ভারতের সঙ্গে ভৌত যোগাযোগে কোন বাধাই রাখছে না বাংলাদেশ by শফিক রহমান

ভারতের সঙ্গে ভৌত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে ধীরে ধীরে সব বাধাই দূর করে দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ প্রক্রিয়ায় নদী খনন, রেল লাইন সংস্কার-সম্প্রসারণ, স্থলবন্দরের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সড়কের লেন বৃদ্ধিসহ নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে দেশটি।
ভারতের সঙ্গে সর্বশেষ স্বাক্ষরিত প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (নৌ প্রটোকল) চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে তিনটি রুট রয়েছে। যার একটি হলো কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল হয়ে বাংলাদেশের চালনা-খুলনা-মোংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারি হয়ে ভারতের আসামের ধুবড়ি-পান্ডু পর্যন্ত। দ্বিতীয় রুটটি হলো কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল হয়ে বাংলাদেশের চালনা-খুলনা-মোংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-ভৈরব বাজার-আশুগঞ্জ-আজমিরীগঞ্জ-মারকুলি-শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ-জকিগঞ্জ হয়ে ভারতের মেঘালয়ের করিমগঞ্জ পর্যন্ত। আরেকটি রুট ভারতের ধুলিয়ান হয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী-গোদাগারী পর্যন্ত।
এর মধ্যে কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল-চালনা-খুলনা-মোংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-ভৈরব বাজার-আশুগঞ্জ-আজমিরীগঞ্জ-মারকুলি-শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ-জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ রুটের কানাই কুশিয়ারা নদীর অংশ, বিশেষ করে আশুগঞ্জ থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত ২৯৫ কিলোমিটার অচল রুটকে সচল করতে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগের ভিত্তিতে বাস্তবায়নাধিন প্রকল্পের আওতায় গত মার্চেই খনন কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষা মওসুম শেষ হলে খনন কাজ পুনরায় শুরু হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন জানান, প্রকল্পের আওতায় প্রথম দুই বছর ১৫ লাখ ঘন মিটার খননের সিদ্ধান্ত রয়েছে এবং নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে পরবর্তী পাঁচ বছরের প্রতি বছর সাড়ে চার লাখ ঘনমিটার করে সংস্কার খনন চলবে।
প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। যার ৮০ শতাংশ বহন করবে ভারত এবং বাকি ২০ শতাংশ বহন করবে বাংলাদেশ।
এছাড়া কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল-চালনা-খুলনা-মোংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারি-ধুবড়া-পান্ডু রুটের যমুনা নদীর অংশ বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত ১৭৮ কিলোমিটার খননের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বর্ষার মওসুম শেষ হলে শুরু হবে এ প্রকল্পের কাজ। আবদুল মতিন জানান, এ প্রকল্পের আওতায় প্রথম দুই বছর ৩৬ লাখ ঘন মিটার খনন করা হবে। পরবর্তী পাঁচ বছরের প্রতিবছর ১০ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটর সংস্কার খনন করা হবে।
তিনি আরও জানান, এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৭ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা। যার ৮০ শতাংশ বহন করবে ভারত এবং ২০ শতাংশ বাংলাদেশ।
এছাড়া ধুলিয়ান-গোদাগারী-রাজশাহী রুটের পদ্মা নদীর বিশেষ করে ধুলিয়ান থেকে গোদাগারী পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং গোদাগারী থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ৯৮ কিলোমিটার খননেরও প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে থাকা গোমতী ও হাড়োয়া নদীর খননের জন্যও সুপারিশ করেছে যৌথ কারিগরি কমিটি। গত বছরের অক্টোবরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারতের নৌ সচিব পর্যায়ের দুই দিনব্যাপী বৈঠকে ধুলিয়ান-গোদাগারী-রাজশাহী রুট এবং গোমতী ও হাড়োয়া নদীকে ব্যবহারযোগ্য করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখতে দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ওই যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
ওই বৈঠকেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাত্রী ও পর্যটকবাহী ক্রুজ চলাচলের সুযোগ এবং দুই দেশের মধ্যে নতুন নৌবন্দর ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা সংক্রান্তসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি সই করে ঢাকা ও নয়া দিল্লি। বিশেষ করে ভারতের ধুবড়ি এবং বাংলাদেশের পানগাঁও-কে নতুন বন্দর হিসাবে ব্যবহারে চুক্তি হয়।
এছাড়া ভারতের রূপনারায়ণ নদীর গেঁওখালী থেকে কোলাঘাট পর্যন্ত প্রটোকল রুটে অন্তর্ভুক্ত করতে এবং পশ্চিমবঙ্গের কোলাঘাট ও বাংলাদেশের চিলমারীকে নতুন পোর্ট অব কল ঘোষণা করতে দুই দেশ সম্মত হয়।
ওই একই বৈঠকে আসামের বরাক নদীতে করিমগঞ্জের পাশাপাশি বদরপুরে এবং বাংলাদেশের আশুগঞ্জের পাশে ঘোড়াশালে বন্দর তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বর্তমানে দুই দেশের ঘোষণা দেয়া পোর্ট অব কলের সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে বাংলাদেশর ৬টি হলো নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, মোংলা, সিরাজগঞ্জ, আশুগঞ্জ এবং পানগাঁও। আর ভারতের ৬টি হলো কলকাতা, হলদিয়া, করিমগঞ্জ, পান্ডু, শীলঘাট এবং ধুবড়ি।
গত জানুয়ারিতে নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় দুই দেশের নৌ রুট ব্যবহারে ২৩৮টি জাহাজকে অনুমতি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এর মধ্যে ২৫টি ছিল ভারতীয় জাহাজ। যেগুলো কলকাতা বন্দর থেকে ফ্লাই এ্যাশ নিয়ে খুলনা হয়ে নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছেছে। বাকি বাংলাদেশের জাহাজগুলোও ফ্লাই এ্যাশ বহন করেছে। সেগুলো খুলনা থেকে ছেড়ে গিয়ে কলকাতা হয়ে খুলনা ও নারায়ণগঞ্জ পৌঁছেছে। ফেব্রুয়ারিতেও ২২৩টি জাহাজকে অনুমতি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
রেলপথে ট্রানজিট
দুই দেশের মধ্যে রেলপথে পণ্য পরিবহন চুক্তির আওতায় দীর্ঘ দিন ধরেই পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে। তবে এবার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেলপথে ট্রানজিট চায় ভারত। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে কনটেইনার পরিবহনে চুক্তির প্রস্তাব করেছে দেশটি। যার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডার স্ট্যান্ডিং বিটউইন কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) অ্যান্ড কনটেইনার করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (কনকর) টু প্রোমোট অ্যান্ড এক্সপান্ড কো-অপারেশন বিটউইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ ইন দ্য ফিল্ড অব কনটেইনার ট্রান্সপোর্টেশন ফর মিউচুয়াল বেনিফিট অব বোথ কান্ট্রিজ’।
সিসিবিএল বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। এটি ২০১৬ সালের ১৭ মে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের আওতায় নিবন্ধিত। আর কনকর ভারতের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি কোম্পানি। এটি দেশটির নভরত্ন কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৮৮ সালের মার্চে নিবন্ধিত হয়।
ভারতের দেয়া ওই প্রস্তবনায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে উভয় দেশের মধ্যে রেলপথে কনটেইনার পরিবহন চালু করা দরকার। এজন্য দুই দেশের কনটেইনার কোম্পানি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এছাড়া কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ঈশ্বরদীর ইয়ার্ডকে রেলভিত্তিক অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) হিসেবে উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কনটেইনার ট্রেন ও আইসিডি পরিচালনায় সিসিবিএলকে সহায়তা করবে কনকর।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলমের (সম্প্রতি এ পদে দায়িত্ব পেয়েছেন মোঃ শামছুজ্জামান) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রেল পথে দুই দেশে কনটেইনার পরিবহনে অবকাঠামোগত দুর্বলতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথমত বাধা হচ্ছে যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে কনটেইনার ট্রেন চলছে না। তারপরও পরীক্ষামূলক চালিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। তারা যমুনা সেতু ব্যবহারের সুপারিশ না দিলে সেতুর পশ্চিম জোনে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ করা হতে পারে। এছাড়া ঈশ্বরদীর ইয়ার্ডকে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) হিসেবে উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেলপথে ৮টি ইন্টারচেঞ্জ আছে। যেগুলো হলো বেনাপোল-পেট্রাপোল, দর্শনা-গেদে, রহনপুর-সিংগাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর, কুলাউড়া-মহিষাসন, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি, বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা ও মোগলহাট-গিতলদহ। এর মধ্যে বেনাপোল-পেট্রাপোল, দর্শনা-গেদে, রহনপুর-সিংগাবাদ ‍রুটে আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল করছে। বিরল-রাধিকাপুর ব্রড গেজে রূপান্তরের পর ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
বাকি চারটি রুটের মধ্যে কুলাউড়া-মহিষাসনের সংস্কার কাজও শুরু করা হয়েছে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা ও মোগলহাট-গিতলদহ আপাতত চালুর কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে আখাউড়া-আগরতলা নতুন ইন্টারচেঞ্জ চালুর লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ফেনী-বেলুনিয়া রুটেও নতুন ইন্টারচেঞ্জ চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান কাজী মো. রফিকুল আলম।
সড়কে সংযোগ
বাংলাদেশের ২৩টি স্থল বন্দরের মধ্যে চালু আছে ১২টি। এর মধ্যে ১১টিই ভারতের সঙ্গে। বাকি একটি মিয়ানমারের সঙ্গে। আগামীতে জামালপুরের বক্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের বাল্লায়, ফেনীর বেলুনিয়ায়, সিলেটের শেওলায় এবং খাগড়াছড়ির রামগড়ে আরও ৬টি বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানান স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপণ কুমার চক্রবর্তী। সাউথ এশিয়ান মনিটরকে তিনি বলেন, বর্তমানে সচল স্থল বন্দরগুলো ব্যবহার করে দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া চালু আছে। দুই দেশের যানবাহনই নিজ নিজ দেশের সীমান্ত পর্যন্ত যেতে পারছে। তবে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে অবাধ গাড়ি চলাচলের জন্য বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যালস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) বা মোটরযান চলাচল চুক্তি বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, ভুটান এখনও বিবিআইএন রেটিফাই না করায় পুরো উদ্যোগটি বাস্তবায়নে একটু অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত এ ব্যাপারে এখনও আশাবাদী।
এদিকে, সড়কপথের পরে রেলপথেও বিবিআইএন চালুর জন্য কাজ শুরু করে ভারত। ২০১৬ সালে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া প্রস্তাবও পাঠায় দেশটি। তবে নেপাল ও ভুটানে রেলপথ না থাকায় পরে রেল বিবিআইএনের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
বিবিআইএনের আওতায় চার দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচলে ৯টি রুট প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত রুট ছিল চারটি। এর প্রথমটি হলো ভারতের দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বেনাপোল হয়ে ঢাকা-আখাউড়া দিয়ে ভারতের আগরতলা। দ্বিতীয় রুটটি দিল্লি থেকে কলকাতা, পেট্রাপোল-বেনাপোল, ঢাকা হয়ে মৌলভীবাজারের শাহবাজপুর দিয়ে ভারতের মহিষাসন পর্যন্ত। তৃতীয় রুটটি ভারতের দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশের খুলনা দিয়ে মংলা বন্দর পর্যন্ত। আর চতুর্থ রুটটি ভারতের ইম্ফল থেকে আগরতলা হয়ে আখাউড়া দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত। এর বাইরে বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের জন্য ৩টি ও বাংলাদেশ-ভারত-ভুটানের জন্য ১টি রুট ছিল।
এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় দেশ দুটির মধ্যে ট্রানজিট শুরু হয় ২০১৬ সালের জুন মাসে। ওই সময় আনুষ্ঠানিকভাবে মাশুলের বিনিময়ে ভারতীয় জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এবার ওই চুক্তির আওতায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করতে চান বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে গত বছর বিষয়টি আলোচনায় আনেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) তৎকালীন সভাপতি আবুল কাসেম খান। তিনি বলেছিলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট যে হারে বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে পণ্য রপ্তানিতে সময় আরও বেশি লাগবে। দেশে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির হওয়ার আগ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।
তবে বিষয়টি এখনও আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান আবুল কাসেম খান।
সাউথ এশিয়ান মনিটরকে তিনি বলেন, একদিকে বাংলাদেশের স্থল বন্দরগুলো পুরো মাত্রায় ব্যবহার হচ্ছে না। আরেক দিকে চট্টগ্রাম বন্দর বাড়তি চাপ সামাল দিতে পারছে না। তাই হলদিয়া বন্দর ব্যবহারের একটি প্রস্তাবনা আমাদের ছিল। কিন্তু তা আর বেশি দূর এগোয়নি। তবে সমস্যাটা এখনও আছে।
হলদিয়া বন্দর পশ্চিমবঙ্গের হালদি ও হুগলি নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত। এটি পরিচালনা করে হলদিয়া বন্দর ট্রাস্ট। এ বন্দর চ্যানেলের গভীরতা প্রায় ৮ মিটার, যা চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে দেড় মিটার কম।
মৈত্রী-বন্ধন ও সৌহার্দ সার্ভিস প্রসঙ্গ
১৯৯৯ সালে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে শুরু হয় সরাসরি বাস সার্ভিস ‘সৌহার্দ্য’। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে এই বাস সার্ভিস উদ্ভোধন করেন। বাংলাদেশের বিআরটিসি ও ভারতের ডব্লিউ বিটিসির কর্তৃপক্ষ উভয় দেশের মধ্যে এই বাস সার্ভিস চালু করে। পরে ২০১৫ সালে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ঢাকা-শিলং-গৌহাটি-ঢাকা ও কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রুটের বাস সার্ভিস। ওই বছরের ৬ জুন বাংলাদেশে সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে এই দুই রুটের বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও। পরে ২০১৭ সালে চালু হয় ঢাকা-খুলনা-কলকাতা-ঢাকা রুটে বাস সার্ভিস।
এছাড়া ২০০৮ সালে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে শুরু হয় যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’। এর পরে ২০১৭ সালে এর সঙ্গে যুক্ত হয় খুলনা-কলকাতা রুটের ট্রেন সার্ভিস। যার নাম দেয়া হয় ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’। ট্রেনটি কলকাতা থেকে দমদম–বনগাঁ–পেট্রাপোল-বেনাপোল–ঝিকরগাছা–যশোর হয়ে খুলনা যাতায়াত করছে।
সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ পরীক্ষামূলক চালু হয়েছে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীবাহী জাহাজ সার্ভিস। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে প্রায়ই শোনা যাচ্ছে দেশ দুটির মধ্যে ১৯৬৫ সাল পূর্ব রেল লাইনগুলো চালুর কথা। আর ১৮ জুন দিল্লি ঘুরে এসে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব জানালেন শিগগিরই পানিপথে বাংলাদেশ-ত্রিপুরার বাণিজ্য যোগাযোগ। ফলে দেশ দুটির মধ্যে বাস্তব যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দৃশ্যতই দূর হচ্ছে সব বাধা।

No comments

Powered by Blogger.