পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই ডিএনসিসিতে মনোনয়ন

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে একথা বলেন। তিনি রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বড় ব্যবধানে পরাজয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে বলেন। এছাড়া আগামী মাস থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররাফ হোসেন, কাজী জাফরউল্লাহ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম,  ড. আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান, আবদুল মতিন খসরু, রমেশচন্দ্র সেন ও আবদুল মান্নান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, ডিএনসিসির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কথা উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, অনেক ব্যক্তির নামই আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে শিল্পী, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ ও সাবেক সেনা কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে বলে দলের নেতাদের জানান প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে এরপর মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডেকে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। উপস্থিত নেতাদের আগ্রহী প্রার্থীদের এবং তাদের প্রত্যেকের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে বলেন দলের সভাপতি।  বৈঠক সূত্র জানায়, রসিক নির্বাচনে কারা দলীয় প্রার্থীকে অসহযোগিতা করেছেন তার একটি প্রতিবেদন চেয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া জ্বালাও-পোড়াও করার পরেও বিএনপি প্রার্থী কিভাবে এত ভোট পেল, এমন মন্তব্য করে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। দলের এত বড় পরাজয়কে ‘খুব’ একটা বড় পরাজয় না হলেও ফলাফল অপ্রত্যাশিত ছিল বলে মন্তব্য করেন দলীয় প্রধান। তবে রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে সুষ্ঠু  নির্বাচন সম্ভব বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পেরেছি এটাই বড় কথা। আর বিএনপিও হয়তো এখানে সুষ্ঠু ভোট চেয়েছিল। তাই তারা সহিংসতার পথ বেছে নেয়নি। তবে নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতারা রসিক নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, প্রার্থী মনোনয়নও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের সঙ্গে প্রার্থীর সম্পর্কের বিষয়টি মনোনয়ন দেয়ার সময় বিবেচনায় রাখতে হবে।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, আগামী মাস থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ লক্ষ্যে দেশের ৮ বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আগামী মাস থেকে প্রত্যেক শুক্র ও শনিবার সাংগঠনিক সফর করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সাংগঠনিক কাজে তৎপর হতে বলেন। তিনি তৃণমূলে সরকারের পক্ষে প্রচারণা ও সাংগঠনিক নানা সমস্যা সমাধানে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের দায়িত্ব নিতে বলেন। পরে আগামী মাস থেকে জেলা সফর শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এ সময়ে প্রেসিডিয়ামের কোন সদস্য কোন বিভাগের জেলাগুলোর দায়িত্ব পালন করবেন তার একটি খসড়া তৈরি করা হয়। দু-এক দিনের মধ্যেই এ খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তৃণমূলে ব্যাপক প্রচারের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, তৃণমূলে যেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালানো হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জানান, প্রার্থীদের নিয়ে যে জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে সেগুলোর ফলাফল ও কার কেমন জনপ্রিয়তা আছে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ জানান শেখ হাসিনা। বৈঠকে সদ্যপ্রয়াত কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.