প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় কার?

জাতীয় সংসদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যে স্থায়ী কমিটি আছে, তাদের কাজ হলো সরকারের জবাবদিহি আদায় করা। নির্বাহী বিভাগে অনিয়ম-দুর্নীতি হলে কিংবা কেউ দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করে থাকে এই কমিটি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তারা এখন নির্বাহী বিভাগের মুখপত্রের ভূমিকা নিয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহের হোসেন মঙ্গলবার বৈঠক করে বলে দিলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষায় যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তার দায় সরকারের নয়। কয়েকটি জেলায় চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তাঁর এই বক্তব্য ভুল বার্তা দেবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোতাহের হোসেন যুক্তি দেখিয়েছেন, এসব পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি হয় স্থানীয় পর্যায়ে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন কি প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের অংশ নয়? স্থানীয় পর্যায়ে প্রশ্নপত্র তৈরি হলেও তার সঙ্গে স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তারা থাকেন।
সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রশ্নফাঁসের দায়ও তাঁরা এড়াতে পারেন না। সংসদীয় কমিটির সভাপতির কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, সেই স্থানীয় প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে তিনি ও তাঁর কমিটি কী করেছে? এবারে কয়েকটি জেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো এই ধারা চলতে থাকলে সব পরীক্ষাই স্থগিত বা বাতিল করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, সচিব বা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের কেউ কথাটি বললে হয়তো আত্মপক্ষ সমর্থন হিসেবে চালিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু তিনি যে চেয়ারে বসে আছেন, সেখান থেকে প্রশ্নের জবাবই চাওয়ার কথা। উত্তর দেওয়ার জন্য মন্ত্রী বা প্রশাসন আছে। তিনি নিজেই যদি মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে নেন, তাহলে মন্ত্রী কিংবা ওই মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কী করবেন? প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন মহামারিতে রূপ নিতে যাচ্ছে, সেখানে এ ধরনের দায়িত্বহীন কথাবার্তা তাঁরাই বলতে পারেন, যাঁরা দেশ ও জনগণ সম্পর্কে কোনো দায়দায়িত্ব অনুভব করেন না। সরকারের মুখপত্র বা জনসংযোগ কর্মকর্তার ভূমিকায়ও আমরা সংসদীয় কমিটির কোনো সভাপতি বা সদস্যকে দেখতে চাই না। স্থানীয়, জাতীয় বা যেকোনো পর্যায়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস ও তা রোধ করতে না পারার দায়িত্ব সরকার ও প্রশাসনকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গা ছাড়া ভাব থাকার কারণে সব ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে এবং পরিস্থিতি দিন দিন শোচনীয় হচ্ছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.