পর্যটকের পেছনে ২০০ ছিনতাইকারী

ভরা মৌসুমে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক, হিমছড়িসহ দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের জন্য বিপৎসংকুল হয়ে উঠেছে। ওত পেতে থাকছে ছিনতাইকারীরা। সুযোগ বুঝে কেড়ে নিচ্ছে পর্যটকদের মুঠোফোন, টাকা, ক্যামেরাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার শহরে অন্তত ২৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্যটকেরা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তবে এসব ঘটনায় মামলা হয়নি। ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে কক্সবাজার শহরের ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আবু তাহের নামের ফেনীর এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর কক্সবাজার শহরের কলাতলী, লারপাড়া ও রুমালিয়ারছড়ায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে তিনটি। এই তিন ঘটনায় মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক প্রভাস চন্দ্র ধর প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালে জেলা পুলিশের করা তালিকায় শহরে ছিনতাইকারীর সংখ্যা ছিল ১২৮। এখন এই সংখ্যা প্রায় ২০০। ১৯টি দলে ভাগ হয়ে তারা ছিনতাই ও লুটপাট চালায়। ছিনতাইকারীর সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি রোহিঙ্গা ঢলকে দায়ী করেন। প্রভাস চন্দ্র ধর বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। স্থানীয় ছিনতাইকারীরা তাদের ব্যবহার করে। পুলিশের তথ্য অনুয়ায়ী শহরের ২৩টি স্থানে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়তলী, জাম্বুর দোকান, কালুর দোকান, বৌদ্ধমন্দির এলাকা, গুলদীঘির পাড়, কলাতলী মোড়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, রুমালিয়ারছড়া, সাহিত্যিকা পল্লী, লালদীঘির পাড় ও সমিতিপাড়া ছিনতাইপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এসব এলাকা দিয়ে পর্যটকেরা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও বিপণিকেন্দ্রে আসা-যাওয়া করেন। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ছিনতাইকারীদের অনেকে দিনের বেলায় টমটম ও অটোরিকশা নিয়ে সমুদ্রসৈকত ও কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় অপেক্ষা করে। গাড়িতে পর্যটক তুলতে পারলে দলের অন্য সদস্যদের খবর দেওয়া হয়। তারপর পথে নিরিবিলি কোনো এলাকায় সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে। বিশেষ করে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আড়াই কিলোমিটার লম্বা বাইপাস সড়কে ছিনতাইকারীরা ওত পেতে থাকে। এই সড়কে বাতি না থাকায় সন্ধ্যার পরই এলাকাটি অন্ধকারে ডুবে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগায় ছিনতাইকারীরা। সপ্তাহখানেক আগে বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত হন শহরের খুরুশকুল এলাকার বাসিন্দা নয়ন পাল (২০)। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় বাস টার্মিনাল থেকে টমটমে চড়ে লালদীঘির পাড়ে আসার সময় যাত্রীবেশে থাকা দুজন অস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়। ঝামেলা এড়াতে তিনি থানায় মামলা করেননি। এ ছাড়া কয়েক দিন আগে শহরের হাশেমিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইকারীরা প্রবাসী মো. খালেককে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। এর আগে একই এলাকায় রবিউল নামের এক দোকান কর্মচারীকে মারধর করে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। তাঁরা কেউই মামলা করেননি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ছাড়াও সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতাদের ধরতে অভিযান চলছে। পর্যটক মৃত্যুর ঘটনায় গত বুধবার রাতে শহরের মোহাজেরপাড়া এলাকা থেকে নেজাম উদ্দিন নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কয়েক মাসে ২০ থেকে ২৫ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে তাদের অনেকে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী প্রথম আলোকে বলেন, সৈকতের লাবণী থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকে ট্যুরিস্ট পুলিশের দল। এ ছাড়া সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কের ইনানী পর্যন্ত ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল থাকে। কক্সবাজার ভ্রমণে আসা মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার স্কুলশিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর মেরিন ড্রাইভ সড়কে চলাফেরা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেখানে পুলিশ থাকে না। ডিসেম্বরের এই সময়টায় কক্সবাজারে এখন প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখের মতো পর্যটক সৈকতে অবস্থান করেন বলে জানান কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন শহরে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক থাকবেন। পর্যটকদের ঢল শুরু হওয়ায় ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বাইপাস সড়ক ও কলাতলী এলাকায় ছিনতাইকারীর তৎপরতা বন্ধে পুলিশ প্রশাসনকে আরও সজাগ থাকা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.