আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভারতের ৩৭০ ধারা রদ, প্রতিক্রিয়ায় মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহ

ভারতে মোদি সরকার কর্তৃক ৩৭০ ধারা রদ শুধু এ উপমহাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বেই আলোচিত হচ্ছে। খবরটি গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হচ্ছে বিশ্ব গণমাধ্যমে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে কীভাবে সহিংসতা ও অস্থিরতা উস্কে দেয়া হচ্ছে সেটিই প্রাধান্য পেয়েছে এসব খবরে।
বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসি একে ভারত সরকারের সর্বকালের সবথেকে তাতপর্যপূর্ন পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এতে বলা হয়েছে, এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে বড় ধরণের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে বিবিসি কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থাকে উত্তেজনাকর হিসেবে প্রকাশ করেছে।
লন্ডনভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ৩৭০ ধারা বাতিল হচ্ছে কাশ্মীরের মর্যাদা ইস্যুতে ভারতের ইতিহাসের সবথেকে বড় আমূল পরিবর্তন। ওই প্রতিবেদনে কাশ্মীর ভেঙে আলাদা দুটি অঞ্চল গঠন করাকে মোদি সরকারের নাটকীয় সিদ্ধান্ত বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এটি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে স¤পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে বলেও জানায় দ্য গার্ডিয়ান।
এতে ভারত সরকার প্রবল প্রতিরোধের মুখে পরবে বলেও লিখেছে পত্রিকাটি।
এদিকে ভারতের ৩৭০ ধারা বাতিল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিএনএন জানিয়েছে, কাশ্মীরের পূর্ন নিয়ন্ত্রণ নিতে বিতর্কিত পরিবর্তন এনেছে মোদি সরকার। শিরোনামে লেখা হয়, এই পরিবর্তনের ফলে কাশ্মীর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পরেছে। এই প্রতিবেদনে একটি থিংক ট্যাংক সদস্যের মন্তব্য তুলে ধরা হয়। এতে তিনি বলেন, ৩৭০ ধারা বাতিল কাশ্মীরিদের জন্য বড় ধরনের মানসিক আঘাত।
আরেক মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের মতে এই পদক্ষেপ নতুন সংঘর্ষের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। তারা শিরোনামে জুড়ে দেয়, ভারতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কাশ্মীর। গণমাধ্যমটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই ঘোষণার পর জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে কেন্দ্রের স¤পর্ক স¤পূর্ন নষ্ট হয়ে যাবে।
পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলোতে ব্যপক প্রাধান্য পাচ্ছে কাশ্মীরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির খবর। প্রত্যাশীতভাবে করাচিভিত্তিক ডন ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে কাশ্মীরিরা আতঙ্কিত হয়ে পরেছে। তাদের ভয় এরফলে জনতাত্ত্বিকভাবে এই অঞ্চল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবে।
পরিণতি হবে ভয়াবহ -ওমর আবদুল্লাহ
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ওই রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তিনি সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে আগ্রাসন ও জনগণের আস্থার প্রতি পুরোপুরি বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, সরকার একতরফাভাবে এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এমন সিদ্ধান্ত অবৈধ। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার পার্লামেন্টে ৩৭০ ধারা বাতিলের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় জম্মু ও কাশ্মির থেকে আলাদা করা হয়েছে লাদাখ। বলা হয়েছে, কেন্দ্র শাসিত দুটি ইউনিয়ন হবে ওই অঞ্চল।
এর আগে জম্মু ও কাশ্মিরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহ সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় রাজনীতিককে গৃহবন্দি করে সরকার।

সেখান থেকে এক বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ওমর আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ভারত সরকারের একতরফা ও হতাশাজনক সিদ্ধান্তে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের আস্থার সঙ্গে পুরোপুরি বিশ্বাসঘাতকতা। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই রাজ্য ভারতের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হয়। কিন্তু সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারি ও ভয়াবহ। তারা রাজ্যের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়েছে। রোববার শ্রীনগরে সর্বদলীয় বৈঠকে এ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল।
অবৈধ ও অসাংবিধানিক -মেহবুবা মুফতি
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়াকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করেছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যকে ‘অশুভ’ বলে আখ্যায়িত করেন। মেহবুবা বলেন, সরকার চাইছে জম্মু ও কাশ্মিরের জনসংখ্যাতত্ত্বকে পাল্টে দিতে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার আগে রোববার রাতে সাবেক আরেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও তাকে গৃহবন্দি করে সরকার। এরপর সোমবার পার্লামেন্টে ৩৭০ ধারা বাতিলের ঘোষণা দেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এত তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মেহবুবা। তিনি এ দিনকে ভারতের গণতন্ত্রের সবচেয়ে কালো দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ১৯৪৭ সালের দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং ভারতের সঙ্গে অঙ্গীভূত থাকার যে সিদ্ধান্ত ছিল তাকে ভারত পিছনে ঠেলে দিয়েছে।
ভারত সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার যে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অবৈধ ও অসাংবিধানিক। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মিরে ভারত হবে দখলদার শক্তি।

No comments

Powered by Blogger.