৃণমূলকে সাহায্য করছে, তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিপিআই(এম) সমর্থকেরাও এই গ্রুপের অংশ।

গত বছর বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের বিরোধী অবস্থান জোরদার করে বিজেপি। তাদের দাবি, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ঠ চরিত্র বদলে যাচ্ছে। বাংলা পক্ষ এই দাবি চ্যালেঞ্জ করে বলছে যে ‘উত্তর ভারত থেকে অনুপ্রবেশই’ রাজ্যের ভাষাতাত্ত্বিক চরিত্র ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

গত কয়েক মাসে বাংলা পক্ষ রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে ১০টিতে শাখা খুলেছে। তারা ইতোমধ্যেই বাঙালিদের ও বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করার জন্য সরকারি বিভাগ ও সংস্থাকে বাধ্য করেছে।

এই গ্রুপের সদস্যদের প্রতিবাদের মুখে গত এপ্রিলে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্মার্ট কার্ডে বাংলা প্রবর্তন করেছে। রাজ্য সভার স্বতন্ত্র সদস্য রিতাব্রত ব্যানার্জিও তাদের সমর্থন করেন।

এরপরপরই কলকাতা অবাঙালি ভাষাভাষী এলাকাগুলোতে উর্দু ও হিন্দিতে সাইনবোর্ড লেখার কলকাতা পুলিশ বিভাগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইমেইল ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। তারা জোর দিয়ে বলে যে রাজ্য সরকারের কোনো নোটিশ বা প্রচার কার্যক্রম থেকে বাংলাকে বাদ দেয়া যাবে না। পুলিশ পাল্টা জানায় যে তাদের যোগাযোগের যেকোনো কার্যক্রমে বাংলাই প্রধান ভাষা এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে।

সর্বশেষ সফলতা আসে জুনে। ওই সময় নদিয়া জেলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর) শিক্ষা ও অশিক্ষা পদের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে হিন্দি বাধ্যতামূলক থাকার প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। বাংলা পক্ষ কর্মীরা সাইবার ক্যাম্পেইন শুরু করে, আইআইএসইআর অফিসের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

বাংলা পক্ষের কর্মী রেহান আমিন বলেন, অহিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যগুলোতে হিন্দি চাপিয়ে দেয়া একটি স্পষ্ট অর্থনৈতিক এজেন্ডা। এতে জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা ও সরকারি চাকরিগুলোতে যাতে হিন্দি ভাষাভাষীরা সুবিধা পায়, তার ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি বলেন, উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানায় যদি বাংলা ভাষা ব্যবহার করা না হয়, তবে কেন বাংলায় হিন্দি ও উর্দু ব্যবহার করা হবে? আমিন হাওড়ার অধিবাসী, তিনি সেখানে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন।

আমরা বাঙালি

রাজ্যে এটিই প্রথম বাঙালি পরিচিতি আন্দোলন নয়। ১৯৮০-এর দশকে আনন্দ মার্গ গ্রুপের আমরা বাঙালি আন্দোলন কিছুটা প্রভাব সৃষ্টি করেছিল, গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন আবার শুরু হলে ২০০৮ সালে উত্তরবঙ্গে তার অবস্থান দেখা গিয়েছিল।

২০০০-এর প্রথম দিকে কবি-উপন্যাসিক সুনীল গাঙ্গুলি বাংলার প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলা বাধ্যতামূলক করার একটি আন্দোলনে নেত্বত্ব দিয়েছিলেন।

বাংলা পক্ষ আন্দোলন সেক্যুলার, উদার, অন্তর্ভুক্তমূলক, ফেডারেল ও বিভিন্ন বৈচিত্র্যতে প্রতিফলিত করে এমন একটি ভারতীয় কাঠামোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে জোরালো বাঙালি পরিচিতি বিকাশ করার কথা বলছে।

গ্রুপটি ইতোমধ্যেই বাংলায় বিজ্ঞান লেখালেখি জনপ্রিয় করার জন্য একটি বিজ্ঞান শাখা খুলেছে, একটি আইন শাখা খোলার প্রক্রিয়াও চলছে। তারা ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তা শাখা খোলার পরিকল্পনাও করছে।

জুনে গ্রুপটির পশ্চিম বর্ধমান শাখা রাজ্যের জাতীয় মহাসড়কগুলোর সাইনবোর্ডগুলো থেকে বাংলা অদৃশ্য হয়ে যাওার প্রতিবাদ জানায় ন্যাশনাল হাইওয়েস অর্থোরিটি অব ইন্ডিয়া অফিসের সামনে। কয়েক মাসের মধ্যে মহাসড়কগুলোর সাইনবোর্ডে বাংলা পুনঃপ্রবর্তন না করা হলে তারা আন্দোলনে যাবেন বলে পরিকল্পনা করছে।

নয়া দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি হিন্দিতে বক্তৃতা করায়, ঈদ বার্তা উর্দুতে দেয়ায় গ্রুপটি তার সমালোচনা করেছে।

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় হিন্দি ও উর্দু প্রবর্তন করার সিপিআইয়ের (এম) দাবিরও বিরোধিতা করে তারা। উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হিন্দিতে ছাপানোর রাজ্য বোর্ডের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করে তারা।

বিজেপির পাল্টা আঘাত

পাল্টা আঘাত হেনে হারানো রাজনৈতিক ভিত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাকে সমর্থন করছেন বলে মমতা ব্যানার্জির সমালোচনা করে বিজেপি।

বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখা সভাপতি দিলিপ ঘোষ বলেন, মমতা পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ বানানোর চেষ্টা করছেন।

এর প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজনৈতিক ভাষ্যকার দিপঙ্কর দে বলেন, বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা অনুভব করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। কারণ আমরা অভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকারী। এর জন্য সীমান্তের ওপারে আমাদের ভাইয়েরা রক্তসাগর ঝরিয়েছে। কেউই জাতীয় সীমানা পরিবর্তনের চেষ্টা করছে না।

তিনি বলেন, ভারতের স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের মতো অন্য কেউই আত্মত্যাগ করেনি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশপ্রেম নিয়ে কোনো বক্তৃতার প্রয়োজন নেই আমাদের।

দে বলেন, ভারত সরকারের তথ্যে দেখা যায়, ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারের ঐতিহাসিক সেকুলার জেলে যে ৫৮৫ জন বন্দী যাবজ্জীবন সাজা খেটেছিল তার ৩৯৮ জনই ছিল অবিভক্ত বাংলার বাঙালি।

তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের সাহসী ছেলেদের কেউই ব্রিটিশদের কাছে অনুকম্পা চায়নি এবং হিন্দুত্ববাদী গুরু বিনায়ক দামোদর সাভারকারের মতো মুক্তি প্রার্থনা করেনি। তারা সবই নির্যাতিত হয়েছে, কিন্তু নত স্বীকার করেনি। অথচ আজ পোর্ট ব্লেয়ারের নামকরণ করা হয়েছে সাভারকারের নামে, ধর্ষণকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে যৌক্তিক করাও হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও তৃণমূল সমর্থক মনোজিত মণ্ডল উল্লেখ করেছেন যে বাঙালিদের একটি বড় অংশ আগ্রাসী গেরুয়া আক্রমণের মুখে তাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচিতি হুমকির মুখে পড়েছে মনে করে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলা একটি জোরালো সমন্বয়বাদী, আন্তঃধর্মীয় সংস্কৃতি হওয়ায় এর ওপর গেরুয়া হামলায় আমরা ক্ষুব্ধ। রামমোহন রায় ও অমর্ত্য সেনের মতো আমাদের আইকনদের যখন অপমান করা হয়, তখন আমরা কিভাবে তা বরদাস্ত করতে পারি। হিন্দির বিরুদ্ধে এই প্রতিক্রিয়া রাজনীতির চেয়ে সাংস্কৃতিক কারণই বেশি। কেন্দ্রীয় সরকার যদি পরিস্থিতিকে ভুল বুঝে থাকে, চাপ দিতে থাকে, তবে এই হালকা প্রতিক্রিয়া বড় ধরনের আন্দোলনে রূপ নেবে।

তিনি নির্বাচনের সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘বাংলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কাশ্মিরের চেয়ে খারাপ’ বলে দেয়া বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, সহজাত অসততাই এ ধরনের বক্তৃতা করার কারণ। এ ধরনের বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরো জটিল করবে।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে রামের চেয়ে রামমোহন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমবঙ্গকে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) আওতায় আনার বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির জবাবেও বাঙালি পরিচিতি আন্দোলনের জনপ্রিয়তা লাভের একটি কারণ।

আসামে এখন এনআরসি হালনাগাদ করা হচ্ছে। এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় প্রায় ৪০ লাখ বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম বাদ পড়েছে। ভারতে তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এটা।

এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় নাম না থাকায় ৫১ জন বাঙালি (মুসলিমের চেয়ে হিন্দু বেশি) আত্মহত্যা করেছে। তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কায় শঙ্কিত।

No comments

Powered by Blogger.